ডিজিটাল দুনিয়ায় সন্তানের সুরক্ষার জন্য অভিভাবকদের মেনে চলতে হবে ৪-টি নিয়ম!
=============================================
আমরা এক এমন সময়ে বাস করছি যখন খেলার জন্য প্রশ্বস্ত মাঠের বদলে আমাদের সন্তানদের কাছে আছে কেবল মোবাইল ফোন। তাদের বিচরণক্ষেত্র হল ভার্চুয়াল জগত যেখানে ভালমন্দের ফারাক করা বড়দের পক্ষেও কঠিন। গোটা ডিজিটাল দুনিয়া জুড়ে কিন্তু ছড়িয়ে আছে নানা রকমের প্রলোভন যা আপনার সন্তানকে বিপথে চালিত করতে পারে। ডিজিটাল দুষ্কৃতীরা সাধারণত এমন বাচ্চাদেরকে টার্গেট করে যারা একাকীত্বে ভুগছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় মন খারাপ সংক্রান্ত পোস্ট বেশি পরিমাণে করছে বা যাদের বাস্তব জগতের বন্ধুবান্ধব সংখ্যা কম। সন্তানকে ভার্চুয়াল জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব না হলেও, যাতে ডিজিটাল দুনিয়ার বিপদ তাদের জীবনে উঁকি না দেয় তার জন্য কিছু জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক। বলা বাহুল্য যে সতর্ক হতে হবে অভিভাবকদেরকেই।
১০-বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা গেমস খেলা বা ভিডিও দেখা একদমই স্বাস্থ্যকর নয়। এতে তাদের বাইরে গিয়ে খেলার প্রবণতা কমে, সহযোগিতার মানসিকতা তৈরি হয়না এবং ওবেসিটির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
তবে আজকের বাচ্চারা তো অনেক কম বয়স থেকেই ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে বিচরণ করে। বাচ্চাদের সাইবার জগতে সুরক্ষিত রাখার জন্য আপনাকে যে নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে সেগুলো হল,
প্রথমত, বাচ্চাদের সাথে যতটা সম্ভব খোলাখুলি কথা বলুন। দিনের একটা সময় ওদের সাথে গল্প করার জন্য, ওদের সারাদিনের অভিজ্ঞতা জানার জন্য রাখুন। যে সব বাচ্চারা একাকীত্বে ভোগে তারাই কিন্তু সাইবার অপরাধীদের প্রধান টার্গেট। আপনার সন্তান যেন কখনো তাদের চক্রান্তের শিকার না হয় সেজন্য ভাল কমিউনিকেশন জরুরি। বাচ্চার বলা কোন কথা আপনার মনমত না হলে ওদের সমালোচনা না করে, বুঝিয়ে বলুন। ওরা আপনাদের বিশ্বাস করতে পারলে তবেই কিন্তু বিপদ ঘনালে আপনাকে জানাবার সাহস পাবে। সাইকোলজিস্ট এবং নিউরোলজিক্যাল ট্রান্সফর্মেশন কোচ প্রগতি রাও জানিয়েছেন যে বয়স অনুযায়ী বাচ্চাদের সোশ্যাল মিডিয়া ও নেটজগতে লুকিয়ে থাকা বিপদের ব্যাপারে সতর্ক করা প্রয়োজন। তাদের বোঝানো প্রয়োজন যে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করা বিপদজনক।
দ্বিতীয়ত, বাচ্চাদের ডেস্কটপ কম্পিউটার ব্যবহার করতে দিন এবং সেটিকে এমন জায়গায় রাখুন যেখানে পরিবারের অন্যরাও বাচ্চা কী করছে তা দেখতে পাবে। ল্যাপটপ দিলে সেটা সে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে ব্যবহার করবে ফলে তাকে চোখে, চোখে রাখা দুষ্কর হয়ে পড়বে। মনে রাখবেন, বাচ্চাদের ভার্চুয়াল জগতের বন্ধুদের বিষয়ে যতটা জানা সম্ভব, আপনাকে ততটা জানতেই হবে।
তৃতীয়ত, ফেসবুকে বা ইনস্টাগ্রামে নিজেদের লাইভ লোকেশন, সেলফি যার মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য, অবস্থান বোঝা যায় সেসব শেয়ার করতে বারণ করুন। স্কুল ড্রেস পরিহিত ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার না করাই বাঞ্ছনীয় কারণ সেক্সুয়াল প্রিডেটররা আপনার সন্তানের স্কুল কোথায় তা সহজেই খুঁজে বের করে ফেলবে।
সবশেষে বলা প্রয়োজন যে প্রযুক্তি এখন অনেক উন্নত তাই আপনি প্রযুক্তির ব্যবহার করেই সন্তানের ভার্চুয়াল গতিবিধির ওপর নজর রাখতে পারেন। সারভাইল্যান্স সফটওয়্যার এই বিষয়ে আপনার সহায়ক হতে পারে।
সন্তানের সুরক্ষা বিধান আমাদেরই কর্তব্য তাই এই বিষয়ে একটু বেশি নজরদারি কোনমতেই খারাপ নয়।