রজনী- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ঃ
এ যাবৎকালে বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন দেখে এই ধারনা সহজেই করা যায় যে, আমাদের জন্য সকল সাহিত্যিকের সকল সাহিত্যকর্মের চরিত্র জানা বাধ্যতামূলক নয় এবং এটি বোধ হয় সম্ভবও নয়। আমরা দেখি যে, পরীক্ষার জন্য বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসসমূহের মধ্যে অল্প কয়েকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর মধ্যে আজ আমরা বিষবৃক্ষ এবং রজনী সম্বন্ধে জানার চেষ্টা করব। এই ক্ষেত্রেও পূর্বের ন্যায় বিভিন্ন মাধ্যমের সহযোগিতা নেয়া হয়েছে।
রজনী:
-----
কাহিনী সংক্ষেপ:
# রজনীর পরিচয়: কোলকাতা শহরে রজনী নামের এক হতদরিদ্র ও জন্মান্ধ অবিবাহিতা কায়স্থের কন্যা প্রতিদিন রামসদয় মিত্রের বাড়ীতে ফুল বিক্রী করতো।
# শচীন্দ্রের প্রতি অনুরাগঃ রামসদয়ের ২য় পক্ষের স্ত্রী লবঙ্গলতা তাকে খুবই স্নেহ করতেন। কোন একদিন রামসদয়ের ১ম পক্ষের পুত্র শচীন্দ্রনাথ রজনী’র চক্ষু পরীক্ষা করে। শচীন্দ্রের হাতের স্পর্শে ও কথা শুনে মুগ্ধ হয় রজনী। লবঙ্গ নিজ কর্মচারীর পুত্র গোপাল বসু’র সাথে রজনীর সম্বন্ধ স্থির করেন ও বিয়ের যাবতীয় ব্যয়বহন করতে রাজী হন। গোপালের স্ত্রী চাঁপা এতে বাঁধা দেয়। এছাড়াও, শচীন্দ্রের প্রতি অনুরাগবশতঃ রজনীও বিয়েতে অসম্মত হয়।
# পলায়নঃ গোপন পরামর্শ করে চাঁপা’র ভাই হীরালালের সাথে রজনী পালিয়ে যায়। নৌকায় হীরালাল তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। এতে রজনী রাজী না হলে একটি জনহীন চরে হীরালাল তাকে নামিয়ে দেয় ও নৌকা নিয়ে চলে যায়। অসহায় অবস্থায় অন্ধ যুবতী রজনী জীবনের প্রতি বিতশ্রদ্ধ হয়ে আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে গঙ্গায় ঝাঁপ দেয়। এক ইতর নৌকারোহী তাকে উদ্ধার করে ও কিছুদূরে নিয়ে গিয়ে পাশবিক অত্যাচারের চেষ্টা চালায়। এমনি চরম মুহুর্তে অমরনাথ নামের এক যুবক এসে রজনীকে রক্ষা করে।
# অমরনাথের আগমনঃ অমরনাথ কাশীতে জনৈক ব্যক্তির কাছে এক অন্ধ রমণীর জীবন-বৃত্তান্ত এবং সম্পত্তি গ্রাস করে অন্যে ভোগ করছে শুনে ঐ রমণীকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে আগমন করেন। রজনীকে উদ্ধার করে জানতে পারেন সে-ই ঐ রমণী। পরে অনুসন্ধান করে আরো জানতে পারেন, রামসদয় মিত্রই রজনীর সম্পত্তি ভোগ করছেন। রামসদয়ের পিতা বাঞ্ছারাম একদিন কোন কারণে ছেলের উপর ভীষণ ক্রুদ্ধ হন ফলে মৃত্যুর পূর্বে তিনি তার সমস্ত সম্পত্তি রজনীকে দান করে যান। অমরনাথ রজনীকে নিয়ে তার মেসো রাজচন্দ্র দাসের কাছে নিয়ে যান। বিষয়-সম্পত্তি উদ্ধারের পর অমরনাথ রজনীকে বিয়ে করবেন এবং রজনীও তাতে সম্মত হলেন। শচীন্দ্রনাথও সমস্ত জেনে বিষয়-সম্পত্তি ছেড়ে দিতে রাজী হলেন।
