কেন পাল্টে যাচ্ছে আগ্রা’র নাম?
**********************************
ইলাহাবাদ, ফৈজাবাদের পর এ বার ঐতিহাসিক স্থান আগ্রার নাম বদলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার জন্যে অম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের দ্বারস্থ হয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার।
পৃথিবীর বিখ্যাত স্থাপনা তাজমহল । আর তাজমহলের কারনে বিখ্যাত হয়ে আছে আগ্রা । একারনে সবাই আগ্রার তাজমহল বলে ঐতিহাসিক স্থাপনার সঙ্গে ঐতিহানিক নামটিকেও পৃথিবীর জনপ্রিয় স্থান হিসেবে পরিচিত করেছেন। এবার সেই ঐতিহাসিক স্থানের নাম বদলে দিচ্ছে বিজেপি সরকার।আগ্রার পরিবর্তে রাখা হচ্ছে অগ্রবন।
ক্ষমতায় আসার পরে নানা জায়গার নাম পরিবর্তন করেছে বিজেপির যোগী আদিত্যনাথের সরকার। মুঘলসরাই রেল স্টেশনের নাম হয়েছে দীনদয়াল উপাধ্যায় স্টেশন। ইলাহাবাদের নাম হয়েছে প্রয়াগরাজ। ফৈজাবাদ জেলার নাম হয়েছে অযোধ্যা। এ বার পালা আগ্রার । কিন্তু কেন হঠাৎ এই প্রাচীন শহরের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব?
এর জবাবও দিয়ে রেখেছেন যোগী সরকার। তারা মুলত তাজমহলকে মন্দির বানাতে চাচ্ছেন।তাই তাজমহলকে মন্দির বানানোর আগে তাজমহলের সঙ্গে বিখ্যাত নামটিকে আগে পরিবর্তন করাকে জরুরী মনে করা হচ্ছে।
তাজমহল নিয়ে উগ্র হিন্দুদের দাবি হল, ‘‘তাজমহল আসলে তাজমহল নয়। ওটা শিবের মন্দির। আসল নাম তেজো মহালায়া। ওটা মুসলিমদের তৈরি সৌধ নয়, বরং প্রাচীনকালে হিন্দুদের তৈরি শিব মন্দির ।
সম্প্রতি শিব সেনার আগ্রা শহর কমিটির সভাপতি ভিনু লাভানিয়া হুমকি দিয়ে বলেছেন, 'তাজমহল কোনও মুসলিম সৌধ নয়। এটা তেজো মহালয়া, ভগবান শিবের মন্দির। আমরা গোটা শ্রাবণ মাসজুড়ে প্রতি সোমবার তাজমহলে ঢুকে যজ্ঞ এবং পুজো করতে চাই।'
এর আগে তাজমহলের মসজিদে নামাজ পড়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ (এএসআই) এর বরাতে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছিল, এখন থেকে তাজমহলের মসজিদে শুক্রবার ছাড়া অন্যকোনো দিন দর্শনার্থীরা নামাজ পড়তে পারবেন না। আর শুক্রবার যে নামাজ পড়া যাবে, তাতে শুধু স্থানীয়রাই অংশ নিতে পারবেন।
এএসআই বলছে, তাজমলের নিরাপত্তার স্বার্থে এর মসজিদে অভারতীয়রা শুক্রবারের নামাজ পড়তে পারবে না বলে গত ২০১৮ সালের জুলাইয়ে স্থানীয় প্রশাসন যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, তা বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্ট। তারা সুপ্রিম কোর্টের রায় বাস্তবায়ন করেছে মাত্র।
আগ্রার স্থায়ী বাসিন্দারা অবশ্য বলছেন, আগ্রার প্রাচীন নাম ছিল ‘আকবরবাদ’। আকবরের আমলে এই শহরটি এই নামে পরিচিত ছিল বলে মনে করেন তাঁরা।
আগ্রার টুরিস্ট গাইডরা নাম পরিবর্তনের বিষয়টিতে আদৌ খুশি নন। তাঁরা বলছেন, গোটা পৃথিবীই তাজমহলের কারণে এই শহরকে ‘আগ্রা’ নামেই চেনে। রাতারাতি নাম বদলে ব্যবসায়ে ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, অম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগকে এই নামের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনার জন্যে অনুরোধ করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। অম্বেডকর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সুগম আনন্দ বলেছেন, ‘‘আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে আগ্রার নামকরণের ইতিহাস সম্পর্কে। আমরা সেই ব্যাপারে কাজও শুরু করেছি। খুব শীঘ্রই রিপোর্ট পেশ করব আমরা।’’
যোগী সরকারেরই একাংশ বলছে, এলাকার অনেকের বিশ্বাস, অতীতে এই শহরের নাম ছিল অগ্রবন। যোগী সরকার চায়, সেই নামেই এই শহরকে ফের ডাকা হোক। এই কারণেই ইতিহাসবিদদের শরণাপন্ন হয়েছে তারা।
~~~~~~~~~~~~~~