চ্যালেঞ্জার সম্পর্কে জানতে চাই - বাংলাহাব Answers - বাংলায় প্রশ্ন উত্তর সাইট
বাংলাহাব Answers ওয়েব সাইটে স্বাগতম । যদি আপনি আমাদের সাইটে নতুন হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের ওয়েব সাইটে রেজিষ্ট্রেশন করে আমাদের সদস্য হয়ে যেতে পারবেন। আর যেকোন বিষয়ে প্রশ্ন করা সহ আপনার জানা বিষয় গুলোর প্রশ্নের উত্তর ও আপনি দিতে পারবেন। তাই দেরি না করে এখনি রেজিষ্ট্রেশন করুন। ধন্যবাদ
0 টি ভোট
"বিনোদন ও মিডিয়া" বিভাগে করেছেন (56.1k পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (60.2k পয়েন্ট)
চ্যালেঞ্জার নামে তিনি সকলের কাছে পরিচিত। তবে তার প্রকৃত নাম এএসএম তোফাজ্জল হোসেন।  বাংলাদেশে যারা নাটক সিনেমা নিয়মিত দর্শক  তাদের সকলেরই কম বেশি প্রিয় এই গুণী অভিনেতা। অপ্রিয় হলেও সত্যি প্রিয় হলেও উনি আন্ডাররেটেড। খুব আলোচিত ছিলেন না। নিরবে একের পর এক অনবদ্য অভিনয় উপহার দিয়ে গিয়েছেন।  বাংলাদেশে তার মত তুখোড় অভিনেতা হাতে গোনা কয়েকজন। "উড়ে যায় বকপক্ষি" - এই একটি ধারাবাহিক নাটকই যথেষ্ট তার অভিনয়ের পারদর্শিতা প্রমাণের জন্য। এছাড়া তার উল্লেখযোগ্য কিছু নাটক হচ্ছে বৃক্ষ মানব, কালা কইতর, পিচাশ মকবুল, জুতা বাবা, আজ জরীর বিয়ে, লীলাবতী, খোয়াব নগর, চোর, পদ্ম, জল তরঙ্গ। তিনি কমবেশি ৫ টি চলচিত্রে অভিনয় করেছেন, যার মধ্যে হুমায়ুন আহমেদের শ্যামল ছায়া, নয় নম্বর বিপদ সংকেত, তৌকির আহমেদের দারুচিনি দ্বীপ এ তার অভিনয় অনবদ্য। দূর্ভাগ্য এই যে তিনি অভনয়ের জন্য হাতে খুব কম সময় পেয়েছেন। গতকাল ১২ অক্টোবর ছিল তার মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১০ সালের এই দিনে তিনি মস্তিষ্ক ক্যান্সারে ভুগে মারা যান। আমার খুবই প্রিয় এই অভিনেতা সম্পর্কে হুমায়ুন আহমেদ "ফাউন্টেন পেন" এ যে লেখাটি লিখেছিলেন তা নিচে দেয়া হল।

"কী এক উৎসব উপলক্ষে আমরা অর্থাৎ ওল্ড ফুলস ক্লাবের সদস্যরা একটা হোটেলের বড় ঘরে জড়ো হয়েছি। সেখানে মধ্যবয়স্ক অচেনা এক ব্যক্তি ঢুকল। আমি ভুরু কুঁচকে তাকালাম। বৃদ্ধ বোকা সংঘের আড্ডায় কখনো অপরিচিতজনদের আসতে দেওয়া হয় না। এ কে? এখানে কী চায়? পরিচয়ে জানলাম তার একটা প্রেস আছে। সেই প্রেসে মাজহারদের 'অন্যপ্রকাশ'-এর বইয়ের কভার মাঝেমধ্যে ছাপা হয়। সে মাজহারের কাছে এসেছে, তার কিছু টাকা দরকার। বেচারা বিব্রত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বললাম, আপনি বসুন। সে সংকুচিত ভঙ্গিতে বসল। আড্ডা জমে উঠল। আমি তার কথা ভুলেই গেছি। নিজের মনে কথা বলে যাচ্ছি। হঠাৎ সে বলল, এখন আপনি যে যুক্তিটা দিলেন তাতে ভুল আছে। আমি বললাম, কী ভুল? সে আমার যুক্তির ভুল ব্যাখ্যা করল। আমি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বললাম, আপনার কী নাম? স্যার, আমার নাম সাদেক। আপনি এত পেছনে কেন? কাছে এগিয়ে আসুন। সাদেক কাছে এগিয়ে এল। এই আসরেই তার নতুন নাম করা হলো 'চ্যালেঞ্জার'। তার নামকরণে আমার কোনো ভূমিকা ছিল না। নামকরণ করেছিলেন অবসর প্রকাশনার মালিক আলমগীর রহমান। সাদেক আলমগীর রহমানের দিকে একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে চ্যালেঞ্জ জিতে নেন বলেই নাম চ্যালেঞ্জার। 

