ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা সম্ভবত এখন চরম এক অবস্থায় পৌঁছে গেছে। সব পক্ষ বলছে তারা যুদ্ধ চায় না। কিন্তু তাদের কার্যক্রম বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড চাপ সৃষ্টির কৌশল ছাড়িয়ে অনিবার্য যুদ্ধের দিকেই গড়াচ্ছে বলে মনে হয়।
আর যুদ্ধ হলে তা যে সর্বাত্মক রূপ নেবে সেটি স্পষ্ট হয় এ ব্যাপারে রাশিয়া ও চীন দুই দেশের সতর্কবাণী উচ্চারণের মধ্য দিয়ে। রাশিয়ার অন্যতম উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ স্পষ্ট করে বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকার নতুন করে আর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে রাশিয়া ও তার মিত্ররা পাল্টা ব্যবস্থা নেবে।
একদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে উল্লেখ করেন। এরপর রিয়াবকভ মস্কোর পক্ষ থেকে এ প্রতিক্রিয়া জানান। তবে তিনি স্পষ্ট করেননি যে, তারা কী ধরনের ব্যবস্থা নেবেন। অবশ্য ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভও বলেছেন, ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনি পদক্ষেপ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ইরানের সাথে বার বার আলোচনার কথা বলছেন, তখনই তিনি আবার তেহরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছেন। আর সর্বশেষ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিকেও নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার ঘোষণা দেয়ার পর ইরান এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক আলোচনার সমাপ্তি ঘটেছে বলে উল্লেখ করেছে।
অন্য দিকে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে অভিযানের ব্যাপারে মিত্র যোগাড় শুরু করেছে। এসব বিষয় পর্যবেক্ষণে মনে হয়, ট্রাম্প ইরানের সাথে যুদ্ধ চান না বলে ঘোষণা দিলেও কার্যত যুদ্ধের দিকেই ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক এগিয়ে যাচ্ছেন।
প্রশ্ন হলো, আসলেই এই যুদ্ধ থেকে কি যুক্তরাষ্ট্র বা ইরান কোনো পক্ষ লাভবান হবে? এর উত্তর নিশ্চিত করেই বলা যায় না। কিন্তু তাহলে কে এই যুদ্ধ থেকে লাভবান হবেন, যার কারণে সবাই যুদ্ধের ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারণের পরও যুদ্ধের ডঙ্কা বেজেই চলেছে। এর আগে ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়ায় সর্বব্যাপী যুদ্ধ চলেছে।
এখনো বেশ ক’টি দেশে যুদ্ধ চলছে। তাহলে কে লাভবান হওয়ার জন্য এই যুদ্ধে ইন্ধন দিয়ে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ক্লাউড এল খালের অভিমত হলো, লাভবান পক্ষটি হলো ইসরাইল। আরো সুনির্দিষ্টভাবে বললে জবাব হবে ইসরাইলের বর্তমান নেতানিয়াহু সরকার। যখন যুক্তরাষ্ট্র ইরান চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে, তখন বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, এটি একটি দুর্দান্ত সিদ্ধান্ত।
আগের যুদ্ধের ঘটনাগুলো অবলোকন করলে দেখা যাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি বা পরোক্ষভাবে সেসব যুদ্ধ থেকে লাভবান হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র ইরাক যুদ্ধ থেকে মোটেই লাভবান হয়নি। তারা ইউরোপীয়দের নেতৃত্বাধীন লিবিয়ার পরোক্ষ যুদ্ধ থেকে কিছু লাভ করতে পারেনি। তারা সিরিয়ার প্রক্সি যুদ্ধ থেকে তেমন কোনো উপকার পায়নি।
