ভার্টিগো বা ঘূর্ণিরোগঃ
ভার্টিগো একটি হরিবল ডিজিজ কন্ডিশন যা স্বাভাবিক জীবনের উপর অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
চিকিৎসা না করলে মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর এই কষ্ট থেকে যেতেই পারে। যা স্বাভাবিক মুভমেন্ট বা ব্যালেন্সকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
অনেকেরই ধারণা এমন যে, উচ্চতায় ভয় থাকা মানেই ভার্টিগো এবং এটা মাথার রোগ। কিন্তু আসলে কানের সমস্যার জন্যে প্রায় ৯৩% লোক ভার্টিগো (ঘূর্ণিরোগ) রোগে ভুগে থাকেন।
সমাজের ৪০ বছর বা তার উর্ধে বয়সের ৪০% লোক জীবনের কোন না কোন সময় ভার্টিগো রোগে ভুগে থাকেন। ভার্টিগোতে পারিপার্শিক অবস্থা বা পরিস্থিতি সম্পর্কে কোন বোধ/জ্ঞান থাকে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভার্টিগোর কারণে ঝিম ঝিম, বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে এবং চোখ পিট পিট হয়ে থাকে।
ভার্টিগো দু’ধরনের যেমন- সেন্ট্রাল ভার্টিগো ও পেরিফেরাল ভার্টিগো।
সেন্টাল ভার্টিগো একটি নিউরোলজিক্যাল সমস্যা যাতে আমাদের ব্রেনস্টেম ও সেরেবেলাম জড়িত থাকে। সেন্ট্রাল ভার্টিগোর কারণের মধ্যে রয়েছে মাল্টিপল স্কে¬রোসিস, স্ট্রোক, ব্রেন টিউমার।
অধিকাংশ লোক যে ভার্টিগোতে ভোগে তা হলো পেরিফেরাল ভার্টিগো। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ভার্টিগো রোগীদের মধ্যে ৯৩% লোক পেরিফেরাল ভার্টিগোতে ভুগে থাকেন। পেরিফেরাল ভার্টিগো মূলত কানের সমস্যার জন্য হয়ে থাকে। কান আমাদের শরীরের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অংগ যা আমাদের অবস্থান যেমন- হাঁটা, চলা, দাঁড়ানো প্রত্যেক কর্মকান্ডে ব্যালেন্স নিয়ন্ত্রণ করে।
কানের অংশ তিনটি যেমন- বহিঃকর্ণ, মধ্যকর্ণ ও অন্তঃকর্ণ।
আমাদের অন্তঃকর্ণ বা ভেতরের অংশে চুলের মতো একটি উপাদান আছে এবং ক্রিস্টালের মতো উপাদান আছে। চুলের মতো অংশটি ক্রিস্টালগুলোকে ধরে রাখে। যখন আমরা নড়া-চড়া করি তখন এই ক্রিস্টাগুলোও নড়া-চড়া করে এবং তারা আমাদের অবস্থান সম্পর্কে ব্রেনকে সিগন্যাল দেয় ক্রেনিয়াল নার্ভ (ঠওওও) ভেস্টিবুলো-ককলিয়ার নার্ভের মাধ্যেমে। এই নার্ভ কানের গ্লিয়াল সোয়ান জাংশন থেকে ব্রেনস্টেম পর্যন্ত বিস্তৃত। এই নার্ভের মাধ্যেমে ব্রেন অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পায়। ব্রেন এভাবে আমাদের ব্যালেন্স নিয়ন্ত্রণ করে।
যখন ভার্টিগো হয় তখন এই সিস্টেম সঠিকভাবে কাজ করে না এবং ব্রেন অবস্থান সম্পর্কে এলোমেলো ধারণা পায়।
অনেক সময় দুর্ঘটনা, পড়ে যাওয়া বা মাথায় ইঞ্জুরির কারণে এই কানের ভেতরের ক্রিস্টালগুলো মধ্যকর্ণে চলে আসে এবং তখনই ভার্টিগো দেখা দেই।
আবার অনেক সময় উক্ত কারণগুলো ছাড়াও ভার্টিগো হতে পারে।
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে কানের ভিতরের ক্রিস্টালের মুভমেন্ট করিয়ে- এই রোগের নিরাময় করা যেতে পারে। যেমন- মুভমেন্টর মাধ্যমে ক্রিস্টালগুলোকে মধ্যকর্ণ থেকে আবার ভেতরের কর্ণে আগের জায়গায় নেয়া হয়। আর সে জন্যই রোগী দ্রুত আরাম বোধ করে।
আধুনিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীর প্রয়োজন স্বাস্থ্যসম্মত খাবার যেমন- প্রচুর ফল ও সবজি খাওয়া, ভিটামিন বি-৬ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যেমন- মুরগির বুকের মাংস, আলু, পালংশাক, বাদাম, কলা, সামুদ্রিক মাছ, সূর্যমুখীর বীজ খাওয়া।
এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার যেমন- হলুদ, আদা, বেরীজ, গ্রীন টি, টমেটো, আঙ্গুর, গাজর, স্ট্রবেরি এবং আপেল খাওয়া এবং প্রচুর পানি পান করতে হবে।
জীবনযাত্রাকালে কিছু পরিবর্তন আবশ্যক যেমন- ধূমপান, মদ্যপান থেকে বিরত থাকা, চিনিযুক্ত খাবার পরিহার করা। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে খুবই দ্রুত এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব যা প্রমাণিত।