অটোবায়োগ্রাফি অব ম্যালকোলাম এক্স
ম্যালকোলাম এক্স ছিলেন একজন মানবাধিকার কর্মী এবং চল্লিশের দশকের আমেরিকার নাগরিক অধিকার আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা। ইসলাম গ্রহন করার পরে তিনি মালিক এল সাহাবাজ নাম গ্রহন করেন তবে ম্যালকোলাম এক্স নামেই তিনি বিখ্যাত। গভীর দর্শন, স্পষ্ট বাদিতা, আপোষহীন মনোভাব এবং অসম্ভব বাগ্মি বক্তব্যের জন্য এখনো ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার মাঝে ম্যালকোলাম এক্স এর তুমুল জনপ্রিয়তা। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, তার্কিশ প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, বক্সার মোহাম্মদ আলীসহ অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি ম্যালকোলাম এক্স দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত।
উনার নামটাও বেশ অর্থপূর্ণ। পশ্চিমের দেশগুলোতে নামের দ্বিতীয় অংশ হল পারিবারিক পদবী বা বংশের নাম। যেমন আমেরিকার প্রেসিডেন্টের নাম ডোনাল্ড ট্রাম্প, উনার পিতার নাম ফ্রেড ট্রাম্প, উনার মেয়ের নাম ইভানকা ট্রাম্প, ট্রিফনি ট্রাম্প। ট্রাম্প হল পারিবারিক পদবী। ম্যালকোলামের নামের দ্বিতীয় অংশ "এক্স"। এটা দ্বারা বোঝানো হচ্ছে তিনি তার পরিবারের পদবী কি জানেন না, তিনি তাদের বংশধর যাদেরকে আফ্রিকা থেকে ধরে এনে দাস বানানো হয়েছিলো। তখন আমেরিকায় কালোদের দাসদের বংশধর বলে গালি দেওয়া হতো, তাই তিনি এটাকে নামের অংশই বানিয়ে ফেলেন। বর্ণবাদী শেতাঙ্গ সমাজের প্রতি এটা ছিল একটা চপোটাঘাত।
ম্যালকোলাম এক্সকে নিয়ে এখন পর্যন্ত বহু বই লেখা হয়েছে, ডকুমেন্টারি, মুভি করা হয়েছে একাধিক। অ্যামাজনে ম্যালকোলাম এক্স এর ছবি এবং বানী সম্বলিত টি-শার্ট সবচেয়ে বেশি বিক্রিত পণ্যের তালিকায়। নাব্রাস্কার ওহামাতে বক্তব্যরত অবস্থায় খুব কাছে থেকে গুলি করে ম্যালকোলাম এক্সকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। তখন উনার বয়স চল্লিশ বছর। ম্যালকোলাম এক্সের মৃত দেহে ২১ টা গুলি পাওয়া যায়। বুক, হাত, কাধ, গলা, পায়ের হাড় গুলির আঘাতে চূর্ন বিচূর্ন হয়ে যায়। এ ছাড়াও শট গান বিস্ফোরণের ১০ টি আঘাত ছিল ম্যালকোলাম এক্সের শরীরে। হত্যার ধরন দেখে বোঝা যায় করা যায় শুধুমাত্র হত্যাই উদ্দেশ্য ছিল না। অনুমান করা যায় শেতাঙ্গদের কি পরিমান জিংঘাসা ছিল তার প্রতি এবং বর্ণবাদী শেতাঙ্গ সমাজকে তিনি কেমন ধাক্কা দিয়েছিলেন।
ম্যালকোলাম এক্সকে আলেক্স হ্যালি এই বই লেখায় সহায়তা করেন। বই লেখা অবস্থায় ম্যালকোলাম এক্স হ্যালিকে বলেছিলেন, আমি বেঁচে থাকা অবস্থায় যদি এই বইটা প্রকাশিত হয় সেটা হবে একটা বড় বিস্ময়। ম্যালকোলাম এক্সকে হত্যার কয়েক মাস পরে হ্যালি বইটি প্রকাশ করেন। টাইম ম্যাগাজিনের মতে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী দশটি আত্নজীবনীর মধ্যে এটি একটি। আমেরিকায় কালোদের জীবন কতটা দুর্বিষহ ছিল, তারা কেমন নগ্ন বর্ণবাদের স্বীকার ছিল এসবের জীবন্ত সাক্ষী এই বই। ম্যালকোলাম এক্সের ভাষার উপর অসম্ভব দখল ছিল। সাহিত্যের বিবেচনায়, বইটির ভাষার মান খুবই উচ্চমানের।
বাংলাদেশে এই বইটা পাওয়া যায় না। অন্তজালে খুঁজলে পিডিএফ পাবেন।