###উত্তর-পূর্ব সিরিয়া থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার সুফল পাবে কে?
উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় কুর্দি মিলিশিয়া এবং তুরস্কের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে তীব্র যুদ্ধ চলছে। ঐ অঞ্চলটিতে মোতায়েন থাকা মার্কিন সৈন্যদের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক আদেশে প্রত্যাহার করে নেবার পরই গত বুধবার থেকে সেখানকার কুর্দি মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে তুর্কি বাহিনী এবং সেই অভিযান অব্যাহত আছে। রাস আল-আইন শহরটি দখলের দাবি করেছে তুরস্ক।
যদিও কুর্দিরা প্রত্যাখ্যান করছে। শনিবার পর্যন্ত ১২০ জনেরও বেশি যোদ্ধা নিহত হয়েছে। বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে ২০ জন এবং এক লাখ লোক তাদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়েছে। এসডিএফকে নির্মূল করে তুরস্ক কয়েক লাখ সিরীয় শরণার্থীর জন্য একটি নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তবে বিশ্লেষকদের হিসাব ভিন্ন।
তারা মনে করছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে সুফল যাবে রাশিয়া, ইরান আর তুরস্কের ঘরে। এরই মধ্যে জাতিসংঘে তুরস্কের পক্ষ নিয়েছে পুতিনের রাশিয়া। ফলে আইএস আবার সদর্পে ফিরে আসতে পারে।
#সুফল পাচ্ছে কে?:
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্র সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর ইরান, রাশিয়া এবং তুরস্ক পদক্ষেপ নিতে চাইছে, তবে শেষ পর্যন্ত এর সুফল কার ঘরে উঠবে তা নিয়ে চলছে আলোচনা। সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের এক হাজারের মতো সৈন্য রয়েছে। এর মধ্যে তুরস্কের সীমান্ত এলাকা থেকে মাত্র দুই ডজন সেনা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মার্কিন সেনা প্রত্যাহার হওয়ায় সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের (এসডিএফ) যোদ্ধারা আঙ্কারার সাঁড়াশি আক্রমণের শিকার হবেন বলে ধারণা। রাশিয়া, ইরান, সিরিয়া সরকার ও আইএস এদের সবাই অঞ্চলটিতে সুফল লাভের চেষ্টা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কুর্দি যোদ্ধারা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারের সঙ্গে জোট বাধতে চাইলেও সেই আলোচনা দুর্বল হয়ে গেছে।
গত মঙ্গলবার এসডিএফের কমান্ডার-ইন-চিফ মাজলুম আবদী অংশীদারিত্বের প্রস্তাব দেন। সিরিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আল মাকদাদ কুর্দিদের সংলাপের প্রস্তাব দিয়ে জাহান্নামে না যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
ইসলামি রাষ্ট্রবিরোধী জোটের সাবেক মার্কিন দূত ব্রেট ম্যাকগুর্ক সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে রাশিয়া, ইরান এবং আইএসের জন্য উপহার হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আর এসডিএফ জোটের মুখপাত্র মুসলিম বলছেন, তুরস্ক এই অঞ্চলে জিহাদিদের আরো কাছাকাছি এনে বিশেষ এক ধরনের অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করবে।
কারণ তুরস্ক তাদের সঙ্গে বাণিজ্য করছিল এবং তাদের কাছ থেকে তেলও পাচ্ছিল। সম্ভবত তুরস্ক নতুন খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে।
##সিরিয়ায় আইএস ফিরতে পারে?
উত্তর:-পূর্ব সিরিয়া এক সময় ছিল আইএসের শক্ত ঘাঁটি। কিন্তু তাদের উত্থানকে ঠেকিয়ে রেখেছিল এসডিএফ। তাদের সমর্থন দিয়েছিল মার্কিন বিশেষ বাহিনী। উত্তরে তুরস্কের সঙ্গে যখন যুদ্ধের দামামা বাজছে তখন এসডিএফকে তার নিয়ন্ত্রণাধীন ক্যাম্পগুলোতে প্রায় ৭০ হাজার আইএস যোদ্ধা এবং বন্দিদের সঙ্গেও লড়াই করতে হবে। সালিহ মুসলিমও মনে করেন তুরস্ক আটককৃতদের দায়িত্ব নেবে।
কারণ দেশটি আইএস সদস্যদের সমর্থন ও অস্ত্র দিয়ে সিরিয়ায় পাঠায়। তারা তাদের পুনর্গঠন করতে এবং ইউরোপের বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেল করতে ব্যবহার করবে।
অনেকের আশঙ্কা, তুরস্ক যেভাবে অভিযান চালিয়ে কুর্দি মিলিশিয়াদের তাড়িয়ে দিচ্ছে তাতে হয়তো সিরিয়ায় আইএসের নতুন করে উত্থান ঘটতে পারে। বিবিসির নিরাপত্তা বিশ্লেষক ফ্র্যাংক গার্ডনার লিখেছেন, হ্যাঁ, এটা খুবই সম্ভব। অন্তত সীমিত অর্থে হলেও আইএস বা আল-কায়েদার মতো সংগঠনের পুনরুত্থান হতেই পারে।
# এটা মনে করার কারণ হলো:
এসব সংগঠন বিকশিত হয় বিশৃঙ্খলা এবং গোলমালের মধ্যে। উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় তুরস্কের অভিযান একটি অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ এলাকায়, ঠিক এরকমই একটা পরিস্থিতির ঝুঁকি তৈরি করেছে। তবে এরকম ঝুঁকি বাস্তবে পরিণত হবে কি না তা নির্ভর করে তিনটি ব্যাপারের ওপর।
এক. সিরিয়ায় তুরস্কের অভিযান কত ব্যাপক হয়,
দুই. অভিযান কত দিন ধরে চলে এবং
তিন. এর তীব্রতা কতটা হয়।
##কুর্দি কারা:
মেসোপটেমিয়ান সমতল ভূমি ও পাহাড়ি অঞ্চলের একটি নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী কুর্দিরা। বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্ক, উত্তর-পূর্ব সিরিয়া, উত্তর ইরাক, উত্তর-পশ্চিম ইরান এবং দক্ষিণ-পশ্চিম আর্মেনিয়া অঞ্চলে তারা ছড়িয়ে আছে। আড়াই থেকে সাড়ে তিন কোটি কুর্দি এসব পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করে। মধ্যপ্রাচ্যের চতুর্থ বৃহত্তম নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী তারা। তুরস্কের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ তারা। কিন্তু এই কুর্দিরা কখনো স্থায়ী একটি রাষ্ট্র পায়নি।