চ্যালেঞ্জার কী বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন তা বলতে চাইছি না। 

কোনো এক বিশেষ তরল পদার্থ গলাধঃকরণ বিষয়ক চ্যালেঞ্জ। ধরা যাক পেপসি। আলমগীর আট বোতল পেপসি খেয়ে বমি শুরু করল। চ্যালেঞ্জার নয় বোতল খেয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে সবার দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগল, যেন কিছুই হয়নি। তাকে আমি প্রথম যে নাটকে নিলাম তার নাম 'হাবলঙের বাজার'। নাটকের কাহিনী হচ্ছে গরমের সময় ডাক্তার এজাজের মাথা এলোমেলো হয়। তার বিয়ের দিন মাথা খুব এলোমেলো হলো। ঠিক করা হলো, মাথা কামিয়ে সেখানে এলাজ দেওয়া হবে। শর্ট নেওয়ার আগে আগে দেখা গেল নাপিত আনা হয়নি। কিভাবে নাটক বানানো হয় তা দেখার জন্য চ্যালেঞ্জার তার স্ত্রীকে নিয়ে গেছে। দুজনই আগ্রহ নিয়ে নাটক বানানো দেখছে।

আমি চ্যালেঞ্জারের দিকে তাকিয়ে বললাম, তুমি তো সব কিছুকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নাও। এসো নাপিতের ভূমিকায় অভিনয় করো। 

চ্যালেঞ্জার বলল, স্যার আপনি যা বলবেন তা-ই করব। মাটি খেতে বললে মাটি খাব। নাটক পারব না। 

আমি বললাম, তুমি পারবে। নাও ক্ষুর হাতে নাও। 

চ্যালেঞ্জার ছোট্ট একটা ভূমিকায় অভিনয় করল। আমি সঙ্গে সঙ্গে বুঝলাম, তার ভেতর সহজাত অভিনয়ের আশ্চর্য ক্ষমতা আছে। তাকে এক ঘণ্টার একটি নাটকে প্রধান চরিত্র করতে বললাম, নাটকের নাম 'খোয়াবনগর'। সেখানে আমার মেজো মেয়ে শীলা অভিনয় করেছিল। নাটকের শেষে আমি মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম, বাবা! চ্যালেঞ্জার নামের এই নতুন অভিনেতার অভিনয় তোমার কেমন লাগল? শীলা বলল, আসাদুজ্জামান নূর চাচাকে আমার এ দেশের সবচেয়ে বড় অভিনেতা বলে মনে হয়। আমি আজ যাঁর সঙ্গে অভিনয় করলাম, তিনি নূর চাচার চেয়ে কোনো অংশে কম না। 

বাবা! তোমার কী মনে হয় সুপারস্টার হিসেবে তার পরিচয় হবে? শীলা বলল, অবশ্যই। 'উড়ে যায় বকপক্ষী'তে পাগলের ভূমিকায় অভিনয় করে সে নিজেকে সুপারস্টার প্রমাণিত করল। আমি কোনো অবিচুয়ারি লিখছি না। চ্যালেঞ্জার এখনো জীবিত। আজ দুপুরে সে তার স্ত্রীকে ইশারায় বলল, সে আমাকে দেখতে চায়। তার স্ত্রী তাকে নিয়ে বাসায় উপস্থিত হলো। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। তার কথা বলার ক্ষমতা নেই। যে কথা বলতে পারছে না, তার সঙ্গে কথা বলে তার যন্ত্রণা বাড়ানোর কোনো মানে হয় না। চ্যালেঞ্জার সম্পর্কে দুটি ছোটগল্প বলতে ইচ্ছা করছে। 

গল্প-১

আমি আমার মেয়ে বিপাশা এবং পুত্র নুহাশকে নিয়ে কক্সবাজার গিয়েছি। তখন আমি মূল পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। একা বাস করি। আমার এই দুই পুত্র-কন্যা হঠাৎই ঠিক করল, বাবার সঙ্গে কিছু সময় কাটাবে। কাজেই তাদের নিয়ে এসেছি সমুদ্রের কাছে। উঠেছি হোটেল সায়মনে। খুব ভোরবেলা দরজায় নক হচ্ছে। দরজা খুললাম, অবাক হয়ে দেখি, এক কাপ গরম চা এবং খবরের কাগজ হাতে চ্যালেঞ্জার দাঁড়িয়ে আছে। সে আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য সারা রাত গাড়ি চালিয়ে ঢাকা থেকে চলে এসেছে। 

গল্প-২

দখিন হাওয়ার ফ্ল্যাটে আমি একা থাকি। শীলার মায়ের সঙ্গে আমার ছাড়াছাড়ি হওয়ার কারণে ওল্ড ফুলস ক্লাবের সব সদস্য আমাকে ত্যাগ করেছে। কেউ ফ্ল্যাটে আসে না। হঠাৎ কারো সঙ্গে দেখা হলে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। অদ্ভুত ভঙ্গিতে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে। আমার সেই দুঃসময়ের কাল বেশ দীর্ঘ ছিল। তখন প্রতিদিন দুপুরে এবং রাতে চ্যালেঞ্জার এসে বসে থাকত। সে আমার সঙ্গে খাবে। তার একটাই যুক্তি, 'স্যার, আপনি একা খেতে পছন্দ করেন না। আমি কখনোই আপনাকে একা খেতে দেব না।' এক সময় ওল্ড ফুলস ক্লাবের সদস্যরা আসতে শুরু করল।

চ্যালেঞ্জার দূরে সরে গেল। 

চ্যালেঞ্জারের নিজের একটা গল্প বলি।

সে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার সময় তার সৎমায়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ছোট ছোট ভাইবোন নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে এসেছিল। তার নিজের ভাষ্যমতে, 'স্যার, কতদিন গিয়েছে কোনো খাওয়া নাই। গ্লাসভর্তি চা নিজে খেয়েছি। ভাইবোনদের খাইয়েছি।' বড় ভাইয়ের দায়িত্ব সে পুরোপুরি পালন করেছিল, সব ভাইবোনকে পড়াশোনা করিয়েছে, বিয়ে দিয়েছে। তার চেয়েও অদ্ভুত কথা সে তার সৎমাকে নিজের কাছে এনে যতটুকু আদর-যত্ন করা যায় করেছে। মৃত্যুর সময় এই মহিলা তার সৎ ছেলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। 

চ্যালেঞ্জার এখন জম্বী। তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছু করার নেই। ব্রেইন ক্যানসার নামক কালান্তক ব্যাধি তার কাছ থেকে সব কিছু নিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ সাহায্যের হাত গাঢ় মমতায় তার দিকে বাড়িয়েছে বলেই সে এখনো বেঁচে আছে। সাহায্যের নামে কেউ কেউ প্রতারণাও করেছেন। চ্যানেল আইয়ের ক্যামেরার সামনে বড় বড় ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের নাম প্রচারিত হয়েছে এই পর্যন্তই। এ প্রসঙ্গে আমি দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি আন্তরিক ধন্যবাদ দিতে চাই। তাঁকে আমি একটি ব্যক্তিগত চিঠি লিখে জনাব আসাদুজ্জামান নূরের হাত দিয়ে পাঠাই। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই সরকারি সাহায্যের ব্যবস্থা করেন। আল্লাহ তাঁর মঙ্গল করুন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা ব্যক্তিগত পত্রটি সংযুক্ত হলো।

