জেলহত্যা ট্র্যাজেডি সম্পর্কে জানতে চাই - বাংলাহাব Answers - বাংলায় প্রশ্ন উত্তর সাইট
বাংলাহাব Answers ওয়েব সাইটে স্বাগতম । যদি আপনি আমাদের সাইটে নতুন হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের ওয়েব সাইটে রেজিষ্ট্রেশন করে আমাদের সদস্য হয়ে যেতে পারবেন। আর যেকোন বিষয়ে প্রশ্ন করা সহ আপনার জানা বিষয় গুলোর প্রশ্নের উত্তর ও আপনি দিতে পারবেন। তাই দেরি না করে এখনি রেজিষ্ট্রেশন করুন। ধন্যবাদ
0 টি ভোট
"বাংলাদেশ" বিভাগে করেছেন (56.1k পয়েন্ট)

2 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (60.2k পয়েন্ট)
##জেলহত্যা ট্র্যাজেডি

★★জেলহত্যা দিবসের স্মৃতিকথা

যেদিন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়, সেদিন আমি ময়মনসিংহ কারাগারে বন্দি। ভয়ংকর-বিভীষিকাময় দুঃসহ জীবন তখন আমাদের। ময়মনসিংহ কারাগারের কনডেম সেলে ফাঁসির আসামিকে যেখানে রাখা হয়, সেখানেই আমাকে রাখা হয়েছিল।

 সহকারাবন্দি ছিলেন ‘দি পিপল’ পত্রিকার এডিটর জনাব আবিদুর রহমান; যিনি ইতিমধ্যে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন। আমরা দু’জন দুটি কক্ষে ফাঁসির আসামির মতো জীবন কাটিয়েছি।

হঠাৎ খবর এলো, কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। কারাগারের সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। কারারক্ষীরা সতর্ক। ময়মনসিংহ কারাগারের জেল সুপার ছিলেন শ্রী নির্মলেন্দু রায়। চমৎকার মানুষ ছিলেন তিনি। কারাগারে আমরা যারা বন্দি ছিলাম- আমাদের প্রতি তিনি ছিলেন সহানুভূতিশীল। বঙ্গবন্ধুও তাকে খুব স্নেহ করতেন। বঙ্গবন্ধু যখন বারবার কারাগারে বন্দি ছিলেন, নির্মলেন্দু রায় তখন কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুকে দেখেছেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী হয়ে নির্মলেন্দু রায়কে কাছে টেনে সবসময় আদর করতেন।

সেদিন গভীর রাতে হঠাৎ নির্মলেন্দু রায় আমার সেলে এসে বলেন, ‘ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মিস্টার ফারুক (তিনি এখন প্রয়াত) আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এত রাতে কেন? তিনি বললেন, ‘ঢাকা কারাগারে আপনাদের প্রিয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা কারাগারের চতুর্দিক পুলিশ দ্বারা বেষ্টন করে রেখেছি, জেল পুলিশ ঘিরে রেখেছে। এসপি সাহেব এসেছেন আপনাকে নিয়ে যেতে।’ আমি বললাম, না, এভাবে তো যাওয়ার নিয়ম নাই।

আমাকে যদি হত্যাও করা হয়, আমি এখান থেকে এভাবে যাব না। পরবর্তীকালে শুনেছি, সেনাবাহিনীর একজন মেজর সেই জেলখানার সামনে এসে কারাগারে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু নির্মলেন্দু রায় বলেছিলেন, ‘আমি অস্ত্র নিয়ে কাউকে কারাগারে প্রবেশ করতে দেব না।’

 কারাগারের চারপাশে সেদিন যারা আমাকে রক্ষার জন্য ডিউটি করছিলেন, তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের আমার সহপাঠী জনাব ওদুদ (আমরা একসঙ্গে এমএসসি পাস করেছি এবং দেশ স্বাধীনের পর ’৭৩-এ যিনি সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেছিলেন) নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কারাগারকে রক্ষার জন্য। আমি নির্মলেন্দু রায় এবং ওদুদের কাছে ঋণী।

সেখানে আমার ওপর অকথ্য নির্যাতন করা হয়। পরবর্তী সময়ে জেনারেল শফিউল্লাহ এবং প্রয়াত ব্রিগেডিয়ার শাফায়াত জামিল (তিনি তখন ঢাকার ব্রিগেড কমান্ডার)- তাদের প্রচেষ্টায় রেডিও স্টেশন থেকে আমাকে বাড়িতে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। মায়ের কথা খুব মনে পড়ে। আমাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার সময় মা বেহুঁশ হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। মায়ের শরীরের ওপর দিয়েই আমায় টেনে নিয়েছিল ঘাতকের দল। 

