❑❑ আবুবকর মারি তামবাদু (Abubacarr Marie Tambadou), জন্ম ১২ ডিসেম্বর ১৯৭২ ইং, গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল। Ba Tambadou হল তার ডাকনাম।
তিনি মিয়ানমারে বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যা বা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার মূল উদ্যোক্তা। ব্রিটেনে আইন বিষয়ে শিক্ষা লাভ করে গত শতকের শেষ দিকে গাম্বিয়া ফিরে আইন পেশায় যোগ দেন আবুবকর। ২০০০ সালে একটি ঘটনা আবুবকরের চিন্তার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ওই বছর ১৪ জন শিক্ষার্থীকে রাজপথে হত্যা করে সরকারি বাহিনী। এরপরই আবুবকর মানবাধিকার নিয়ে কাজ শুরু করেন। ২০০৩ সালে জাতিসংঘে যোগ দিয়ে তানজানিয়ায় রুয়ান্ডা গণহত্যার বিচারে কৌঁসুলি হিসেবে অংশ নেন। বলা হয়ে থাকে, আবুবকরের কৌশলী ও দৃঢ় ভূমিকার কারণে সাবেক সেনাপ্রধান আউগুস্টিন বিজিমুনিগোর ৩০ বছরের কারাদণ্ড হয়।
২০১৮ সালে ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ঢাকা বৈঠকে গাম্বিয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে না পাঠিয়ে শেষ মুহূর্তে বিচারবিষয়ক মন্ত্রী আবুবকর তামবাদুকে পাঠায়। আবুবকর ওআইসির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। দেশে ফিরে গিয়ে গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আবুবকর জানান, ‘রোহিঙ্গাদের প্রতিটি কথায় গণহত্যার কাহিনি লেখা আছে। আমি এখানে রুয়ান্ডার গণহত্যার সঙ্গে মিল খুঁজে পাই।’ রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার জন্য আবুবকর ওইআইসিতে প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং এই বছর ওআইসিকে মামলায় সহযোগিতা করতে সম্মত করেন। এভাবেই আবুবকর পশ্চিম আফ্রিকার এক ক্ষুদ্র দেশ গাম্বিয়াকে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সামনে নিয়ে আসেন।
গত তিন বছরে অনেকটাই বদলে গেছে গাম্বিয়া। ২২ বছরের শাসনামলে গাম্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াহইয়া জামেহ বিরোধীমত দমন করে এক ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন। হত্যা, গুম, আটক করে নির্যাতন নিত্যকার ঘটনা ছিল গাম্বিয়াবাসীর জীবনে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে সবাইকে চমকে দিয়ে আদম ব্যারো প্রেসিডেন্ট ইয়াহইয়া জামেহকে পরাজিত করেন। এরপরই গাম্বিয়ার পরিস্থিতি বদলে যেতে থাকে। পরবর্তীতে নতুন সরকার ট্রুথ কমিশন গঠন করলে ইয়াহইয়ার আমলের অনেক কুকীর্তি বেরিয়ে আসে। আর রুয়ান্ডা গণহত্যা বিচারের অভিজ্ঞতা আবুবকরকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা করতে সাহস জুগিয়েছে। অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ছিল এটা। আবুবকর প্রমাণ করে দিলেন, একজন ব্যক্তিই ইতিহাসে ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন।