পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় (১৯৭৫) সম্পর্কে জানতে চাই - বাংলাহাব Answers - বাংলায় প্রশ্ন উত্তর সাইট
বাংলাহাব Answers ওয়েব সাইটে স্বাগতম । যদি আপনি আমাদের সাইটে নতুন হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের ওয়েব সাইটে রেজিষ্ট্রেশন করে আমাদের সদস্য হয়ে যেতে পারবেন। আর যেকোন বিষয়ে প্রশ্ন করা সহ আপনার জানা বিষয় গুলোর প্রশ্নের উত্তর ও আপনি দিতে পারবেন। তাই দেরি না করে এখনি রেজিষ্ট্রেশন করুন। ধন্যবাদ
0 টি ভোট
"বিসিএস" বিভাগে করেছেন (56.1k পয়েন্ট)

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (60.2k পয়েন্ট)
নাট্যকথনঃ সৈয়দ শামসুল হক (১৯৩৫ - ২০১৬)।

আজকের নাটকঃ পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় (১৯৭৫)

রচনা ও পূর্বকথাঃ ১৯৫১ সালে 'ফজলে লোহানী' সম্পাদিত 'অগত্যা' পত্রিকায় 'উদয়াস্ত' নামক গল্প প্রকাশিত হলে পাঠক সমাজের কাছে লেখক হিসেবে প্রকাশিত হন সৈয়দ শামসুল হক। তবে এর পরে তার লেখনি থেকে নাটক পেতে আমাদের অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ দুই যুগ। পেশাগত জীবনে ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত বিবিসি বাংলা'র প্রযোজক হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে তিনি লন্ডনে অবস্থান করেন। আর এই সময়ে ১৯৭৫ সালের মে-জুন মাসে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড শহরে বসে লেখক রচনা করেন তার প্রথম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সফল নাটক 'পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়'। গঠন ও রচনাশৈলীতে এটি একটি সফল কাব্যনাট্য। 

উপজীব্যঃ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এদেশের মানুষ তিনটি স্পষ্ট শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে যায়। একদল স্বাধীনতার কামনায় মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েন। একদল পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের সমর্থন করে এবং তাদের নানা কাজে সহযোগিতা করে এবং শেষদল, অনেকটা নদীর স্রোতের ন্যায় প্রভাবকের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সময়ে সময়ে গতিপথ পরিবর্তন করেন। সৈয়দ শামসুল হক তার এই নাটকে মূলত শেষোক্ত দুই পক্ষকে নিয়ে কাব্যের ঢঙে আলোচনা করেছেন। তার নাটকে দেখা যায় এক সময়ে গ্রামের মাতবরের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সাধারণ গ্রামবাসী মুক্তিকামীদের দেশের (পাকিস্তানের) অখণ্ডতার প্রতিবন্ধক হিসেবে বিবেচনা করে তাদের বিরুদ্ধে কাজ করলেও এক পর্যায়ে এই গ্রামবাসীর জনতার আদালতে দাঁড়াতে হয় মাতবরকে এবং তার শেষ পরিনতি বরণ করতে হয়। এই নাটকে লেখক দেখিয়েছেন কি করে সে সময় দেশের অভ্যন্তরে দেশেরই কিছু মানুষ দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচরণ করেছে। 

চরিত্র সমূহঃ

১. মাতবরঃ গ্রামের মোড়ল ও অভিভাবক।

২. পীরঃ বংশানুক্রমে পীর। এক রহস্যাবৃত চতুর চরিত্র। তার পূর্বপুরুষদের ন্যায় মাতবর পরিবারের আনুকূল্যে লালিত হলেও সময়ের পরিবর্তনে বিভিন্ন রূপকের অন্তরালে মাতবরের আদর্শের বিপরীতে অবস্থান প্রকাশ করেন।

৩. মাতবরের মেয়েঃ মাতবরের একমাত্র মেয়ে। গ্রামের এক শিক্ষকের সাথে যার বিয়ের কথা থাকলেও পরিনতি ভিন্ন হয়।

