রাজস্ব বিক্রয় আইন যা 'সূর্যাস্ত আইন' নামেও পরিচিত। সূর্যাস্ত আইন ১৭৯৩ সালে প্রণীত হয়। এই আইনটি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সংক্রান্ত আইনসমষ্টির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১৭৯৩ সালের ১৪ নং রেগুলেশনে বিধান করা হয়েছিল যে, রাজস্ব পরিশোধে অক্ষম জমিদারদের জমি প্রকাশ্য নিলামে বিক্রয় করে জমিদারদের বকেয়া রাজস্ব আদায় করা হবে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অধীনে জমি জমিদারদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে পরিগণিত হয়। জমিদারদের প্রবল প্রতিবাদ সত্ত্বেও ১৭৯৩ সালে রাজস্ব বিক্রয় আইন বলবৎ করা হয়। আইনটি কার্যকর হওয়ার সাত বছরের মধ্যেই জমিদারদের ভূ-সম্পত্তির প্রায় অর্ধেক অংশেরই হাত বদল হয়ে যায়। বৃহৎ এলাকার জমিদারগণ এ আইনের ফলে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। আইনটি বলবৎ হওয়ার এক দশকের মধ্যেই রাজশাহী, নদীয়া, বিষ্ণুপুর, দিনাজপুর, রাজনগর, লস্করপুর ও বৃহত্তর বর্ধমান অঞ্চলের জমিদারিসমূহ বিভাজিত হয়ে যায় এবং তাদের ভূমি নতুন ভূমালিকের হাতে চলে যায়। বছরের যেকোন মাসে রাজস্ব বিক্রয় আইন তাদের ধ্বংস করতে পারে, এই ভয়ে মাঝারি ও ছোট জমিদারগণ সব সময়ই তটস্থ ছিলেন। এ আইনে বারো কিস্তি বা দফায় অর্থাৎ মাসে মাসে কর পরিশোধের নিয়ম প্রচলিত ছিল। কোন কিস্তি সময়মতো পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে মাসের শেষে জমিদারি প্রকাশ্য নিলামে বিক্রয় করার বিধান ছিল। কর প্রদানে ব্যর্থ জমিদারদের জমি বিক্রয়ের বিধান এত কড়াকড়ি ও নির্দয়ভাবে প্রয়োগ করা হতো যে, তা সূর্যাস্তের মতোই অপ্রতিরোধ্য ও অবশ্যম্ভাবী ছিল এবং তাতে অনেক বড় বড় জমিদার বংশের পতন তথা বৈভব-সম্পদের সূর্য অস্তমিত হতো। আর এজন্যই লোকে এ আইনকে সূর্যাস্ত আইন নামে আখ্যায়িত করে।