পরদিন শাফায়াত জামিল এবং মেজর এম সাখাওয়াত হোসেন (পরবর্তী সময়ে নির্বাচন কমিশনার) আমার গৃহবন্দি অবস্থায় বাসায় এসে আমার সঙ্গে অনেক কথা বলেন। আমার ওপর যে অমানুষিক নির্যাতন হয়েছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাফায়াত জামিল নিজের লেখা বইতে সেসব উল্লেখ করেছেন।

পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের ডিআইজি জনাব ই এ চৌধুরীর মাধ্যমে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শ্রদ্ধেয় নেতা জিল্লুর রহমান এবং আমাকে বঙ্গভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে খুনি খন্দকার মোশতাক আমাদের ভয়ভীতি দেখান এবং বলেন, যদি তাকে সহযোগিতা না করি তাহলে তিনি আমাদের রক্ষা করতে পারবেন না। আমি উত্তর দিয়েছিলাম, আমাদের আপনার রক্ষা করতে হবে না।

 আমাদের ওপর যে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল, তা উপেক্ষা করে আমরা খুনি মোশতাকের সব প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। আগস্টের ২২ তারিখ জাতীয় চার নেতাসহ আমাদের অনেক বরেণ্য নেতাকে গ্রেফতার করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়েছিল হত্যা করার জন্য। যে কোনো কারণেই হোক ঘাতকের দল শেষ পর্যন্ত হত্যা করেনি। পরে নেতাদের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

গৃহবন্দি অবস্থা থেকে একদিনে আমাকে, জিল্লুর রহমান ও আবদুর রাজ্জাককে গ্রেফতার করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কোণে অবস্থিত পুলিশ কন্ট্রোলরুমে ৬ দিন বন্দি রেখে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছিল। পুলিশ কন্ট্রোলরুম থেকে খুনিচক্র আমাকে রেডিও স্টেশনে নিয়ে চোখ বাঁধা অবস্থায় হাত-পা চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে নির্মম নির্যাতন করে অর্ধমৃত অবস্থায় পুনরায় পুলিশ কন্ট্রোলরুমে রেখে আসে। 

পরদিন সিটি এসপি আবদুস সালাম ডাক্তার এনে আমার চিকিৎসা করান। পরে আমাকে ও আবিদুর রহমানকে ময়মনসিংহ কারাগারে এবং জিল্লুর রহমান ও প্রিয়নেতা রাজ্জাক ভাইকে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো হয়।

ময়মনসিংহে কারারুদ্ধকালে জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডের দুঃসংবাদটি শুনেই মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতীয় চার নেতার কত অবদান- স্মৃতির পাতায় তার কত কিছুই আজ ভেসে ওঠে। দল পুনরুজ্জীবনের পর ’৬৪তে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু পুনরায় সাধারণ সম্পাদক এবং তাজউদ্দীন আহমদ সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন।

 ’৬৬-এর ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে যে সর্বদলীয় নেতৃসম্মেলনে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন, সেই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাজউদ্দীন ভাই যোগদান করেন। বঙ্গবন্ধু ছয় দফা দেয়ার পর ফেব্রুয়ারির ১৮, ১৯ ও ২০ তারিখ হোটেল ইডেনে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সভাপতি, তাজউদ্দীন আহমদ সাধারণ সম্পাদক, সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রথম সহ-সভাপতি, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী অন্যতম সহ-সভাপতি এবং এএইচএম কামরুজ্জামান নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

বঙ্গবন্ধু যোগ্য লোককে যোগ্য স্থানে বসাতেন। সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাজউদ্দীন আহমদ পরম নিষ্ঠার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন। বঙ্গবন্ধু সারা বাংলাদেশে ছয় দফার সমর্থনে জনসভা করেন এবং যেখানেই যান সেখানেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। খুলনায় জনসভা শেষে তাকে গ্রেফতার করা হয়; সিলেটে জনসভা, সেখানেও গ্রেফতার; ময়মনসিংহে গেলেন, গ্রেফতার হলেন। 

কিন্তু লাগাতার গ্রেফতার-নির্যাতন চালিয়েও আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুকে দমাতে পারেনি। অবশেষে ৮ মে নারায়ণগঞ্জের জনসভা শেষে ধানমণ্ডির বাসভবনে ফেরামাত্রই তথাকথিত ‘পাকিস্তান রক্ষা আইন’-এ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাজউদ্দীন ভাইসহ আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মী কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন।