৪. পাইকঃ মাতবরের দেহরক্ষী এবং লেঠেল। যার হাতেই হয় মাতবরের শেষ পরিনতি।

৫. অন্যান্যঃ সাধারণ গ্রামবাসী, যুবকদল ও মুক্তিযোদ্ধাগণ।

কাহিনী সংক্ষেপঃ 

যমুনার তীরবর্তী এক প্রত্যন্ত গ্রামের নাম সতেরো। সতেরো গ্রামের বাসিন্দারা তাদের সার্বিক সিদ্ধান্তের জন্য নির্ভরশীল গ্রামের মাতবর এবং তার অনুগ্রহ প্রাপ্ত পীর সাহেবের উপর। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মাতবর মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানের অখণ্ডতার শত্রু হিসেবে এবং পাকিস্তানি সৈন্যদের দেশ রক্ষায় নিয়োজিত সেনানী হিসেবে অভিহিত করে। সাধারণ গ্রামবাসী মাতবরের কথাকে পালনীয় হিসেবে মেনে নেয় এবং মুক্তিকামীদের বিরুদ্ধে মাতবরের অত্যাচারী কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সহায়তা করে। গ্রামে আগমন ঘটে পাকিস্তানি সেনাদের। গ্রামের মানুষের আহারেই লালিত হতে থাকে তারা। গৃহস্থের ফসল, গৃহপালিত পশুতে তাদের দিনাতিপাত হলেও দেশ রক্ষার "মহান" কাজে নিয়োজিত এই বাহিনীর উৎপাত মেনে নেয় গ্রামবাসী। কিন্তু যুদ্ধের এক পর্যায়ে চারিদিক হতে আসতে থাকে মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় সংবাদ। প্রচারিত হতে থাকে মুক্তিবাহিনীর আগমনী বার্তা। এরকম সময়েই একপর্যায়ে হঠাৎ করে গ্রাম ছেড়ে চলে যায় সেনারা। গ্রামবাসী নিজেদের কৃতকর্মের যথার্থতার বিষয়ে সন্দিহান হয়ে পড়ে। তাই তারা সম্মিলিত হয়ে মাতবরের শরণাপন্ন হয়। 

মাতবরকে তারা পাকিস্তানী সেনাদের গ্রামত্যাগ ও মুক্তিবাহিনীর আগমনী সংবাদ বিষয়ে প্রশ্ন করে। তাদের মধ্যে যুবক শ্রেণি রাগত স্বরে মাতবরের কাছে সত্য জানতে চায়। প্রাথমিক ভাবে রেগে যায় মাতবর। সে বলেঃ

"আইজ কি ভয় দেখাও?

যদি শুনতে চাও

আরো পরিষ্কার কথা পানির মতন, শোনো কই

জঙ্গে জয় পরাজয় আছে নিশ্চয়ই

তয় শোনো সব

ইয়া তখনি সম্ভব

যখন কব্জির জোর সমান সমান

সৈন্যের সাথে কি পারে মারি কিষান?"

এর মাধ্যমে সে মুক্তিযোদ্ধাদের দুর্বলতার কথা বোঝাতে চায়। কিন্তু যখন যুবকেরা তার কথা মানতে না চায়। সে আরো বলে পরিস্থিতি সামাল দিতে পাকিস্তানি সেনারা সকল শহর বন্দরে অবস্থান করছে ভীষণ অস্ত্র নিয়ে, আকাশে আছে ঝাকে ঝাকে যুদ্ধ বিমান। এছাড়া আছে বেতার যন্ত্র যার মাধ্যমে সংবাদ পাঠালে পাকিস্তানের বিদেশী বন্ধুরা বাতাসে ভর করে চলে আসবে। মুক্তিযোদ্ধারা যদি দুঃসাহস করে সাপের গর্তে হাত দেয় তবে কালনাগিনির মত ঝাঁপিয়ে পড়বে দেশের ( পাকিস্তানের) সেনারা। 

তবে মানতে রাজি হয়না যুবকরা। এমনই সময় রূপ বদলান পীর। মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষুদ্র শক্তিকে তিনি তুলনা করেন ক্বাবা শরীফ আক্রমণকারী বাদশাহ আবরাহার হস্তীবাহিনীর উপর ক্ষুদ্র আবাবিল পাখির সফল আক্রমণের সাথে। 

এক পর্যায়ে প্রকাশ্যে না হলেও অন্তরে ভীতির সঞ্চার হয় মাতবরের। সেও যেন যমুনার পাড় দিয়ে মুক্তিবাহিনীর পদধ্বনি শুনতে পায়। তবে এই পায়ের আওয়াজ মাতবর ছাড়া আর কেউ শুনতে পায় না। পীর এই আওয়াজকে কারবালার শহীদদের মৃত্যুর বদলা নিতে অগ্রসরায়মান আবু হানিফার ক্রোধান্ধ আগমনের সাথে তুলনা করেন। তার মতে খোদার আরশে কারবালার পরিবারের গুরুত্ব গ্রামের দুলালের গুরুত্বের সমান। তাই যে আওয়াজ শোনা যাচ্ছে তা হানিফার জঙ্গের আওয়াজ। এযে জালিমের বিনাশে মজলুমের পক্ষে আগুয়ান দেশের সন্তানদের পদধ্বনি।  

এই বাদানুবাদের মধ্যে আগমন ঘটে মাতবর কন্যার। তার কাছ থেকে জানা যায়, তার বাবা সবই জানে। তার বাবার অনুমতিক্রমেই নামেমাত্র কলেমার ছলে তার সাথে পাশবিক স্বার্থ চরিতার্থ করে পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন। এবং রাত পোহাতেই তাকে রেখে চলে যায়। এই সব কথা বলে সকলের সামনে ধুতুরার বিষপানে আত্মহত্যা করে মাতবর কন্যা। এতকাল শত মায়ের বুক খালি করা মাতবর পায় ভয়ংকর শাস্তি। 