গভীর পর্যবেক্ষণে শুধু এটাই দেখা যাবে যুক্তরাষ্ট্র শুধুমাত্র ইসরাইলকে লাভবান করে দিয়েছে এসব যুদ্ধের মাধ্যমে। কারণ যুদ্ধ সেসব দেশের ওপরই চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল যেসব দেশ ইসরাইলের বিরোধিতা করেছিল। ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন যুদ্ধবিধ্বস্ত সব দেশকে সেই বন্ধনিতে ফেলা যাবে। বলা হয়, এসব দেশে একনায়কতন্ত্র ছিল।
কিন্তু সেই অঞ্চলে রাজা-রাজড়া বা একনায়ক শাসিত আরো দেশ ছিল যেগুলো বহালতবিয়তে এখনো রয়েছে। কারণ এই অঞ্চলে ইসরাইলকে ‘প্রতিরোধ’ তারা সেভাবে করেনি। এ জন্য কেউ তাদের স্পর্শ করছে না। আসলে, তারা এক ধরনের সুরক্ষিত। সেই সুরক্ষা পাওয়ার লাইনে অনেক দেশই এখন ভিড় করছে।
সৌদি আরবের কিছু লোক সম্ভবত মনে করে যে, তারা এ ধরনের যুদ্ধ থেকে উপকৃত হতে পারে। কিন্তু এ ধারণাটিও ভুলের ওপরই প্রতিষ্ঠিত। কারণ যদি ইরান যুদ্ধ সঙ্ঘটিত হয় তবে প্রত্যেককেই সে যুদ্ধ টেনে নিয়ে যাবে, প্রত্যেকেই কেবল হারাবে, অর্থনৈতিক ও অবকাঠামো দু’দিক থেকেই।
আমেরিকার প্রশাসনের কিছু হক্কিশ রাজনীতিবিদ ছাড়া কেউ এ যুদ্ধ থেকে শেষ পর্যন্ত উপকৃত হবে না। জন বোল্টন ইরানকে কয়েক বছর ধরে আক্রমণ করার স্বপ্ন দেখছেন এবং বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর মতো কিছু ইসরাইলি রাজনীতিবিদও সেই স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু, এই যুদ্ধে নেতানিয়াহু ছাড়া কেউ উপকৃত হবেন না, এটি গোটা অঞ্চলটিকে ধ্বংস করবে।
ইসরাইলও শেষ পর্যন্ত ইরান যুদ্ধ থেকে কতটা লাভবান হবে তা নিয়ে খোদ তেলআবিবেই বিতর্ক কিছুটা রয়ে গেছে। যদিও এখন যা হচ্ছে তার মধ্যে ’৮০-এর দশকে নেয়া ইসরাইলের কৌশলগত ইনোন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখা যায়। ইসরাইলের উদারপন্থীরা নেতানিয়াহুর নীতির বেশ সমালোচনাও করছে।
হার্টজ পত্রিকার এক লেখায় বলা হয়েছে, ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে যাওয়ার জন্য ক্রমবর্ধমান প্রচারণা চালানোর ব্যাপারে উন্মুক্তভাবে কথা বলার ক্ষেত্রে একমাত্র বৈশ্বিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি হলেন বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। তার বক্তব্য ছিল সাধারণ ইসরাইলি নেতাদের ব্যতিক্রম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করার ঘোষণা দেয়ার পর দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। ইসরাইলের সরকারি কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে অনেকখানি নীরব থেকেছেন।
প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের ব্রিফকালে এমনও বলেছেন, ‘ভাগ্যক্রমে, আমরা এর সাথে জড়িত না।’
ইরান উত্তেজনার সবকিছুর আয়োজন করার পেছনে ইসরাইলের ভূমিকা রয়েছে। এ ধরনের ভূমিকা আগেও ছিল। কিন্তু এবার নেতানিয়াহু একটু বেশি প্রকাশ্যে চলে এসেছেন। ইসরাইলের গতানুগতিক নীতি হওয়ার কথা মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান সামরিক অভিযান থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখে গ্যালারিতে বসে কেবল প্রিয় দলকে উৎসাহিত করা একজন অনুরাগীর মতো।
১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধ থেকে ইসহাক সামির দূরত্ব বজায় রাখার সেই নীতি নিয়েছিলেন। আর এরিয়েল শ্যারনও ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের সময় একই মনোভাবের পরিচয় রেখেছিলেন। সামিরের কাজটি আরো কঠিন ছিল এ কারণে যে, ইসরাইল সরাসরি সাদ্দাম হোসেনের স্কাড মিসাইল দ্বারা তখন আক্রান্ত হয়েছিল।