৫ আগস্ট, ২০০৯

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা শ্রদ্ধাভাজনেষু,

আমার বিনীত সালাম গ্রহণ করুন। আপনি প্রচুর বইপত্র পড়েন এই তথ্য আমার জানা আছে। নাটক-সিনেমা দেখার সুযোগ পান কি না জানি না। সুযোগ পেলে চ্যালেঞ্জার নামের একজন শক্তিমান অভিনেতার অভিনয় আপনার দেখার কথা। অতি অল্প সময়ে সে অভিনয় দিয়ে দেশবাসীর হৃদয় হরণ করেছে। বর্তমানে সে মস্তিষ্কের ক্যানসারে আক্রান্ত। তার চিকিৎসা চলছে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে। চিকিৎসার বিপুল ব্যয়ভার তার পরিবার আর নিতে পারছে না। আমি তার হয়ে আপনার কোমল মানবিক সত্তার কাছে আবেদন করছি। আপনার মঙ্গলময় হাত কী এই শক্তিমান অসহায় অভিনেতার দিকে প্রসারিত করা যায়?

সম্পর্কিত প্রশ্নগুলো

0 টি ভোট
1 উত্তর
0 টি ভোট
1 উত্তর
14 ডিসেম্বর 2019 "বিনোদন ও মিডিয়া" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Rajdip (56.1k পয়েন্ট)
0 টি ভোট
1 উত্তর
0 টি ভোট
1 উত্তর
17 মার্চ 2020 "বাংলাদেশ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Rajdip (56.1k পয়েন্ট)

8.1k টি প্রশ্ন

6.9k টি উত্তর

148 টি মন্তব্য

2.3k জন সদস্য

×

ফেসবুকে আমাদেরকে লাইক কর

Show your Support. Become a FAN!

বাংলাহাব Answers ভাষায় সমস্যা সমাধানের একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। এখানে আপনি আপনার প্রশ্ন করার পাশাপাশি অন্যদের প্রশ্নে উত্তর প্রদান করে অবদান রাখতে পারেন অনলাইনে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য সবথেকে বড় এবং উন্মুক্ত তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলার কাজে।

বিভাগসমূহ

Top Users Apr 2024
  1. Arshaful islam Rubel

    61100 Points

  2. Koli

    60170 Points

  3. Rajdip

    56100 Points

  4. ruhu

    44630 Points

  5. mostak

    17970 Points

  6. হোসাইন শাহাদাত

    17600 Points

  7. puja

    12170 Points

  8. Jannatul1998

    9460 Points

  9. Kk

    5610 Points

  10. Joglul

    5460 Points

সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

বাংলাদেশ জানতে চাই ইতিহাস সাধারণ প্রশ্ন #ইতিহাস প্রথম #বাংলাহাব #জিঙ্গাসা বাংলা বাংলাহাব সাহিত্য ভাষা শিক্ষানীয় কম্পিউটার বিসিএস স্বাস্থ্য অজানা তথ্য কবিতা আবিষ্কার বিশ্ব #আইন সাধারণ জ্ঞান জনক নাম ক্রিকেট বিজ্ঞান পৃথিবীর বিশ্বের সাধারন প্রশ্ন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবস্থিত সাধারণ জ্ঞ্যান টাকা আয়। তথ্য-প্রযুক্তি চিকিৎসা রাজধানী লেখক পৃথিবী সালে কত সালে উপন্যাস কবি শব্দ কতটি প্রতিষ্ঠিত আবেদন প্রযুক্তি ভাষার খেলোয়াড় সদর দপ্তর # ঠিকানা জেলা শিক্ষা বিভাগ বাংলাদেশে ভালোবাসা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মুক্তিযুদ্ধ জাতীয় ভারত ঢাকা অবস্থান ইনকাম বিশ্ববিদ্যালয় eassy qussion বাংলা সাহিত‍্য নারী bangladesh সংবিধান আয় স্যাটেলাইট বাংলা সাহিত্য করোনা ভাইরাস সংসদ আইকিউ সোস্যাল প্রথম_স্যাটেলাইট ইন্টারনেট অনলাইনে পূর্ব নাম গান #আই কিউ #জনক বঙ্গবন্ধু-১ সর্বোচ্চ #লেখক #প্রোগ্রামিং ফেসবুক ইসলাম সবচেয়ে বড় বি সি এস সমাজ বৈশিষ্ট্য # অর্থ মহিলা নোবেল কখন দেশ দিবস আউটসোর্সিং
...