Question

শর্মিষ্ঠা-মাইকেল মধুসূদন দত্ত-কাহিনী সংক্ষেপ ও চরিত্র পরিচয়: জানতে চাই

Answer 1

শর্মিষ্ঠা-মাইকেল মধুসূদন দত্ত-কাহিনী সংক্ষেপ ও চরিত্র পরিচয়: 

--------------------------------------------------------

আমাদের বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা সমূহের অনেকগুলোর প্রশ্নই পূর্বানুমান করা সম্ভব হলেও বিসিএস পরীক্ষা এবং অন্যান্য বহুনির্বাচনী পরীক্ষায় প্রায়শই আমরা এমন কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হই যার উত্তর করতে দরকার বিষয় ভিত্তিক সামগ্রিক জ্ঞান। সকল বিষয়ে সার্বিক তথ্য আহরণ করা সম্ভব না হলেও আমাদের প্রয়াসের ঘাটতি থাকা অনুচিত। আমাদের প্রয়াস মধুকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রথম বাংলা নাটক তথা বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক বাংলা নাটক শর্মিষ্ঠা সম্পর্কে সংক্ষেপে যতটুকু সম্ভব জানব।

সাধারণ তথ্য:

-----------

# এটি রচিত হয় ১৮৫৯ সালে।

# এটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক নাটক।

# নাটকটি মহাভারতের কাহিনীকে উপজীব্য করে পাশ্চাত্য রীতিতে রচিত হয়।

# নাটকটির কাহিনী মহাভারতের আদিপর্বে বর্ণিত রাজা যযাতি, শর্মিষ্ঠা ও দেবযানির ত্রিকোন প্রেমের কাহিনী কেন্দ্রিক।

# নাটকটি রচনার পর সাফল্যের সাথে পাইকপারা বেলগাছিয়া নাট্যমঞ্চে মঞ্চায়িত হয়।

# মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর এই নাটকটি রচনা মহাকবি কালিদাসের প্রতি উৎসর্গ করেন।

# ১৮৫৯ সালে লেখক নিজেই ইংরেজিতে অনুবদি করেন।

কাহিনী সংক্ষেপ: 

---------------

অসুর রাজের একমাত্র কন্যা শর্মিষ্ঠা এবং দৈত্যগুরু মহর্ষি শুক্রাচার্যের একমাত্র কন্যা দেবযানি পরস্পরের বাল্য সখি। ঘটনাচক্রে তাদের মধ্যে বিবাদ হলে বাদানুবাদের একপর্যায়ে শর্মিষ্ঠা দেবযানিকে একটি কুপে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। একমাত্র কন্যার এই পরিনতির বিষয়ে জ্ঞাত হয়ে শুক্রাচার্য ক্রোধান্ধ হয়ে গেলে অসুররাজ্যকে রক্ষা করতে এবং দৈত্যগুরুর ক্রোধাগ্নিকে প্রশমিত করতে মহর্ষি নির্ধারিত শাস্তি মেনে নিয়ে শর্মিষ্ঠাকে সারাজীবনের জন্য গুরুকন্যা দেবযানির দাসত্ব বরণ করতে হয়।

অপরদিকে যখন কুপে নিক্ষিপ্ত দেবযানি বাচার জন্য আকুতি করছিল তখন সেখান দিয়ে অতিক্রম করছিলেন চন্দ্রবংশীয় রাজা যযাতি। দেবযানির আর্তনাদে রাজা দেবযানিকে সেই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করেন। ঘটনাস্থলেই উভয়ে উভয়ের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। দেবযানির পরিচয় জেনে রাজা অনতিবিলম্বে সেই স্থান পরিত্যাগ করেন।

দেবযানির পিতা শুক্রাচার্য সাধনালব্ধ জ্ঞানের দ্বারা আগে থেকেই কন্যার ক্ষত্রিয়কূলে বিবাহের বিষয়ে পূর্বাভাস পেয়েছিলেন বিধায় স্বীয় কন্যা দেবযানির সখী পূর্ণিকার মাধ্যমে রাজার প্রতি দেবযানির আসক্তির বিষয়ে অবগত হয়ে স্বীয় শিষ্য কপিলের মাধ্যমে রাজা যযাতির নিকট কন্যা দেবযানির বিবাহের প্রস্তাব প্রেরণ করেন। রাজা এবং দেবযানি উভয়র সম্মতিতেই তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং সুখে দিনাতিপাত করতে থাকে। স্বল্পকালের ব্যবধানেই দেবযানির ঘর আলো করে জন্ম লাভ করে এক পুত্র সন্তান।

দেবযানির সাথে দৈত্যকূল হতে শর্মিষ্ঠা দেবযানির দাসি হিসেবে রাজা যযাতির রাজধানী প্রতিষ্ঠানপুরীতে আসে। ঘটনাচক্রে রাজা যযাতির সাথে দাসীরূপী শর্মিষ্ঠার সাথে রাজা যযাতির সাক্ষাৎ হয় এবং রাজা ও শর্মিষ্ঠা পরস্পরের প্রতি আকর্ষিত হন। আলাপচারিতায় রাজা শর্মিষ্ঠার প্রকৃত পরিচয় জানতে পারেন। রাজা এবং যযাতি গন্ধর্বমতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু বিষয়টি দেবযানির নিকট গোপন রাখা হয়। 

সময়ের পরিক্রমায় শর্মিষ্ঠার গর্ভে ৩ জন পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। একদিন রাজা রাজ মহিষী দেবযানির সাথে বাগানে পরিক্রমণ কালে শর্মিষ্ঠার সন্তানদের শিশুসুলভ সরলতার কারণে রাজা ও শর্মিষ্ঠা গোপন প্রণয় সম্পর্কে অবগত হয়ে ক্রোধান্ধ হয়ে রাজধানী এবং রাজাকে পরিত্যাগ করে সকলের অজ্ঞাতসারে স্বীয় অনুচরী পূর্ণিকার সাথে দৈত্যরাজ্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।

