বইঃ- এই সুরে কাছে দূরে।
লেখক ঃ- বদরুল মিল্লাত।
প্রচ্ছদঃ- ধ্রুব এষ।
মূল্য ঃ- ২০০ টাকা।
' আল্লার হিসাব বুজা বড় কঠিন, বড়ই কঠিন'!
উপন্যাসের শেষ পৃষ্ঠার শেষ কথা দিয়ে শুরু করলাম।
উপন্যাস টা শেষ করার পর বারবার আমাকে শেষের ব্যাপারটা খুব ভাবাচ্ছে।
সব শুরু সুন্দর কিন্তু
সব শেষ ততটাই কষ্টদায়ক।
শেষে এসে এরকম হবে যখন পড়ছি মাথায় একবারও আসে নাই লেখক শেষে এসে ব্যাপারটা এরকম করে দেবে।
অহনা আর রফিকের মিল টা হলো না এটা আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে।
পড়ার পর বারবার শুধু মনে হচ্ছে লেখক কেন এরকম করলো মিলটা কেন দিলেনা?
তারও কারণ আছে তা জানতে আপনাকে পড়তে হবে উপন্যাস টি।
এবার আসি উপন্যাসে,
উপন্যাস টির প্রতিটি চরিত্র আমার কাছে অনেক ভালো লাগলো।
এক একটা চরিত্র লেখক অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
ইব্রাহিম যে ভিক্ষুক কিন্তু তার কথাবার্তায় কখনোই তাকে ভিক্ষুক মনে হয়নি।
তার সব কথা দার্শনিকদের মতো যা লেখক নিজেই উপন্যাসে বলেছেন।
ভিক্ষুক হলেও তার মনে কখনোই এই নিয়ে কোনো আফসোস দেখিনি, বরং সে কত সহজেই সব কিছু আল্লার কথা বলে চালিয়ে যায়।
যেমন তার কথা সে যে ভিক্ষুক হয়েছে এটাও নাকি উপর আল্লাহর একটা উদ্দেশ্য ছিল তাই তাকে ভিক্ষুক করেছে এই নিয়ে তার কোনো দুঃখ নেই।
সচরাচর আমরা দেখি একজন ভিক্ষুক সে ভিক্ষুক হওয়ার পর উপর আল্লাহর উপর দোষারোপ করে কেন তাকে ভিক্ষুক করেছে কিন্তু ইব্রাহিমের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উল্টো।
স্পষ্ট ভাবে উপন্যাসে ফুটে উঠেছে সে খুব ভালো আছে উপর আল্লাহ তাকে তার পরিবার কে খুব ভালো রাখছে।
তিথি মেয়ে টা সত্যি খুব ভালো। যার জন্য ডিপার্টমেন্টের অনেকেই পাগল অথচ সে মনে প্রাণে শুধু আনিস কে ভালোবেসেছিল।
কিন্তু শেষে তিথি আনিসের ভালোবাসা হয়ে উঠতে পেরেছে? তা জানতে হলে উপন্যাসটি পড়তে হবে।
মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আনিস যে অহনার খুব ভালো বন্ধু। অহনার বাবার কাছেও আনিস অনেক ভালো একটা ছেলে। অহনার বাবা প্রতিনিয়ত সাহস যুগিয়েছে আনিস কে সামনে এগিয়ে যাওয়ার।
অহনা যাকে আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগলো। বড়লোকের বাবার একমাত্র মেয়ে অহনা।
অথচ তার মধ্যে বিন্দুমাত্র অহংকার দেখলামনা।
ছোট বড় সবাইকে কত সহজেই আপন করে নেয়।
এতো বড়লোকের সন্তান হয়ে ও অহনা কত সাধারণ সাদামাটা, দয়াশীলা ও মমতাময়ী।
বাবা মেয়ের সম্পর্ক কতটা সুন্দর হয় তা উপন্যাসে খুব ভালো করে তুলে ধরেছেন লেখক।
এতো ভালো একটা মেয়ে শেষমেশ একজন খুনির প্রেমে পড়বে এটা সত্যি অবাক হওয়ার বিষয়।
সাধারণত কোনো বাবা কখনোই পছন্দ করবে না তার মেয়ে কোনো খুনিকে ভালোবাসুক, কিন্তু এখানে অহনা বাবার মেয়ের প্রতি ছিল বিশ্বাসী তাই তো অহনার প্রেমে পড়াকে ওনি খুব সম্মানের সাথে গ্রহণ করেছেন।
রফিক মেধাবী অথচ সমাজে সে কিলার রফিক নামে পরিচিত,
কেন সে এই পথে আসলো তা পড়লে জানতে পারবেন।
ভালো মানুষের ভালোবাসা ফেলে খারাপ মানুষও ভালো হতে চায়।
কিন্তু কিছু মানুষ ভালো হতে চাইলেও সমাজ তাকে ভালো হতে দেয় না, হয় তাকে পৃথিবী থেকে চলে যেতে হবে না হলে সেই একই রকম থাকতে হবে।
অনেক মুখ, অনেক চরিত্র দিয়ে গাঁথা এই উপন্যাস। এখানে রহিমা, ফুলি,তুলি,রহমান সাহেব,রফিক,তিথি, বীথি,অহনা,আনিস সবাই উজ্জ্বল অবস্থান নিয়ে আছে কাহিনীর শেষ অবধি।
প্রিয় কিছু লাইনঃ-
' তুমি আমার কারণে এমনটা ভেবেছ, শুধু সে জন্যই আমার জীবন এখন তুমি ছাড়া আর কারো জন্য নয়। তুমি যদি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে নাও আসো,আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করে থাকবো,'।
"আমি জানি এটা হাস্যকর বা নাটকীয় শোনাবে, কিন্তু তুমি বিশ্বাস করো,আমি সেদিনের পর হলে ফিরে শুধুই ভেবেছি, যদিও সম্ভব নয় জানি, আমি শুধু তোমাকে পাবার জন্য ভালো হয়ে যেতে চাই",।
বইয়ের প্রচ্ছদ নিয়ে কিছু বলতে চাই,
প্রচ্ছদ টা আমার কাছে অনেক ভালো লাগলো। বইয়ের উপরে হাত দিলে আলাদা একটা ভালো লাগা কাজ করে।
একটা পৃষ্টাকে দুই টা পৃষ্ঠার সমান বইয়ের পৃষ্ঠা গুলো কে এরকমই মনে হচ্ছে।
সব মিলিয়ে বইটি এক কথায় অসাধারণ একটা বই।
এখানে পড়তে পড়তে আপনি পাবেন বাস্তবের সাথে মিলে যাওয়ার অনেক কাহিনী।
আমার কাছে অনেক ভালো লাগলো বইটি।
চাইলে আপনিও পড়তে পারেন।