প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর: কাঁটাতারে ঘেরা ★বাংলাদেশের কূটনীতি - বাংলাহাব Answers - বাংলায় প্রশ্ন উত্তর সাইট
বাংলাহাব Answers ওয়েব সাইটে স্বাগতম । যদি আপনি আমাদের সাইটে নতুন হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের ওয়েব সাইটে রেজিষ্ট্রেশন করে আমাদের সদস্য হয়ে যেতে পারবেন। আর যেকোন বিষয়ে প্রশ্ন করা সহ আপনার জানা বিষয় গুলোর প্রশ্নের উত্তর ও আপনি দিতে পারবেন। তাই দেরি না করে এখনি রেজিষ্ট্রেশন করুন। ধন্যবাদ
0 টি ভোট
"বাংলাদেশ" বিভাগে করেছেন (56.1k পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (60.2k পয়েন্ট)
##প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর: কাঁটাতারে ঘেরা ★বাংলাদেশের কূটনীতি

১.

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফর থেকে বাংলাদেশ কী পেল বা কতটা লাভবান হলো এ প্রশ্ন উঠেছে।লাভ, ক্ষতির বিবেচনা হিসেব করবার আগে মাথায় রাখতে হবে বাংলাদেশ এবং ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ধরনের বিষয়টি। এ বিষয়টি বুঝতে পারলেই বাংলাদেশের লাভ-ক্ষতির হিসাব বোঝা সহজ হবে।

২.

বাংলাদেশ হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র রাষ্ট্র যার প্রায় চারদিক কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা। পৃথিবীতে আর কোন রাষ্ট্র নেই যার চারপাশ এভাবে ঘেরা। এ ধরনের কাঁটাতারের বেড়া আমরা দেখেছি নাৎসি জার্মানিতে, কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে। এ বেড়া দেবার মাধ্যমে প্রতীকী অর্থে ভারত বাংলাদেশকে কী চোখে দেখে সেটা স্পষ্ট করেছে।

পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারত সামরিক দিক থেকে বিশ্বে চতুর্থ শক্তিশালী রাষ্ট্র। কেনাকাটার সক্ষমতার ভারসাম্যে (পিপিপি) হিসেব করলে ভারত তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি। এ শক্তিশালী রাষ্ট্রটি শুধু বাংলাদেশকে নয়,তার প্রতিবেশী নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কাকেও স্পষ্ট করেছে যে, এ আঞ্চলে ভারত হলো তাদের ‘বড় ভাই’।ফলে, তাদের সাথে সম্পর্কের শর্তাবলী ঠিক করবার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করবে ভারত।

৩.

আন্তর্জাতিক রাজনীতি ‘ফেয়ার গেইম’ দ্বারা পরিচালিত হয় না। এটি পরিচালিত হয় ‘পাওয়ার গেইম’ দ্বারা। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা যখন মুখোমুখি বসেন, তখন তারা নিজ নিজ দেশের সামরিক এবং অর্থনৈতিক শক্তির প্রতিনিধি হিসেবেই বসেন।

শক্তিশালী বা দুর্বল যেকোন দেশের দর কষাকষিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন সে সমস্ত রাষ্ট্রের কূটনীতিকরা। দর কষাকষির ক্ষেত্রে কূটনৈতিক দক্ষতার বিষয়টি অতীব জরুরী। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কূটনীতিকরা শুধু ভারতের সাথে নয়, অন্যান্য দেশসহ জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে চরম অদক্ষতা দেখিয়ে আসছেন।

এ অদক্ষতার অন্যতম একটা কারণ, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের কূটনীতিকরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত হন, সেটি। এ প্রক্রিয়া অর্থাৎ বিসিএসের মাধ্যমে, সাহিত্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তির ছাত্র/ছাত্রীরাও নিয়োগ পান, যার সাথে আন্তর্জাতিক রাজনীতির দূরতম সম্পর্কও নেই।

বাংলাদেশের মন্ত্রী, কর্মকর্তা এবং কূটনীতিকরা যখন ভারতের মত অর্থনৈতিক এবং সামরিক ‘দানব’ এর সাথে বসেন তখন এমনিতেই একটা মনস্তাত্ত্বিক চাপে ভোগেন। শুধু যে ভারতীয় পক্ষই নিজেদের ‘বড় ভাই’ মনে করে এ সমস্ত আলোচনায় বসে তা নয়। মনোজগতে দীর্ঘদিন ধরে ‘উপনিবেশিক মানসিকতা’ ধারণ করবার ফলে ভারত ‘বড় ভাই’, এ মনস্তত্ত্ব  বাংলাদেশ পক্ষও ধারণ করেন। তার উপর ভারতের ঝানু কূটনীতিকদের সামনে বাংলাদেশের কূটনৈতিকদের অদক্ষতায় সিদ্ধান্তগুলো বাংলাদেশের পক্ষে নিয়ে আসবার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।

৪.