কিন্তু তখন কেউ সাদ্দামের ১৯৯০ সালের কুয়েতের আক্রমণের জন্য ইসরাইলকে দোষারোপ করতে পারেনি।
আর ২০০৩ সালে ইসরাইল-ইরাক যুদ্ধের সময় সরাসরি হামলার শিকার না হলেও তেলআবিবের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের রক্ষা করার জন্য জর্জ ডব্লিউ বুশ ইরাক আক্রমণে এগিয়ে যান। সেই দুর্ভাগ্যজনক যুদ্ধের সময় নেতৃত্বের দিক থেকে নেতানিয়াহু মুখ্য ইসরাইলি নেতাদের একজন ছিলেন, যারা নীরবতা ভাঙতে পছন্দ করেছিলেন।
২০০২ সালে প্রতিনিধি সভার সরকারি সংস্কার কমিটির সামনে প্রকাশ্যে সাক্ষ্য দিয়ে নেতানিয়াহু আমেরিকার আইন প্রণেতাদের বলেছিলেন, সাদ্দামের হয়তো পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে অথবা পরমাণু অস্ত্র অর্জনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন তিনি। সাদ্দাম ওয়াশিং মেশিনের চেয়ে ছোট একটি গোপন কেন্দ্রে সিন্টিফিউজ লুকিয়ে রেখেছিল বলে নেতানিয়াহু জানান।
নেতানিয়াহু বলেছিলেন, সাদ্দামকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করা হলে এর মাধ্যমে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের জন্য বিস্ময়কর কাজ করা হবে।
সমালোচকেরা সরকারি কোনো দায়িত্বে না থাকলেও নেতানিয়াহুর এই সাক্ষ্য বুশকে যুদ্ধে ঠেলে দেয়ার পেছনে ইসরাইলের জড়িত থাকার প্রমাণ বলে উল্লেখ করেছিল। নেতানিয়াহুর সাক্ষ্য সাম্প্রতিক সময়ে ইরান ইস্যুতে আবার পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। নেতানিয়াহুর অতিরঞ্জিত করার প্রবণতার কথা জানা থাকা সত্ত্বেও তেহরানের ইসরাইল হুমকির চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন সামরিক বাহিনী শেষপর্যন্ত সাড়া দিচ্ছে।
উপসাগরীয় অঞ্চলে আবার মার্কিন সেনা সমাবেশ ঘটানো হচ্ছে।
ইরানের সাথে যুদ্ধের পরিণতি যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রাচ্যে খুব ব্যয়বহুল হবে। আজকের ইরান আর সাদ্দাম হোসেন ক্ষমতায় থাকাকালের ইরাক এক নয়। এখনকার দৃশ্যপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইরাক আক্রমণের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সামনে কোনো প্রতিপক্ষ শক্তি ছিল না। এখন রাশিয়া চীন সম্মিলিতভাবে চ্যালেঞ্জ করছে যুক্তরাষ্ট্রকে।
এই দুই দেশ একসাথে ইরান আক্রমণের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে রয়েছে ইরানের প্রক্সি শক্তি। ইয়েমেনের হাউছিরা সৌদি আরবের বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। হিজবুল্লাহ ইসরাইলের সীমান্ত ঘেঁষে বিরাজ করা এক বিরাট অরাষ্ট্রিক শক্তি, যারা দেশটির সরকারের অংশীদারও। সিরিয়ায় রয়েছে ইরানের সামরিক উপস্থিতি।
ইরান আক্রমণের অর্থ দাঁড়াবে গোটা মধ্যপ্রাচ্য জ্বলে ওঠা।
এই যুদ্ধ শুধু ইরানকেই স্পর্শ করবে না, উপসাগরীয় দেশসমূহ, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন এবং এর বাইরেও যুদ্ধ বিস্তার লাভ করতে পারে; এটা লেবানন-ইসরাইলি সঙ্ঘাতকে প্রজ্বলিত করতে পারে। সিরিয়া থেকে ইসরাইলের প্রতি আক্রমণ হতে পারে। এর প্রভাব ইরাকেও পড়বে। সুতরাং, ইরান আক্রমণের মধ্য দিয়ে একটি বড় আঞ্চলিক যুদ্ধ সম্পর্কে ভাবতে হবে আমেরিকাকে।
এটি অস্বীকারের উপায় নেই যে, এখন ইরান মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ও আঞ্চলিক শক্তি। উপসাগরীয় অঞ্চলের সব মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের নাগালের মধ্যে রয়েছে, তাই এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল যুদ্ধ হবে। যদি এই যুদ্ধ ঘটতে শুরু করে তবে তা ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনকেও অনিশ্চিত করতে পারে।
