আদি যুগ থেকে মেহেদির সঙ্গে মানুষের পরিচয়। ছেলে ও মেয়ে উভয়ই মেহেদির রং-এ রঙিন হতে ভালবাসে। তবে মেয়েরা অধিক হারে মেহেদি ব্যবহার করে থাকে। এতে তাদের সৌন্দর্য্যও বৃদ্ধি পায়। ছেলেরা মাঝে মধ্যে কোন উৎসবে ব্যবহার করে। কিন্তু মেহেদি পাতা মানব জীবনে অনেক রোগের ক্ষেত্রেও উপকারে আসে। এই পাতার ঔষধি গুণও যে আছে তা আমাদের অনেকেরই জানা নেই।
এবার জেনে নিন মেহেদি পাতার ঔষধি গুণ :
পায়ের জ্বালাপোড়া কমায়
মেহেদি পাতা ভিনেগারে ভিজিয়ে এক জোড়া মোজার ভেতরে রেখে দিন। এবার এই মোজাটি পায়ে সারা রাত পরে থাকুন। এটি পায়ের জ্বালাপোড়া কমিয়ে দিবে অনেকখানি।
টাক পড়া কমায়
কয়েকটি মেহেদি পাতা সরিষার তেলের সঙ্গে দিয়ে জ্বাল দিন। এটি ঠাণ্ডা হয়ে গেলে মাথার তালুতে ব্যবহার করুন। এটি টাক পড়া প্রতিরোধ করবে।
মাথাব্যথা নিরাময় করে
মেহেদি গাছের ফুল মাথাব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। এই ফুল পেস্ট করে এর সঙ্গে ভিনেগার মিশিয়ে নিন। এটি কপালে অথবা ব্যথার স্থানে লাগিয়ে রাখুন। এছাড়া আপনি মেহেদির পেস্টও ব্যবহার করতে পারেন।
চুলকানি বা ঘা শুকাতে সাহায্য করে
মেহেদির পেস্ট পিঠ, ঘাড় এবং ঘামাচি আক্রান্ত অন্যান্য স্থানে লাগান। এটি ঘামাচির চুলকানি এবং জ্বালাপোড়া হ্রাস করতে সাহায্য করে। এই মেহেদি দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন মাউথ ওয়াশ। মেহেদি পাতা গুঁড়ো পানিতে গুলিয়ে নিন। এবার এটি দিয়ে কুলকুচি করুন। এটি মুখের ঘা দ্রুত ভাল করে থাকে এবং মুখ জীবাণুমুক্ত করে তোলে।
খুশকি দূর করে
খুশকি দূর করতে মেহেদি বেশ কার্যকরী। সরিষা তেল, মেথি, মেহেদি পাতা সেদ্ধ একসঙ্গে যোগ করে এটি চুলে ব্যবহার করুন। এক ঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ফেলুন। এটি খুশকি দূর করে চুলকে করবে ঝলমলে সুন্দর।
ক্ষত সারায়
পুরনো ক্ষত, যেগুলো বার বার ফিরে আসে, এসব ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে মেহেদি। মেহেদিপাতা বেটে এরকম ক্ষতে লাগিয়ে রাখুন।
পানি পচা রোগে
সাধারণত নোংরা, জীবাণুযুক্ত পানি লেগে এই রোগ হয়। আবার দীর্ঘক্ষণ পানিতে কাজ করলেও এ রোগ হতে পারে। এতে দুই আঙ্গুলের মাঝের অংশে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এই ক্ষতে মেহেদির প্রলেপ লাগিয়ে রাখলে ঘা ভালো হয়ে যায়।
বয়সের ছাপ দূর করে
বয়সের ছাপ (বলিরেখা) দূর করতেও মেহেদির তুলনা নেই। ভাবছেন ত্বক লাল হয়ে যাবে কি না? মুখের ত্বকে মেহেদি ব্যবহারের নিময়টি পুরো আলাদা। আপনার প্রতিদিনের ফেসপ্যাকে মিশিয়ে নিন কয়েক ফোটা মেহেদি পাতার রস। আর ফেসপ্যাক ১০ মিনিটের বেশি রাখবেন না। নিয়মিত ব্যবহারে বলিরেখা হবে বিলম্বিত।
পা ফাটা
শীতকালে তো পা হরদম ফাটে। তবে কারো কারো বার মাসই পা ফাটার সমস্যা থাকে। এ ছাড়া চামড়া ওঠার সমস্যাও থাকে অনেকের। মেহেদি পাতা বেটে ফাটা জায়গায় পুরু প্রলেপ দিয়ে রাখুন। আধা ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে পা ফাটা প্রতিরোধ হবে।
ঘুমের সমস্যা দূর করে
যে কোন ধরনের ঘুমের সমস্যা যেমন- ইনসোমনিয়া দূর করতে এই পাতা যথেষ্ট উপকারী। প্রতিদিন নিয়ম করে মেহেদি পাতার রস খেলে ঘুমের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
নখের যত্নে
নখ মজবুত ও আকর্ষণীয় করতে মেহেদির জুড়ি নেই। পানিতে কয়েকটি মেহেদি পাতা ভিজিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। পানি হালকা লাল হয়ে আসলে ওই পানি খেয়ে নিতে পারেন।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখে
মেহেদি পাতা হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। মেহেদির রস বা বীজ নিয়মিত খেলে কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম ও রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। এটি ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে হার্ট অ্যাটাক ও স্টোকের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
অধিকাংশ মেহেদি পাতা শরীরের জন্য উপকারী তবে কালো মেহেদি ত্বকের র্যাশ, অ্যালার্জি ও আরও বেশ কিছু সমস্যার উদ্রেক করে থাকে। তাই মেহেদি পাতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।