এর প্রতিবাদে আমরা ’৬৬-এর ৭ জুন হরতাল পালন করেছিলাম। সফল হরতাল পালন শেষে এক বিশাল জনসভায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম যে ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়েছিলেন, তা আজও আমার কানে বাজে। বাঙালির ছয় দফা তথা স্বাধিকার কর্মসূচি বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে অপূর্ব সুন্দর বক্তৃতা করেছিলেন।

 তিনি ছিলেন অনলবর্ষী বক্তা, তাজউদ্দীন আহমদ দক্ষ সংগঠক এবং কামরুজ্জামান সাহেব পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের এমএনএ হিসেবে পার্লামেন্টে প্রদত্ত ঐতিহাসিক ভাষণে বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণের তথা স্বাধিকারের দাবি তুলে ধরতেন। ’৬৮তে কারাগারে থাকা অবস্থাতেই তাজউদ্দীন ভাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে পুনর্নির্বাচিত হন। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের ফলেই তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।

’৬৯-এর গণআন্দোলনের সময় দলের শীর্ষ নেতারা কারাগারে বন্দি ছিলেন; তবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাইরে ছিলেন। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে মরহুম আহমেদুল কবীরের বাসভবনে Democratic Action Committee সংক্ষেপে DAC-এর সভা চলছিল। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে ১১ দফা দাবি নিয়ে জাতীয় নেতাদের কাছে গিয়েছিলাম। 

আমি যখন ১১ দফা কর্মসূচি ব্যাখ্যা করছি, তখন ন্যাপ নেতা মাহমুদুল হক কাসুরি ১১ দফা কর্মসূচি সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, ‘তোমরা ১১ দফা কর্মসূচিতে শেখ মুজিবের ৬ দফা হুবহু যুক্ত করেছো। সুতরাং তোমাদের ১১ দফা সমর্থনে প্রশ্ন আসবে।’

তার এই বক্তব্যের পর বলেছিলাম- আমরা বাঙালিরা কিভাবে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হয়, তা জানি। আপনারা সমর্থন না করলেও এই ১১ দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রিয়নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে কারাগার থেকে মুক্ত করব। আমার এই দৃপ্ত উচ্চারণের পর সৈয়দ নজরুল ইসলাম আমায় বুকে টেনে পরমাদরে বলেছিলেন, ‘তোমার বক্তব্যে আমি আনন্দিত ও গর্বিত।’ আজ সেসব কথা ভাবলে চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ে।

’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ এবং কামরুজ্জামান সাহেব পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে কে কোন পদে পদায়িত হবেন, বঙ্গবন্ধু তা নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। ’৭০-এর নির্বাচনে আমি মাত্র ২৭ বছর বয়সে এমএনএ নির্বাচিত হয়েছিলাম। 

’৭১-এর ২৩ ফেব্রুয়ারি পার্লামেন্টারি পার্টির মিটিংয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় পরিষদ নেতা, সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপনেতা, তাজউদ্দীন আহমদ পার্লামেন্টারি পার্টির নেতা এবং কামরুজ্জামান সাহেব সচিব, চিফ হুইপ পদে ইউসুফ আলী এবং হুইপ পদে যথাক্রমে আবদুল মান্নান এবং ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম নির্বাচিত হন। আর প্রাদেশিক পরিষদে নেতা নির্বাচিত হন ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী।

 ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে সর্বাত্মক স্বাধীনতা ঘোষণার পর শুরু হয় অসহযোগের দ্বিতীয় পর্ব। বিশ্বে এমন অসহযোগ কখনও দেখেনি কেউ। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার নেতৃত্বে গঠিত আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড সুচারুরূপে পরিচালনা করেছেন অসহযোগের প্রতিটি দিন।

আমাদের প্রয়াত নেতা খুলনার মোহসীন সাহেবের লালমাটিয়ার বাসভবনে বসে আমরা কত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালেই বঙ্গবন্ধু ঠিক করে রেখেছিলেন, আমরা কে কোথায় গেলে কী সাহায্য পাব। ’৭১-এর ১৮ ফেব্রুয়ারি আমাদের চারজনকে বঙ্গবন্ধু ডেকে পাঠালেন ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে।

 সেখানে জাতীয় চার নেতাও ছিলেন। বঙ্গবন্ধু আমাদের বললেন, ‘পড়ো, মুখস্থ করো।’ আমরা মুখস্থ করলাম একটি ঠিকানা- ‘সানি ভিলা, ২১ রাজেন্দ্র রোড, নর্দান পার্ক, ভবানীপুর, কলকাতা।’

বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এখানেই হবে তোমাদের জায়গা। ভুট্টো-ইয়াহিয়া ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। পাকিস্তানিরা বাঙালিদের ক্ষমতা দেবে না। আমি নিশ্চিত, ওরা আক্রমণ করবে। আক্রান্ত হলে এটাই হবে তোমাদের ঠিকানা। এখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করবে।’ বঙ্গবন্ধু সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। সদ্য নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য চিত্তরঞ্জন সুতারকে তিনি আগেই কলকাতায় পাঠিয়েছিলেন। ডাক্তার আবু হেনা প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য। বঙ্গবন্ধু তাকে আগেই পাঠিয়েছিলেন অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে।

সেই পথেই ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, কামরুজ্জামান সাহেব, মণি ভাই এবং আমাকে আবু হেনা সাহেব নিয়ে গিয়েছিলেন। কলকাতার এই রাজেন্দ্র রোডেই আমরা অবস্থান করতাম। আর ৮নং থিয়েটার রোডে অবস্থান করতেন আমাদের জাতীয় চার নেতা। নেতাদের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ হতো।

 মুক্তিযুদ্ধের এক পর্যায়ে মুজিব বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীন বাংলার প্রথম সরকারের ভুল বোঝাবুঝির চেষ্টা করা হয়েছিল। জাতীয় নেতাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সব ভুল বোঝাবুঝি দূর করে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে প্রিয় মাতৃভূমিকে আমরা স্বাধীন করেছি।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখব, স্বাধীনতা ঘোষণার পর যখন বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়, তখন জাতীয় চার নেতাই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অপূর্ব দক্ষতার সঙ্গে স্বাধীন বাংলার প্রথম সরকার পরিচালনা করেন ও বিজয় ছিনিয়ে আনেন। ’৭১-এর ১০ এপ্রিল মুজিবনগরে ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ’ গঠন করে সেই পরিষদে ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ অনুমোদন করে তারই ভিত্তিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ গঠন করেন।

প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং উপরাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম। সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী অর্থমন্ত্রী এবং এএইচএম কামরুজ্জামান স্বরাষ্ট্র ও পুনর্বাসনবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করেন এবং পরম নিষ্ঠার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর প্রিয় মাতৃভূমিকে হানাদার মুক্ত করেন।

 প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে আমি বর্ডারে বর্ডারে ঘুরেছি, রণাঙ্গনে ও মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে গেছি। একসঙ্গে কাজ করেছি। আমি থাকতাম কলকাতায় মুজিব বাহিনীর হেডকোয়ার্টার ব্যারাকপুরে, মণি ভাই আগরতলায়, সিরাজ ভাই বালুর ঘাটে আর রাজ্জাক ভাই মেঘালয়ে। মেজর জেনারেল ওবানের নেতৃত্বে দেরাদুনে ছিল আমাদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। মুজিব বাহিনীর জন্য ভারত সরকারের যত সাহায্য-সহযোগিতা; সেসব আমার কাছে আসত। আমি আবার সেগুলো এই তিন নেতার কাছে পাঠিয়ে দিতাম।

দেশ স্বাধীনের পর ’৭১-এর ১৮ ডিসেম্বর কলকাতা থেকে একটি বিশেষ হেলিকপ্টারে আমি এবং রাজ্জাক ভাই বিজয়ীর বেশে প্রিয় মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন করি। ২২ ডিসেম্বর জাতীয় চার নেতা ফিরে এলেন। আর ৯ মাস ১৪ দিন কারারুদ্ধ থাকার পর পাকিস্তানের জিন্দানখানা থেকে মুক্ত হয়ে বিজয়ের পরিপূর্ণতায় জাতির পিতা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন ’৭২-এর ১০ জানুয়ারি। ’৭১-এর ডিসেম্বরের ২২ তারিখ শত্রুমুক্ত স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত সরকারের নেতাদের তথা জাতীয় চার নেতাকে আমরা বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাই।

’৭২-এর ১১ জানুয়ারি তাজউদ্দীন আহমদের বাসভবনে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনা বিষয়ে সব পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরে যাবেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন বঙ্গবন্ধু স্বয়ং; সৈয়দ নজরুল ইসলাম শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী; তাজউদ্দীন আহমদ অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী; ক্যাপ্টেন মনসুর আলী যোগাযোগমন্ত্রী এবং এএইচএম কামরুজ্জামান সাহেব ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল, ১৪ জানুয়ারি প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হওয়ার। মাত্র ২৯ বছর বয়সে আমি মন্ত্রীর পদমর্যাদা পেলাম। সেই থেকে বঙ্গবন্ধুর কাছে থেকেছি শেষদিন পর্যন্ত।
0 টি ভোট
করেছেন (61.2k পয়েন্ট)