২০১১ থেকে একটি টুইটে ট্রাম্প বলেছিলেন যে, নির্বাচিত হওয়ার জন্য বারাক ওবামা ইরানের সাথে যুদ্ধ শুরু করবেন। তিনি মূলত তখন বলছিলেন যে ওবামার পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার জন্য ইরানের সাথে তার যুদ্ধের প্রয়োজন। এখনো সেই ভাবনা থেকে ট্রাম্প ইরান আক্রমণের দিকে এগোতে পারেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্ভবত সেটিই করতে যাচ্ছেন। যদিও ভোটারদের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি ছিল কোনো নতুন যুদ্ধে ট্রাম্প জড়িত হবেন না। সব সামরিক বিরোধের মধ্য থেকে প্রত্যাহার করে তিনি আমেরিকান অর্থনীতির ওপর মনোযোগ নিবদ্ধ করবেন। আমেরিকান অর্থনীতি যাতে ভালো হয় সেদিকে তিনি নজর দেবেন। এখন যদি তিনি পূর্বসূরিদের মতো একই কাজ করেন, যুদ্ধে যান, কোটি কোটি ডলার খরচ করেন এবং মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে দুর্বল করেন, তাহলে এটি তার পক্ষে ভোটপ্রাপ্তিকেও কঠিন করে তুলতে পারে।
তিনি নির্বাচনী প্রচারণার সময় শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবোধ জাগিয়ে তুলেছিলেন কিন্তু একই সাথে বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের জন্য মোতায়েন থাকা মার্কিন সেনা পাহারা সঙ্কুচিত করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন।
আমেরিকান অর্থনীতি এখন বেশ ভালো অবয়বে রয়েছে। এর আগে বেশ দীর্ঘ সময় ধরে অর্থনীতির অবস্থা এতটা ভালো ছিল না। তবে ট্রাম্প যদি তার পূর্বসূরিদের মতো একই কাজ করেন, যুদ্ধে যান এবং কোটি কোটি ডলার ব্যয় করেন তাতে অর্থনীতি আবার দুর্বল হবে।
বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসনের নির্বাচনে আবার ফিরে আসার জন্য এ ধরনের সামরিক অভিযান দরকার কিনা সে প্রশ্নের জবাবে অনেকের বক্তব্য হলো, ট্রাম্পের যুদ্ধের প্রয়োজন নেই। তার আগে ওবামা, ক্লিনটন, বুশ একই দায়িত্বে এসেছিলেন, কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে তারা প্রায় একই নীতি অনুসরণ করছিলেন। যদিও তারা রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলের ছিলেন।
ট্রাম্প রাজনীতির বলয়ে ছিলেন একজন বহিরাগত। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সব দ্বন্দ্ব থেকে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া থেকে আমেরিকান বাহিনী প্রত্যাহার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আর এর ওপর ভিত্তি করেই তিনি নির্বাচিত হন।
ফলে তিনি যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বিরোধিতাকারী কোনো দেশে বা অন্য কোনো রাষ্ট্রে বোমা হামলার পুরনো আমেরিকান নীতিতে ফিরে যান, তবে তা তার পক্ষে ভালো হবে না। এমনকি এতে তিনি পরের নির্বাচনে হেরেও যেতে পারেন।
সুতরাং, পুনর্নির্বাচনের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের নতুন যুদ্ধের প্রয়োজন তার নেই। কিন্তু নেতানিয়াহুরা জেতার স্বপ্ন দেখিয়ে নিজেদের গোপন স্বার্থ হাসিলের জন্য যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছে ট্রাম্পকে। ট্রাম্প সেই ফাঁদে পা দিলে এই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে সব দিকে। এমনকি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণও হতে পারে এটি।