ডিমেনশিয়া রোগের লক্ষণঃ
ভুলে যাওয়ার কারণে রোগীর মধ্যে হতাশা কাজ করে। প্রাথমিকভাবে ডিমেনশিয়া খুবই ধীরে বিস্তার লাভ করে, কয়েক মাস এমনকি বছরও হতে পারে। এছাড়াও নিদ্রাহীনতা এবং আরও অন্যান্য সমস্যায় ভুগতে পারে। ধীরে ধীরে রোগী অন্যের ওপর নির্ভ্রশীল হয়ে পড়ে।
চিকিৎসাঃ
লক্ষণ দেখে সন্দেহ হলে অথবা ডিমেনশিয়া রোগটি শনাক্ত হওয়ার পর, দেরি না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করতে হবে। রোগীকে সময় দেয়া, যথাযথ সম্মান করা, সেবা করা সর্বোপরি প্রত্যহিক জীবনের মান বাড়ানোর মাধ্যমে এ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির হার কমানো যায়।
আবার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু কিছু ওষুধ যেমন- donepezil, nemantidine, tacrine ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে। এগুলো রোগীর চিন্তাশীলতা ও শনাক্তকরণ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে(❌ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিত এইসব ঔষধ খাওয়া ঠিক নয়❌)। প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগটি সেরে উঠার সম্ভাবনা থাকলেও, জটিল হয়ে গেলে রোগীর আর সেরে ওঠার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।
ডিমেনশিয়ার সচেতনতাঃ
আমাদের সবার ধারনা, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ভুলে যাবেন। এটিকে আমরা অনেকেই খুব স্বাভাবিকভাবে নেই এবং ডিমেনশিয়া যে একটি রোগ, এ বিষয়ে সচেতন থাকি না। এখন এমন অনেক ওষুধ আছে, যেগুলো সেবনে ডিমেনশিয়া রোগটির তীব্র হওয়া ঠেকানো যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে আসলে এটি সম্ভব কিন্তু বেশির ভাগ রোগীই আসেন একেবারে শেষ পর্যায়ে। সচেতনতা বৃদ্ধি করে ডিমেনশিয়ার উৎপত্তি থেকে কিছুটা নিরাপদে থাকা যায়। ২০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ডিমেনশিয়া সচেতনতা দিবস। ডিমেনশিয়া রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এ দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।
কম বয়সেও ডিমেনশিয়া রোগ হতে পারেঃ-
বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্মৃতিশক্তি কিছুটা হ্রাস পাবে এটাই স্বাভাবিক। আবার অনেক পরিচিত মানুষ, সুন্দর কিছু মুহূর্ত এবং জীবনের কিছু ঘটনা মনের পাতায় দাগ কেটে থাকবে এটাও স্বাভাবিক। কিন্তু যদি জীবনের মধুর স্মৃতিগুলো মন থেকে মুছে যাচ্ছে অথবা সাম্প্রতিককালের কোন ঘটনা মনে করতে পারছেন না অথবা অনেক চেনা জানা কোন ব্যক্তির কথা অনেক চেষ্টা করেও মনে আসছে না, তখন বুঝতে হবে আপনি ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত। ডিমেনশিয়া বয়স্ক ব্যক্তিদের হবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু বর্তমান সময়ে তরুণদের ডিমেনশিয়া রোগের হার ব্যাপকহারে বাড়ছে।
ডিমেনশিয়া রোগের এই প্রবণতা যদি এই হারে বাড়তে থাকে তাহলে এটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। সাধারণত ডিমেনশিয়া শুরু হয় বয়স ৭০ এর কোটায় পৌঁছালে। আর কম বয়সে ডিমেনশিয়া শুরু হয় বয়স ৪০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। বড়দের ডিমেনশিয়া হলে সাধারণত স্মৃতিশক্তি সমস্যাই বেশি হয়। অপরদিকে কম বয়সে ডিমেনশিয়া হলে সাধারনত ল্যাংগুয়েজ সমস্যাই অধিক হয়। কম বয়সে ডিমেনশিয়ার ক্ষেত্রে পরিবারের সহযোগিতা অনেক বেশি দরকার পড়ে।
সবশেষেঃ-
ডিমেনশিয়া বা আলঝাইমার’স রোগে প্রবীণরাই সাধারনত বেশি আক্রান্ত হন। বয়স ৫৫ বছর হলেই মানসিক ক্ষমতা দুর্বল হতে থাকে এবং মানুষ অনেক কিছু ভুলে যেতে থাকে। আর ৬৫ বছর বয়সে সেটা রূপ নেয় আলঝাইমার রোগে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের কোষ সংখ্যা নির্দিষ্ট হারে কমতে থাকে আবার বিভিন্ন রোগব্যাধি মস্তিষ্কের ক্ষতি করে স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ভন্ডুল করে দেয়। বয়সভেদে এমনটা হলেও কমবয়সী মানুষের ক্ষেত্রেও অনেক সময় নানারকম অদ্ভুত, আজগুবী আর বোকামি করে ফেলার প্রবণতা থাকে। এই রোগ চিকিৎসায় বা প্রতিরোধে এখনও কোন ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। সঠিক সেবা এবং পরিচর্চার মাধ্যমে ডিমেনশিয়া আক্রান্ত রোগীকে কিছুটা ভালো রাখা যেতে পারে।
যাদের ডায়াসটোলিক রক্তচাপ ৯০ এর ওপর তাদের ২০ থেকে ২৫ বছর পরে আলঝাইমার রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৫ গুণ বেশি, যাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক তাদের তুলনায়। আবার তারা যদি যদি উচ্চ রক্তচাপের সঠিক চিকিৎসা গ্রহন করেন, তবে পরবর্তীতে তাদের আলঝাইমার রোগের ঝুঁকি অনেক কমে যাবে। হৃদরোগের অনেক ঝুঁকির সাথে আলঝাইমার রোগের সম্পর্ক আছে। যদি হৃদরোগ নিয়ন্ত্রনে সাবধানতা অবলম্বন করা যায়, তাহলে আলঝাইমার রোগের ঝুঁকিও অনেকাংশে হ্রাস পায়। মাঝারি ধূমপান আলঝাইমার রোগের ঝুঁকি বাড়ায় দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বাড়াতে পারে। স্থূলতাও একটি অনেক বড় ঝুঁকি। ৭০ বছর বয়সে বডি মাস ইনডেক্স বা বিএমআই ১ পয়েন্ট বাড়লে, ১৫ বছর পর আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি প্রায় ৩৬ শতাংশ বাড়ে। আর সাথে ডায়াবেটিস থাকলে আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি দ্বিগুণ বাড়ে। সঠিক খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হৃদরোগ এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কিছুটা কমানো সম্ভব।
ধন্যবাদ