এ দৃশ্য দর্শনে ক্ষীপ্ত হয়ে ওঠে গ্রামবাসী। নানাভাবে বোঝাবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় মাতবর। ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্রোধান্ধ জনতা। এই অস্থিরতার মাঝে নিজ পাইকের লাঠিতে লুকানো ধারালো গুপ্তির আঘাতে প্রাণ হারায় মাতবর। মুক্তি বাহিনীর আগমন ঘটে। আর নাটকের পরিসমাপ্তি হয়৷ 

নামকরণঃ পুরো নাটকব্যাপী আমরা গ্রামবাসী ও মাতবরের মনে মুক্তিবাহিনীর আগমনী বার্তার উপস্থিতি দেখতে পাই। গ্রামবাসী নিজেদের কাজের পরিনাম ভয়ে ভীত হয় লোকমুখে মুক্তিযোদ্ধাদের আগমনের কথা জেনে আর একই কারণে মাতবরের মনে থাকে অজানা শঙ্কা। আর একারণেই নাটকটির এরূপ নামকরণ করা হয়। এই পায়ের আওয়াজ চূড়ান্ত বিজয়ের পূর্বে আগত অজেয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পায়ের আওয়াজ। 

সম্পর্কিত প্রশ্নগুলো

0 টি ভোট
1 উত্তর
02 জুন 2019 "সাহিত্য" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Koli (60.2k পয়েন্ট)
0 টি ভোট
1 উত্তর
06 জুন 2019 "বাংলাদেশ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Rajdip (56.1k পয়েন্ট)
0 টি ভোট
1 উত্তর
02 জুন 2019 "বিসিএস" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Koli (60.2k পয়েন্ট)
0 টি ভোট
1 উত্তর
03 জুলাই 2018 "বিসিএস" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন puja (12.2k পয়েন্ট)
0 টি ভোট
1 উত্তর
02 মার্চ 2020 "বিসিএস" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Rajdip (56.1k পয়েন্ট)

8.1k টি প্রশ্ন

6.9k টি উত্তর

154 টি মন্তব্য

5.8k জন সদস্য

×

ফেসবুকে আমাদেরকে লাইক কর

Show your Support. Become a FAN!

বাংলাহাব Answers ভাষায় সমস্যা সমাধানের একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। এখানে আপনি আপনার প্রশ্ন করার পাশাপাশি অন্যদের প্রশ্নে উত্তর প্রদান করে অবদান রাখতে পারেন অনলাইনে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য সবথেকে বড় এবং উন্মুক্ত তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলার কাজে।

বিভাগসমূহ

Top Users Nov 2024
  1. Arshaful islam Rubel

    61240 Points

  2. Koli

    60170 Points

  3. Rajdip

    56110 Points

  4. ruhu

    44790 Points

  5. mostak

    18010 Points

  6. হোসাইন শাহাদাত

    17610 Points

  7. Niloy

    13910 Points

  8. puja

    12170 Points

  9. Jannatul1998

    9520 Points

  10. Kk

    5650 Points

সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

বাংলাদেশ জানতে চাই ইতিহাস সাধারণ প্রশ্ন #ইতিহাস প্রথম #বাংলাহাব #জিঙ্গাসা বাংলা বাংলাহাব সাহিত্য ভাষা শিক্ষানীয় কম্পিউটার বিসিএস স্বাস্থ্য অজানা তথ্য কবিতা আবিষ্কার বিশ্ব #আইন নাম সাধারণ জ্ঞান জনক টাকা আয়। ক্রিকেট বিজ্ঞান পৃথিবীর বিশ্বের সাধারন প্রশ্ন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবস্থিত সাধারণ জ্ঞ্যান তথ্য-প্রযুক্তি চিকিৎসা রাজধানী লেখক পৃথিবী সালে কত সালে উপন্যাস কবি শব্দ কতটি প্রতিষ্ঠিত আবেদন প্রযুক্তি ভাষার খেলোয়াড় সদর দপ্তর # ঠিকানা জেলা শিক্ষা বিভাগ বাংলাদেশে ইনকাম ভালোবাসা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মুক্তিযুদ্ধ জাতীয় ভারত ঢাকা অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয় eassy qussion বাংলা সাহিত‍্য নারী bangladesh সংবিধান আয় স্যাটেলাইট বাংলা সাহিত্য করোনা ভাইরাস সংসদ আইকিউ সোস্যাল প্রথম_স্যাটেলাইট ইন্টারনেট অনলাইনে পূর্ব নাম গান #আই কিউ #জনক বঙ্গবন্ধু-১ সর্বোচ্চ #লেখক #প্রোগ্রামিং ফেসবুক ইসলাম সবচেয়ে বড় বি সি এস সমাজ বৈশিষ্ট্য # অর্থ মহিলা নোবেল কখন দেশ দিবস আউটসোর্সিং
...