অপরদিকে, বিবাহোত্তর সময়ে বহুকাল কন্যার সাক্ষাৎ না পেয়ে কন্যাবাৎসল পিতা দেবগুরু শুক্রাচার্য প্রতিষ্ঠানপুরীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। পথিমধ্যে দেবযানির সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। কন্যার পাগলপ্রায় ক্রোধান্ধ মুর্তি দেখে তিনি প্রকৃত তথ্য জানতে পেরে দেবযানিকে শান্ত করার প্রয়াস চালিয়ে ব্যর্থ হন। পিতা দৈত্যগুরু রাজা যযাতিকে অভিশাপ না দিলে দেবযানি দেহত্যাগ করবে এইরূপ শর্তারোপ করলে দৈত্যগুরু বাধ্য হয়ে যযাতিকে জরাগ্রস্ত হওয়ার অভিশাপ প্রদান করেন।

পিতৃতূল্য ঋষিশ্রেষ্ঠ শুক্রাচার্যের অব্যর্থ অভিশাপে রাজা যযাতি জরাগ্রস্ত হয়ে পরমকষ্টে দিনাতিপাত করতে থাকে। অনুচর পূর্ণিকার কথায় দেবযারি স্বীয় ক্রোধান্ধ সিদ্ধান্তে অনুতপ্ত হয়ে পিতার কাছে অভিশাপমোচনের উপায় সম্পর্কে জানতে চাইলে দৈত্যগুরু জানান যে যযাতির কোন পুত্র পিতার অশিশাপ বরণ করলে রাজার শাপমোচন ঘটবে।

শেষাবধি দেবযানির দুই পুত্র এবং শর্মিষ্ঠার বড় দুই পুত্র পিতার অভিশাপ বরণে অস্বীকৃতি জানালে রাজা তাদের প্রতি রুষ্ঠ হন। অবশেষে শর্মিষ্ঠার কনিষ্ঠ পুত্র পুরু সানন্দচিত্তে পিতার অভিশাপ বরণ করলে রাজা জরামুক্ত হন এবং পুত্র পুরুকে সসাগরা এবং সদ্বীপা পৃথিবীর একচ্ছত্র অধিপতি হওয়ার আশির্বাদ প্রদান করেন। 

 

সর্বশেষে, দৈত্যগুরু শুক্রাচার্য শর্মিষ্ঠাকে শাস্তিমুক্ত করেন এবং দেবযানি সপত্নী শর্মিষ্ঠাকে বরণ করে নেয় এবং নাটকের শুভ সমাপ্তি হয়।

গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রসমূহ:

------------------

# শর্মিষ্ঠা- দৈত্যরাজের কন্যা।

# দেবযানি- দৈত্যগুরু শুক্রাচার্যের একমাত্র কন্যা।

# যযাতি- চন্দ্রবংশীয় রাজা।

# কোপিল- দৈত্যগুরু শুক্রাচার্যের শিষ্য।

# পূর্ণিকা- দেবযানির একান্ত সহচরী।

# পুরু- রাজা যযাতির কনিষ্ঠ পুত্র।

# শুক্রাচার্য- দৈত্যগুরু।

এই প্রয়াস বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন সাহিত্যিকের সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে জানার উদ্দেশ্যে। এই প্রয়াসে আপনাদের কোনরূপ উপকার হলেই তা এই প্রচেষ্টার সফলতা হবে।

Answer 2

শর্মিষ্ঠা

শর্মিষ্ঠা একটি পৌরাণিক নাটক। রচনাকাল ১৮৫৯। এটিই আধুনিক পাশ্চাত্য শৈলীতে রচিত প্রথম বাংলা নাটক। নাটকের আখ্যানবস্তু মহাভারতের আদিপর্বে বর্ণিত রাজা যযাতি, শর্মিষ্ঠা ও দেবযানীর ত্রিকোণ প্রেমের কাহিনী থেকে গৃহীত। অবশ্য পাশ্চাত্য নাট্যশৈলীতে লিখলেও, মাইকেল এই নাটকে সংস্কৃত শৈলীকে সম্পূর্ণ বর্জন করেন নি। এই নাটকের কাব্য ও অলংকার-বহুল দীর্ঘ সংলাপ, ঘটনার বর্ণনাত্মক রীতি, প্রবেশক, নটী, বিদুষক প্রভৃতির ব্যবহার সংস্কৃত শৈলীর অনুরূপ। আবার ইংরেজি সাহিত্যের রোম্যান্টিক ধারার প্রভাবও এই নাটকে স্পষ্ট। প্রথম রচনা হিসেবে ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলেও, সেই যুগের ইংরেজি-শিক্ষিত পাঠকসমাজে এই নাটকটি খুবই সমাদৃত হয়। বেলগাছিয়া রঙ্গমঞ্চে সাফল্যের সঙ্গে নাটকটি অভিনীতও হয়।

চরিত্রসমূহ:
শর্মিষ্ঠা- দৈত্যরাজের কন্যা
দেবযানি- দৈত্যগুরু শুক্রাচার্যের একমাত্র কন্যা
যযাতি- চন্দ্রবংশীয় রাজা।
কোপিল- দৈত্যগুরু শুক্রাচার্যের শিষ্য
পূর্ণিকা- দেবযানির একান্ত সহচরী
পুরু- রাজা যযাতির কনিষ্ঠ পুত্র
শুক্রাচার্য- দৈত্যগুরু