জেলহত্যা দিবস 

1975 এর 3 নভেম্বর ভোররাতে জাতীয় চার নেতা

01.সৈয়দ নজরুল ইসলাম, 

02.তাজউদ্দীন আহমদ, 

03.এএইচএম কামরুজ্জামান 

04.এম মনসুর আলী

কারাভ্যন্তরে যেভাবে তাদের হত্যা করা হয়, এমন পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনও ঘটেনি।

সম্পর্কিত ছবি

সম্পর্কিত প্রশ্নগুলো

0 টি ভোট
1 উত্তর
17 মার্চ 2020 "বাংলাদেশ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Rajdip (56.1k পয়েন্ট)
0 টি ভোট
1 উত্তর
17 মার্চ 2020 "বাংলাদেশ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Rajdip (56.1k পয়েন্ট)
0 টি ভোট
1 উত্তর
17 মার্চ 2020 "বাংলাদেশ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Rajdip (56.1k পয়েন্ট)
0 টি ভোট
1 উত্তর
14 মার্চ 2020 "বাংলাদেশ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Koli (60.2k পয়েন্ট)
0 টি ভোট
1 উত্তর
14 মার্চ 2020 "বাংলাদেশ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Koli (60.2k পয়েন্ট)

8.1k টি প্রশ্ন

6.9k টি উত্তর

154 টি মন্তব্য

5.8k জন সদস্য

×

ফেসবুকে আমাদেরকে লাইক কর

Show your Support. Become a FAN!

বাংলাহাব Answers ভাষায় সমস্যা সমাধানের একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। এখানে আপনি আপনার প্রশ্ন করার পাশাপাশি অন্যদের প্রশ্নে উত্তর প্রদান করে অবদান রাখতে পারেন অনলাইনে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য সবথেকে বড় এবং উন্মুক্ত তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলার কাজে।

বিভাগসমূহ

Top Users Nov 2024
  1. Arshaful islam Rubel

    61240 Points

  2. Koli

    60170 Points

  3. Rajdip

    56110 Points

  4. ruhu

    44790 Points

  5. mostak

    18010 Points

  6. হোসাইন শাহাদাত

    17610 Points

  7. Niloy

    13910 Points

  8. puja

    12170 Points

  9. Jannatul1998

    9520 Points

  10. Kk

    5650 Points

সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

বাংলাদেশ জানতে চাই ইতিহাস সাধারণ প্রশ্ন #ইতিহাস প্রথম #বাংলাহাব #জিঙ্গাসা বাংলা বাংলাহাব সাহিত্য ভাষা শিক্ষানীয় কম্পিউটার বিসিএস স্বাস্থ্য অজানা তথ্য কবিতা আবিষ্কার বিশ্ব #আইন নাম সাধারণ জ্ঞান জনক টাকা আয়। ক্রিকেট বিজ্ঞান পৃথিবীর বিশ্বের সাধারন প্রশ্ন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবস্থিত সাধারণ জ্ঞ্যান তথ্য-প্রযুক্তি চিকিৎসা রাজধানী লেখক পৃথিবী সালে কত সালে উপন্যাস কবি শব্দ কতটি প্রতিষ্ঠিত আবেদন প্রযুক্তি ভাষার খেলোয়াড় সদর দপ্তর # ঠিকানা জেলা শিক্ষা বিভাগ বাংলাদেশে ইনকাম ভালোবাসা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মুক্তিযুদ্ধ জাতীয় ভারত ঢাকা অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয় eassy qussion বাংলা সাহিত‍্য নারী bangladesh সংবিধান আয় স্যাটেলাইট বাংলা সাহিত্য করোনা ভাইরাস সংসদ আইকিউ সোস্যাল প্রথম_স্যাটেলাইট ইন্টারনেট অনলাইনে পূর্ব নাম গান #আই কিউ #জনক বঙ্গবন্ধু-১ সর্বোচ্চ #লেখক #প্রোগ্রামিং ফেসবুক ইসলাম সবচেয়ে বড় বি সি এস সমাজ বৈশিষ্ট্য # অর্থ মহিলা নোবেল কখন দেশ দিবস আউটসোর্সিং
...