উত্তর : প্রথম বিশ্ব : প্রথম বিশ্বের ধারণার উদ্ভূত হয় পশ্চিমা বিশ্বের বিশেষ করে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে শীতল যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর প্রথম বিশ্বকে সংজ্ঞায়িত করা হয় যে সব দেশের জীবনযাত্রার মান উচ্চ, অর্থনৈতিক কাঠামো শক্তিশালী, পুঁজিবাদী অর্থনীতি, আইনের শাসন, কার্যকরী গণতন্ত্র বিদ্যমান ও রাজনৈতিক অস্থিরতার ঝুঁকির মধ্যে নেই বললেই চলে সেই সব দেশকে। মানব উন্নয়ন সূচক, শিক্ষার হার, জিপিপি, জিএনপি ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে নির্ণয় হয় কোন দেশগুলো আধুনিক প্রথম বিশ্বের অন্তর্ভুক্ত।সাধারণভাবে, প্রথম বিশ্ব মানে হচ্ছে বিশ্বের ধনী রাষ্ট্রগুলো।
প্রথম বিশ্ব বলতে সেইসব দেশ বা অঞ্চলকেই বোঝায় যারা আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্পে উন্নত ও পুঁজিবাদী বিশ্বের অন্তর্ভুক্ত। অক্সফোর্ড ডিকশনারি অনুসারে, প্রথম বিশ্ব বলতে বোঝানো হয়েছে পশ্চিম ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের অন্তর্ভুক্ত শিল্পোন্নত পুঁজিবাদী দেশসমূহ।
দ্বিতীয় বিশ্ব : সমাজতান্ত্রিক বিশ্বকে তুলনা করেছেন যাজক সম্প্রদায়দের সাথে। স্নায়ুযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পুঁজিবাদী বিশ্বকে প্রথম বিশ্ব বা অভিজাত ও সমাজতান্ত্রিক বিশ্বকে দ্বিতীয় বিশ্ব হিসেবে অভিহিত করা হয়।
তৃতীয় বিশ্ব : ১৯৫২ সালে ফ্রেঞ্চ জনসংখ্যা তাত্ত্বিকবিদ আলফ্রেড সোভে বিপ্লব-পূর্ব ফ্রান্সের তিনটি রাজ্যের অবস্থা্র প্রেক্ষিতে তৃতীয় বিশ্ব নামটি উল্লেখ করেছিলেন। প্রথম দুই এস্টেট হচ্ছে অভিজাত ও যাজকগোষ্ঠীর এবং বাকি সব হচ্ছে তৃতীয় এস্টেটের অন্তর্ভুক্ত। তিনি পুঁজিবাদী বিশ্বকে (প্রথম বিশ্ব) অভিজাত ও সমাজতান্ত্রিক বিশ্বকে (দ্বিতীয় বিশ্ব) তুলনা করেছেন যাজক সম্প্রদায়দের সাথে; আর বাকিদের তৃতীয় বিশ্বের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। সোভে তৃতীয় বিশ্বকে দেখিয়েছেন যে সব দেশ শীতল যুদ্ধে জড়ায় নি বা পূর্ব-পশ্চিম দ্বন্দ্বে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে নি। With the coining of the term Third World directly, the first two groups came to be known as the "First World" and "Second World" respectively. Here the three-world system emerged.
মাও ঝে ডং-এর আমলে চীন এই তৃতীয় বিশ্ব (Third World) তত্ত্ব জনপ্রিয় হয়। এই তত্ত্বানুযায়ী দুই পরাশক্তি ও উন্নত পুঁজিবাদী দেশসমূহকে নিয়েই প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্ব। আর এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার অনুন্নত দেশসমূহকে নিয়েই গঠিত তৃতীয় বিশ্ব। তৃতীয় বিশ্বের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত পশ্চাৎপদতা এবং দারিদ্র্য।
চতুর্থ বিশ্ব : ম্যানুয়েল গাভিলান এবং মাইকেল পোসলানস বিশ্বাস করতেন 'তিন বিশ্ব মডেল' সেকেলে হয়ে যাবে। ১৯৭৪ সালে তাদের বই The Fourth World: An Indian Reality তে তিনি চতুর্থ বিশ্বের ধারণা দিয়েছেন। সেখানে চতুর্থ বিশ্ব বলতে সেই আদিবাসী জনগণের জাতিগুলোকে--সাংস্কৃতিক বা নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী—বোঝানো হয়েছে যাদের সাধারণ বাস্তবতায় কোনো রাষ্ট্র নেই। বরং তারা একটি দেশের ভিতরে বা বহুদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করে। উদাহরণস্বরূপ, রেড ইন্ডিয়ান বা আদিবাসী আমেরিকানরা উত্তর আমেরিকা, মধ্য আমেরিকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।
তবে জাতিসংঘ কিছু দিন পূর্বে বিশ্বের দরিদ্রতম ও অনুন্নত দেশসমূহকে চতুর্থ বিশ্ব বলে চিহ্নিত করেছে।