বাড়তি মেদের সমস্যায় যারা ভুগছেন, তারা স্বভাবতই বিচার বিবেচনা না করেই অনেক মন ভুলানো কথায় প্রভাবিত হয়ে যেনতেনভাবে ওজন কমাতে বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করেন। কিন্তু এভাবে এতদ্রুত ওজন কমানোর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
উল্টো দ্রুত ওজন কমাতে গিয়ে নিজের অজান্তেই নিজের শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে ফেলেন। এটাও মনে রাখতে হবে কেউ কেউ ডায়েট কন্ট্রোল করতে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দেন, এমনকি একেবারেই ছেড়ে দেন, যা সম্পূর্ণ অনুচিত।
মনে রাখতে হবে, ডায়েট কন্ট্রোল করা মানে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করা নয়! এতে প্রয়োজনীয় শক্তির অভাবে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। তাই ঢালাওভাবে সব খাবার বন্ধ না করে, সময়মতো অল্পকিছু হলেও খেতে হবে। মনে রাখতে হবে, দ্রুত বা তাড়াহুড়া করে ওজন কমানো সম্ভব নয়। নিয়মমাফিক ধৈর্য সহকারে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
শুরুতে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে এবং এতে শারীরিক কোনো রোগ শনাক্ত হলে, তার চিকিৎসা নিতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি নিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়া এবং কায়িক পরিশ্রমের সঙ্গে জড়িত। প্রয়োজনের তুলনায় অধিক ভোজন এবং তার ফলেই দেহের অধিক ওজন।
পেটটা অতিরিক্ত খেয়ে ভর্তি না করাই শ্রেয় বরং পেটের কিছুটা অংশ খালি রাখা ভালো। ধর্মীয় দৃষ্টিতেও এর সমর্থন পাওয়া যায় এবং তা বিজ্ঞান ভিত্তিকও বটে। পেটের একাংশ পূর্ণ হবে খাদ্যে, একাংশ পূর্ণ হবে পানিতে এবং একাংশ থাকবে খালি। নিয়মিত খাবার এবং শারীরিক পরিশ্রম, এ দুইয়ের সামঞ্জস্য থাকা খুবই জরুরি।
পরামর্শ : সুষম খাদ্য গ্রহণ করা ভালো যাতে পরিমাণ মতো কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং কম চর্বি থাকে। * অধিক ক্যালরিযুক্ত খাবারের পরিবর্তে কম ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা শ্রেয়। ফলমূল, শাকসবজি বেশি বেশি খাওয়া ভালো, তাতে চর্বি ও শর্করামুক্ত খাবার কম খাওয়া হবে এবং প্রোটিনের চাহিদাও মিটবে। খাদ্য তালিকায় আঁশযুক্ত খাবার, ভিটামিন, মিনারেল এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যেন থাকে।
ফাস্টফুড এবং বাইরের খাবার পরিহার করে ঘরের তৈরি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া ভালো। তবে ভাত কম খাওয়াই উচিত। * ঘি, মাখন, অতিরিক্ত চিনি মিশ্রিত চা, কফি পরিহার করতে হবে। * মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। রাস্তায় বেরুলে অলিতে-গলিতে রকমারি মিষ্টির দোকানে ভর্তি। বাড়িতে মেহমান আপ্যায়নের অন্যতম উপাদান মিষ্টি।
যে কোনো উৎসবে যেমন— সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে, সন্তানের সুন্নতে খতনা করালে, পদোন্নতি পেলে, পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলে, নতুন চাকরি পেলে, বিবাহ উৎসবে মিষ্টির ছড়াছড়ি। তাই নিজের জিহ্বাকে সংযত রাখতে সচেষ্ট হতেই হবে। * বাইরের তৈরি জুস, কোল্ড, হেলথ, এনার্জি বা সফট ড্রিংকস পরিহার করা উচিত। খাওয়ার আগে বেশি পানি খেলে খাওয়ার পরিমাণটা কম লাগবে।
এছাড়াও খাওয়ার আগে শসা, টমেটো, পেয়ারা খেয়ে নিলেও ভাতের পরিমাণ কম লাগবে। * ওজন কমাতে রীতিমতো কাজকর্ম, শারীরিক পরিশ্রম এবং ব্যায়াম করতেই হবে। যে ধরনের ব্যায়াম একজন মানুষের জন্য সহজ এবং সহ্য ক্ষমতার মধ্যে, ততটুকু করলেও চলবে। নিয়মিত হাঁটাচলা, লিফটে না চড়ে সিঁড়ি বেয়ে ওঠা, অল্প দূরত্বে গাড়ি বা রিকশা পরিহার করে হেঁটে চলার অভ্যাস করতে হবে। এগুলো শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করে।
গর্ভকালে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট কন্ট্রোল করা উচিত। মনে রাখতে হবে, ওজন নিয়ন্ত্রণ খুব কঠিন কাজ নয়। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার এবং নিয়মতান্ত্রিক সুশৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হলেই ওজন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। একটি প্রবাদ দিয়ে শেষ করছি— ‘মেদ মাংস বেড়ে যায়, দেহ স্থূল হয়, শ্রমসাধ্য কর্মে তার ধ্রুব পরাজয়।