থ্রেস: পূর্ব ইউরোপের পানিপথের প্রান্তর! জুমার বিরতী শেষে ইস্তাম্বুলে থেকে পুনরায় সফর শুরু।এক নাগারে বাস ছুটে চলছে ঐতিহাসিক থ্রেস সমভূমির বুক চিরে। কৃষ্ণ সাগর, মর্মর সাগর ও এজিয়ান সাগরের পাশে এই ছোট্ট সমভূমিতে লড়াই হয়েছে দুনিয়ার তাবৎ পরাশক্তির। ১৩৬২ সালে সুলতান ওসমানের নাতি যুবরাজ মুরাদ সিংহাসন অধিকার করেই বলকান অভিযানে নামেন। প্রথমেই মেরিচ নদী তীরের আদ্রিয়ানাপোল বিজয় করে নতুন নাম দেন এদিরনে। ওসমানীদের রাজধানী বুরসা থেকে সরিয়ে নিয়ে আসেন থ্রেসের এদিরনে। লক্ষ্য ইউরোপ অভিযান। পুরো বলকান উপদ্বীপের প্রায় সবটা ওসমানী শাসনে অধীনে নিয়ে আসেন। সুলতান মুরাদের কাছে পরাজিত হয় পূর্ব ইউরোপের সম্মিলিত খৃষ্টান বাহিনী। সার্বিয়া, বাইজেন্টাইন সম্রাট কর দিতে রাজি হয়ে রাজ্য বাচান। ময়দানে পরাজিত হয়ে কূটকৌশলের আশ্রয় নেয় শত্রুরা। ১৩৮৯ সালে কসোভা বিজয়ের পর এক খ্রীস্টান আততায়ীর হাতে নিজের তাবুতে শহীদ হন সুলতান। কিছুদিনে জন্য ওসমানীদের মনোযোগ ইউরোপ থেকে সরে ইস্তান্বুলের বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের দিকে সরে আসে। কয়েক শত বছর বলকান শাসন করে ওসমানীরা। তাদের ন্যায় বিচারের পতাকা তলে নিজ নিজ ধর্ম পালন করে স্বাধীনভাবে বসবাস করে মুসলিম,খ্রীস্টান ও ইহুদীরা। ১৮৭৮ সালে রাশিয়ার সৈন্যরা ধেয়ে আসে থ্রেসে। দখল করে নেয় বুলগেরিয়া,রুমানিয়া এমনকি এদিরনে। দেড় লাখ রুশ সৈন্যের মোকাবেলায় ৪০ হাজার সৈন্য নিয়ে রুখে দাড়ায় খলিফা আবদুল হামিদের যোগ্য সেনাপতি ওসমান পাশা। বুলগেরিয়া প্লেভনের সাপকা পাশ পর্বত শৃঙ্গ লাল হয়ে যায় রুশ রক্তে। যুদ্ধের ময়দানে পরাজিত রুশ সেনাপতি গনহত্যা চালায় পার্শ্ববর্তী তুর্কি গ্রামগুলোতে। সেই কান্নারচোট সুর যেন এখনও ভাসে থ্রেসের সবুজ প্রান্তরে। ১৯১২ সালে বলকানে যুদ্ধের ডামাডোলে এদিরনেকে তুর্কিদের থেকে কেড়ে নিয়ে বুলগেরিয়া কে দান করে পশ্চিমা পরাশক্তিগুলো। তুর্কিরা কোন ভাবেই এই চুক্তি মেনে নিতে পারেনা যে তাদের সাবেক রাজধানী অন্যের অধিকারে যাবে। মহাবাহু আনোয়ার পাশা অভিযান চালিয়ে ফিরিয়ে আনেন এদিরনে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর থ্রেস ভাগবাটোয়ারা হয় গ্রীক ও বুলগারদের মধ্যে। তুর্কি স্বাধীনতাযুদ্ধে আনোতোলিয়া স্বাধীন করার পর তুর্কিরা তাকায় থ্রেসের দিকে। মুক্ত করে দক্ষিন থ্রেস। তবুই তেসালুনকি বা সেলুনিকা শহর-কামাল পাশার জন্মস্থান রয়ে যায় গ্রীসে দখলে। পানিপথ যেন থ্রেস। কত যুদ্ধ, কত যে কাহিনী থ্রেসকে নিয়ে।