দক্ষ কূটনীতি ছাড়া আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দর কষাকষির আরেকটি বড় উপাদান হচ্ছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা। অর্থাৎ,ক্ষমতাসীন দলের কতটুকু সদিচ্ছা আছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের পক্ষে দর কষাকষি করবার।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মাঠের বক্তৃতায় যাই বলা হোক না কেন, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে দেশের জন্মকাল হতে এ ধারণা প্রচলিত যে, ভারতের বিরাগভাজন হয়ে, এ দেশে ক্ষমতায় থাকা যাবে না। ফলে, যারাই ক্ষমতায় থেকেছেন, তারা যখন ভারতের সাথে বৈঠকে বসেছেন, একটা মানসিক চাপ অনুভব করেছেন।

ভারতের বিরাগভাজন হয়ে পড়ে কিনা এ উদ্বিগ্নতা থেকে বাংলাদেশের কোন সরকারই মুক্ত হতে পারেনি। এর পাশাপাশি সরকারকে সব সময় উদ্বিগ্ন থাকতে হয় এ ভেবে যে, কাঙ্খিত ফল না আসলে দেশে কী ধরনের বিরূপ সমালোচনার মুখোমুখি হতে হবে।

বিভক্ত রাজনৈতিক সংস্কৃতির কারণে বাংলাদেশের কোন ক্ষমতাসীন দলই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুতে প্রধান বিরোধী দলের সমর্থন পায়নি। বরং যারাই বিরোধী দলে গিয়েছে, তারাই ভারতের সাথে সরকারের আলোচনার সফল না হবার বিষয়টিকে নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেছে।

বাংলাদেশের বিপরীতে ভারতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে মৌলিক ঐক্যমত রয়েছে। এমনকি পাকিস্তানের মত রাষ্ট্রেও সেটা রয়েছে। আর এই ঐকমত্যের ফলে, ভারতের ক্ষমতাসীন দল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জোরালো অবস্থান নিতে সক্ষম হয়।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতের ‘চাণক্য নীতি’র সার হলো পাকিস্তান ছাড়া সবার সাথেই সম্পর্ক, কিন্তু কারো মিত্র হওয়া নয়। আর আঞ্চলিক ক্ষেত্রে ছোট এবং দুর্বল রাষ্ট্রগুলিকে সব সময় এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপের মধ্যে রাখা, যাতে বাণিজ্যসহ সামরিক, অর্থনৈতিক চুক্তি ভারতের পক্ষে যায়। আর এ চাপে রাখবার কৌশলেরই অংশ হল দ্বিপাক্ষিক সমস্যাগুলোর সমাধানের উদ্যোগ না নিয়ে সেগুলিকে জিইয়ে রাখা।

৫.

এটা অস্বীকার করবার উপায় নেই ভারত বিরোধিতা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারা। ১৯৪৭ সাল থেকে এ ধারাটি বিদ্যমান। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হবার পর এ ধারাটি বিলুপ্ততো হয়ইনি, বরং শক্তিশালী হয়েছে। বাংলাদেশ এবং প্রতিবেশি রাষ্ট্রসমূহকে ঘিরে ভারতের চাপ প্রয়োগের ‘বড় ভাই’ সুলভ পররাষ্ট্র নীতি, এ ধারাকে আরো শক্তিশালী হতে সাহায্য করেছে।

বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতা দুটো গ্রাউন্ডে করা হয়। এর একটি হলো রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক গ্রাউন্ড। আর অপরটি হল, ধর্মীয় বিভাজনের দৃষ্টিকোণ। ধর্মীয় বিভাজনের দৃষ্টিকোণ থেকে যারা ভারতের সমালোচনা করেন, তারা তাদের বক্তব্য শক্তিশালী করবার জন্য রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিষয়গুলোকেও এর সাথে যুক্ত করেন।