# লবঙ্গলতার প্রভাবঃ বিষয়-সম্পত্তি হাতছাড়া হবে ভেবে রামসদয় লবঙ্গলতার সাথে পরামর্শ করে রজনীর সাথে শচীন্দ্রের বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু শচীন্দ্র তার প্রতি আকৃষ্ট না থাকায় লবঙ্গ এক সন্ন্যাসীর সাহায্য নেন। এতে শচীন্দ্র রজনীর প্রতি অনুরক্ত, আসক্ত হলেও জটিল মানসিক রোগে আক্রান্ত হয় এবং সবসময় রজনীকে দেখতে চাইলেন। লবঙ্গ দেখলেন রজনীকে কাছে না পেলে শচীন্দ্র মারা যাবে। শচীন্দ্র লবঙ্গের নিজ সন্তান না হলেও তাকে নিজের সন্তান তুল্য স্নেহ করতেন। তিনি রজনীর সাথে বিয়ের জন্য উঠে-পড়ে লাগলেন। কিন্তু রজনী সংস্কারবশতঃ অমরনাথকে ভিন্ন অন্য কাউকে বিয়ে করবে না। এর বিনিময়ে সে নিজের সম্পত্তি ছেড়ে দিতে চাইল।
# অমরনাথের সন্ন্যাসব্রতঃ অমরনাথও রজনীকেই চান, বিষয়-সম্পত্তি নয়। লবঙ্গলতা অমরনাথকে ডেকে ভয় দেখান। এতে বিফল হলে তিনি সকাতরে অনুরোধ করেন রজনী’র জীবন থেকে চলে যেতে। মহাপ্রাণ অমরনাথ তার সমস্ত বিষয়-সম্পত্তি রজনী ও শচীন্দ্রকে দিয়ে সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করে দেশান্তরী হলেন।
# রজনী’র অন্ধত্ব দূর ও বিয়েঃ এরপর রজনীর সাথে শচীন্দ্রের বিয়ের হলো। পরে সন্ন্যাসীর ঔষধের প্রভাবে অন্ধ রজনী আপন দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল ও স্বামী সহযোগে সুখে-শান্তিতে সংসার ধর্ম পালন করতে লাগল।
উল্লেখ্য, উইকিপিডিয়ায় থাকা রজনীর কাহিনী সংক্ষেপ অত্যন্ত সংক্ষেপ এবং যথাযথ হওয়ায় এই উপন্যাসটির কাহিনী সংক্ষেপ সরাসরি সেখান থেকে অপরিবর্তীতভাবে গ্রহণ করা হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র:
০১. রজনী- জন্মান্ধ এবং হতদরিদ্র কায়স্থ কন্যা।
০২. রামসদয়- রজনীর সম্পদ দখলকারী ব্যক্তি।
০৩. লবঙ্গলতা- রামসদয়ের ২য়া স্ত্রী।
০৪. শচীন্দ্রনাথ- রামসদয়ের পুত্র।
০৫. অমরনাথ- রজনীকে রক্ষাকারী এবং রজনীর সত্যিকারের শুভাকাঙ্ক্ষি।
এই সংকলনের উদ্দেশ্য শুধুই এই উপন্যাস দুটির কাহিনী সংক্ষেপ এবং চরিত্র সম্পর্কে ধারনা লাভ করা। আমার এই প্রচেষ্টা যদি এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সহায়ক হয় তবে এটিই হবে আমার প্রচেষ্টার সফলতা। আপনাদের যেকোন পরামর্শ বা নির্দেশনা সাদরে গৃহীত