রুচিসম্মত ঘর রুচিশীলতার পরিচয় দেয়। ঘর হলো প্রশান্তির কেন্দ্রস্থল। সে ঘরের প্রধান কেন্দ্র হলো 'বেডরুম'। সুন্দর সাজানো-গোছানো বেডরুম কার না ভালো লাগে! এ জন্য খুব বেশি কিছু করার দরকার হয় না। শুধু কোন জিনিস কীভাবে রাখবেন সেটা একটু সচেতনতার সঙ্গে বোঝা দরকার। পরিপাটি বেডরুমের জন্য যা করা যেতে পারে:
বেডরুমের প্রধান আসবাব হলো খাট। কেউ কেউ নিচু ধরনের বিছানা পছন্দ করে। এ ক্ষেত্রে ম্যাট্রেস ব্যবহার করা যেতে পারে। বিছানার সঙ্গে আলমারি, ড্রেসিং টেবিল, ওয়ার্ডরোব বা অন্য যেসব আসবাব রাখতে চান, তা তৈরি করার আগেই ঘরের সঙ্গে খাপ খায় এমন করে তৈরি করতে হবে। ছোট ঘরের জন্য খুব বেশি বড় বা উঁচু আসবাব তৈরি করা উচিত নয়। তাহলে ঘর আরও ছোট লাগে দেখতে। এসব আসবাব যাতে সহজেই নড়াচড়া করানো যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে চাকাওয়ালা আসবাব ব্যবহার করতে পারেন।
বেডরুমের দেয়ালের রঙ ঘরের শোভাবর্ধনের ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখে। হালকা প্যাস্টেল শেডের রঙ করলে দেখতে কমনীয় লাগে। বেডরুমের জন্য খুব বেশি ডার্ক শেডের রঙ ব্যবহার করা উচিত নয়। আর ছোট ঘরের জন্য তো নয়ই। রঙ যত হালকা হবে, ঘর তত পরিচ্ছন্ন ও বড় মনে হবে।
বিছানার জন্য ভালো মানের আরামদায়ক বেডকভার বেছে নিন। রঙের ক্ষেত্রে দেয়ালের সঙ্গে খাপ খায় এমন রঙ বেছে নিতে পারেন। সাটিন, কটন বা অন্য যে ধরনের ফেব্রিকে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তা ব্যবহার করতে পারেন। সঙ্গে পছন্দসই কুশন দিয়ে সাজিয়ে নিন। কুশন বা পিলোকভার হতে পারে বেডকভারের সম-রঙ বা বেশি কুশন হলে একেক রঙের হতে পারে। তাতে আপনার বিছানাটি হয়ে উঠবে আরও রঙিন ও উজ্জ্বল।
বাইরের আলো-বাতাস এসে পড়ে এমন স্থানে বিছানাটি রাখতে পারেন।
মেঝে সাজানোর জন্য রয়েছে নানান সরঞ্জাম। বাজার ঘুরে কিনে নিতে পারেন বেডরুমের উপযুক্ত পছন্দসই কার্পেট, শতরঞ্জি। ঘরের দেয়ালের রঙের সঙ্গে খাপ খায় এমন রঙ পছন্দ করুন। যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তারা ধুলাবালি থেকে রক্ষা পেতে কার্পেট এড়াতে পারেন। এ ক্ষেত্রে খাটের সামনে রাখতে পারেন সুন্দর কোনো পাপোশ। কার্পেট পরিষ্কার করার জন্য ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করুন।
সপ্তাহে অন্তত এক দিন ঘরের ঝুল পরিষ্কার করুন। সঙ্গে লাইট, ফ্যানও পরিষ্কার করে নিতে হবে।
আসবাব পরিষ্কার করার জন্য পানি ব্যবহার করবেন না। এতে আসবাবের পলিশ উঠে যায়। গ্নাস পরিষ্কার করার জন্য লিকুইড ক্লিনার ব্যবহার করুন। অথবা নিউজপ্রিন্ট কাগজ পানিতে ভিজিয়ে গ্গ্নাস পরিষ্কার করা যেতে পারে। প্রতিদিনের ধুলাবালি প্রতিদিন পরিষ্কার করুন।
বেডরুমের দেয়ালে পছন্দমতো কোনো পেইন্টিং রাখতে পারেন অথবা হস্তশিল্পের কোনো ওয়ালম্যাট বা দেয়ালঘড়ি। যার বেডরুম তার বড় কোনো ছবি রাখা যেতে পারে। ঘর যদি বড় হয়, কর্নারে রাখতে পারেন ঘরে রাখা যায় এমন কোনো গাছ। ঘরে সবুজ গাছ মনে প্রশান্তি আনতে সহায়ক। দেয়ালের কর্নারে রাখতে পারেন পকেট ওয়াল হ্যাঙ্গিং। দেয়ালে ঝোলানো এসবের মধ্যে টুকিটাকি জিনিস গুছিয়ে রাখতে পারেন, যা প্রয়োজনের সময় সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়।
বিছানা, বালিশ, তোশক সুযোগ পেলেই রোদে দিয়ে গরম করে নেওয়া উচিত। এই বর্ষায় ঝকঝকে রোদ দেখলেই বিছানা রোদে দিন।
পোকামাকড় থাকলে কীটনাশক দিয়ে মেরে ফেলুন। বক্স খাট হলে খাটের নিচে অনেক ময়লা জমে এবং তেলাপোকা, পিঁপড়া ইত্যাদির উপদ্রব দেখা দেয়। তাই দুই সপ্তাহ অন্তর বক্স খাটের নিচে পরিষ্কার করুন।
যাদের ঘর ছোট ও বড় বাজেটের সংসার সামলানো দায়, তারা আসবাব তৈরির সময় বুদ্ধি করে কিছুটা খরচ বাঁচাতে পারেন। যেমন আলমারি বা ওয়ার্ডরোবে আয়না লাগিয়ে নিলে ড্রেসিং টেবিলের কাজ হবে। বক্স খাটের সঙ্গে ড্রয়ার দিয়ে সেখানে মশারি, কাঁথা রাখা যায়। বেডরুমে টিভি রাখতে চাইলে জায়গা ছোট হলে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখতে পারেন।
বেডরুমের শোভা বর্ধনে সহায়ক ঘরের পর্দা ও লাইট সিস্টেম। দেয়াল ও বিছানার সঙ্গে মিলিয়ে পর্দা বেছে নিন। সরাসরি বাইরের রোদ লাগে এমন জানালা হলে ভারী পর্দা ব্যবহার করুন। ঘরের রঙের সঙ্গে খাপ খায় এমন আলো ব্যবহার করুন।
কিছুদিন পরপর আসবাব ঘুরিয়ে রাখতে পারেন। এতে বেডরুমে কিছুটা নতুনত্ব ফিরে আসে। শুধু নতুন করে রাখার জন্যই আপনার ঘরটি হয়ে উঠবে নতুন।