মুসলিম জাতীয়তাবাদ এবং ‘ইসলামপন্থা’র রাজনীতিতে যারা বিশ্বাস করেন, তারা এ ধর্মীয় বিভাজনটাকে মাথায় রেখে ভারত বিরোধিতা করেন। এ ধারার রাজনীতিতে বিশ্বাসী মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী, সমর্থকদের বক্তব্য এবং ফেইসবুকের নানা পোস্টে বিষয়টি খুব স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠে।

অপরদিকে, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যারা যুক্ত বা সমর্থক তারা ভারতের কোনও বিষয়ে সমালোচনা করতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। ভারতের সাথে তাঁরা ঐতিহাসিক কারণে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক সংসক্তি বোধ করেন। বিষয়টা অনেকটা সমাজতন্ত্রের আমলে সিপিবি যেমন সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে বোধ করত, তার মত।

এ সংসক্তির ফলে সিপিবি যেমন সোভিয়েত ইউনিয়নের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক কোন নেতিবাচক বিষয়েই সমালোচনা করতে পারত না, ভারতের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ভূমিকাও অনেকটাই তাই। এ দলটির নেতাকর্মীরা মনে করেন জাতীয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেতো বটেই, এমনকি বাংলাদেশ-কেন্দ্রিক ভারতীয় নীতির ক্ষেত্রেও তারা যদি সমালোচনা করেন, সেটি তাদের রাজনীতির বিরুদ্ধে যাবে।

শুধু রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কারণে ভারতের বিরোধিতাকারী ধারাটি অত্যন্ত দুর্বল। এ ধারাটি মূলত সাবেক ‘পিকিংপন্থী’ বাম ধারার উত্তরসূরি। গণচীরনের ভারত বিরোধী অবস্থানের কারণে তাদের ভারতের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নিতে কোন সমস্যা হয়নি। অপরদিকে, বামধারার যারা মূলধারা হিসেবে পরিচিত, অর্থাৎ ‘মস্কোপন্থী’ সিপিবি ধারা, তারা সোভিয়েত-ভারত মৈত্রীর কারণে ভারতের সমালোচনা করতে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগতেন। এটা তারা সম্প্রতি কাটিয়ে উঠবার চেষ্টা করছেন।

৬.

বাংলাদেশের জনগণের উল্লেখযোগ্য অংশের মাঝে ভারত বিরোধী মনোভাব থাকলেও তাদের প্রায় সবাই আবার ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি অনুরক্ত। এক্ষেত্রে দেখা গেছে, মুসলিম জাতীয়তাবাদী এবং ‘ইসলামপন্থী’রা হিন্দি সংস্কৃতির সাথে বেশি সংসক্তি বোধ করেন। এর মূল কারণ হয়ত উর্দু ভাষার সাথে হিন্দি ভাষার মিল এবং বাংলাদেশে ‘মুসলমানি’ শব্দ হিসাবে পরিচিত শব্দের হিন্দি ভাষাতে উপস্থিতি। অপরদিকে, সেক্যুলার, বাম ইত্যাদি হিসাবে যারা পরিচিত, তাঁদের আগ্রহ কোলকাতা- কেন্দ্রিক সংস্কৃতির প্রতি।

ভারত যেখানে নানা টালবাহানায় সেখানকার শুধুমাত্র বাংলা ভাষীদের জন্য বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল প্রবেশ করতে দিচ্ছে না,সেখানে বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেলগুলো প্রবল জনপ্রিয়। অর্থাৎ, জনমানসের মানসিকতায় ভারত সম্পর্কে একটা প্রবল স্ববিরোধী মনোভাব উপস্থিত।

এ স্ববিরোধিতা, একটি দেশের জনগণের উল্লেখযোগ্য অংশের মননগত ভাবে সাংস্কৃতিক উপনিবেশিকতাকে ধারণের প্রতিই ইঙ্গিত করে।এর বিপরীতে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের কোন অংশের জনগোষ্ঠীর মাঝেই বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা বিশ্বের অন্য দেশের সংস্কৃতির প্রতি এমন প্রবল আগ্রহ দেখা যায় না।

৭.

ভারত সীমানা ঘেঁষে বাংলাদেশের একটি নদীর নাম হল ফেনী নদী। নদীর ওপাড় হল ভারত। ভারতের সীমানার সাথে এ নদীর বিস্তৃতি ৭০ কিলোমিটার। এ নদীর জল বাংলাদেশের সীমানা থেকে ২০১০ সাল থেকেই পাম্পের মাধ্যমে ভারতবাসী টেনে নিচ্ছে।বর্তমানে ৩৪টি পাম্প ভারতের অংশ থেকে নদীটিতে বসানো রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের দিল্লি সফরে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার আওতায় ফেনী নদীর ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করতে পারবে ভারত। ওই পানি তারা ত্রিপুরার সাবরুম শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্পে ব্যবহার করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে এ পরিমাণ পানি প্রত্যাহারে বাংলাদেশের পরিবেশ বা নদীর কোন ক্ষতি হবে না।

বাংলাদেশের মানুষের প্রতিবেশির প্রয়োজনে এ পরিমাণ পানি দিতে কোন আপত্তি নেই। এ দরিদ্র পীড়িত দেশের মানুষ এর চেয়ে অনেক বেশি আত্মত্যাগ করেছে তার আরেক প্রতিবেশী মিয়ানমারের ১২ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে।

বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর বড় অংশ সমস্যাটি দেখছে ভিন্ন জায়গায়। তারা দেখছে ট্রানজিট, এলপিজি গ্যাস, ট্রান্সশিপমেন্ট, ফেনী নদীর পানিসহ ভারতের যখন যেটা প্রয়োজন বাংলাদেশ পক্ষ সাথে সাথেই সেটা দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু, তিস্তা নদীর পানি বন্টনসহ অমীমাংসিত বিষয়গুলো ভারত নানা টাল বাহানায় ঝুলিয়ে রাখছে। উপরন্তু, ভয় দেখানোর কৌশল হিসাবে মাঝে মধ্যে সীমানায় গুলি করে বেসামরিক লোকদের হত্যা করে ভারত বাংলাদেশ সরকারকে চাপের মধ্যে রাখছে।

এসবের মোকাবেলায় অনেকের চোখে বাংলাদেশ সরকারকে দুর্বল ঠেকছে। তারা দেখছে, বাংলাদেশ বিষয়ক ভারতের চাহিদাগুলোকে সরকার দর কষাকষির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে নিজ দেশের পাওনাগুলো বুঝে নিতে পারছে না।বরং ভারত চাওয়া মাত্রই তার চাহিদাগুলো পূরণ করে দিচ্ছে- এর সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক লাভের বিষয় রয়েছে, এ যুক্তি দেখিয়ে।

৮.

প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কিছু ত্রাণ সহায়তা ছাড়া আর কোন প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি। শুরু থেকেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতকে পাশে পায়নি বাংলাদেশ। প্রতিটি আন্তর্জাতিক ফোরামে ভারত হয় মিয়ানমারকে সমর্থন করেছে অথবা ভোট দানে বিরত থেকেছে, যা প্রকারন্তরে মিয়ানমারকে সমর্থনেরই নামান্তর।

ভারত বাংলাদেশকে সমর্থন করলেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এ সমস্যার সমাধানের জন্য বাংলাদেশের দরকার চীন এবং রাশিয়ার সমর্থন। কিন্তু ভারতের সাথে দীর্ঘ ঐতিহাসিক সম্পর্কের ফলে বাংলাদেশ এ আশা করেছিল যে, অন্তত রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের সমর্থন বাংলাদেশ পাবে। কেননা, চীন- রাশিয়ার মতো মিয়ানমারের সাথে ভারত স্ট্র্যাটেজিক ভাবে যুক্ত নয়।

ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসাবে চীন, রাশিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মিয়ানমারকে পাশে চায়। কিন্তু, এরকম কোন বিষয় না থাকা সত্ত্বেও ভারতের বাংলাদেশের পাশে না থাকবার একটাই কারণ- ভারতের বৈদেশিক নীতি প্রণেতারা মনে করেন, প্রতিবেশী দুর্বল রাষ্ট্রসমূহ ক্রমাগত সঙ্কটের মাঝে থাকলে, সেটা তাদের সাথে লেনদেনে ভারতকে সুবিধাজনক অবস্থানে রাখবে।

৯.

দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করলেও, একটি সমঝোতা স্মারকের বিষয় গোপন রাখা হয়েছে। এটি হল উপকূলে সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থা (Coastal Surveillance System—CSS)।

ভারত একটি ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশ। বাংলাদেশও নিজেকে গণতান্ত্রিক দেশ বলে দাবি করে। যেকোন চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক গোপন করা এ গণতান্ত্রিক ধারণার পরিপন্থী। একটি দেশের জনগণের অধিকার রয়েছে তাদের সরকার আরেকটি রাষ্ট্রের সাথে কী চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সেটি জানবার। এ অধিকার ভারত এবং বাংলাদেশ, দুই দেশের জনগণেরই রয়েছে। পাশ্চাত্যের তুলনামূলক বিচারে বিকশিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগূলিতেও এ ধরনের চুক্তি মাঝে মধ্যে গোপন করা হয়। সেটাও গণতান্ত্রিক চেতনার লঙ্ঘন।

১০.

মহিউদ্দিন আহমদ তার ‘জাসদের উত্থান পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি’ গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ৫৬-৫৭) প্রবাসী সরকারের দিল্লি মিশনের প্রধান এবং পরে রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেছেন, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের সাথে ভারত সরকারের এক গোপন চুক্তি হয়েছিল। এ চুক্তিতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের নিজস্ব কোন সেনাবাহিনী থাকবে না। দেশ স্বাধীন হবার পর প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশে অবস্থান করবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব এ চুক্তি অগ্রাহ্য করেন এবং ইন্দিরা গান্ধীর সাথে দেখা করে সৈন্য প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করেন। বস্তুত, এটিই হচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক সাফল্য।

সম্পর্কিত প্রশ্নগুলো

+1 টি ভোট
1 উত্তর
0 টি ভোট
1 উত্তর
0 টি ভোট
3 টি উত্তর
0 টি ভোট
1 উত্তর
14 সেপ্টেম্বর 2019 "বিশ্ব রাজনীতি" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন kajol (2.8k পয়েন্ট)
0 টি ভোট
0 টি উত্তর
03 নভেম্বর 2019 "সাধারণ প্রশ্ন" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Arshaful islam Rubel (61.2k পয়েন্ট)

8.1k টি প্রশ্ন

6.9k টি উত্তর

154 টি মন্তব্য

5.8k জন সদস্য

×

ফেসবুকে আমাদেরকে লাইক কর

Show your Support. Become a FAN!

বাংলাহাব Answers ভাষায় সমস্যা সমাধানের একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। এখানে আপনি আপনার প্রশ্ন করার পাশাপাশি অন্যদের প্রশ্নে উত্তর প্রদান করে অবদান রাখতে পারেন অনলাইনে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য সবথেকে বড় এবং উন্মুক্ত তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলার কাজে।

বিভাগসমূহ

Top Users Nov 2024
  1. Arshaful islam Rubel

    61240 Points

  2. Koli

    60170 Points

  3. Rajdip

    56110 Points

  4. ruhu

    44790 Points

  5. mostak

    18010 Points

  6. হোসাইন শাহাদাত

    17610 Points

  7. Niloy

    13910 Points

  8. puja

    12170 Points

  9. Jannatul1998

    9520 Points

  10. Kk

    5650 Points

সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

বাংলাদেশ জানতে চাই ইতিহাস সাধারণ প্রশ্ন #ইতিহাস প্রথম #বাংলাহাব #জিঙ্গাসা বাংলা বাংলাহাব সাহিত্য ভাষা শিক্ষানীয় কম্পিউটার বিসিএস স্বাস্থ্য অজানা তথ্য কবিতা আবিষ্কার বিশ্ব #আইন নাম সাধারণ জ্ঞান জনক টাকা আয়। ক্রিকেট বিজ্ঞান পৃথিবীর বিশ্বের সাধারন প্রশ্ন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবস্থিত সাধারণ জ্ঞ্যান তথ্য-প্রযুক্তি চিকিৎসা রাজধানী লেখক পৃথিবী সালে কত সালে উপন্যাস কবি শব্দ কতটি প্রতিষ্ঠিত আবেদন প্রযুক্তি ভাষার খেলোয়াড় সদর দপ্তর # ঠিকানা জেলা শিক্ষা বিভাগ বাংলাদেশে ইনকাম ভালোবাসা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মুক্তিযুদ্ধ জাতীয় ভারত ঢাকা অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয় eassy qussion বাংলা সাহিত‍্য নারী bangladesh সংবিধান আয় স্যাটেলাইট বাংলা সাহিত্য করোনা ভাইরাস সংসদ আইকিউ সোস্যাল প্রথম_স্যাটেলাইট ইন্টারনেট অনলাইনে পূর্ব নাম গান #আই কিউ #জনক বঙ্গবন্ধু-১ সর্বোচ্চ #লেখক #প্রোগ্রামিং ফেসবুক ইসলাম সবচেয়ে বড় বি সি এস সমাজ বৈশিষ্ট্য # অর্থ মহিলা নোবেল কখন দেশ দিবস আউটসোর্সিং
...