মেঘমুক্ত রাতের আকাশে অনেক সময় নক্ষত্রের মতো ছোট উজ্জ্বল বস্তু পৃথিবীর দিকে ছুটে আসতে দেখা যায়। এই বস্তুগুলোকে উল্কা বলা হয়। গ্রাম বাংলায় একে বলা হয় তারা খসা। আগে সাধারণ মানুষ মনে করতো, আকাশের তারাই কোনো কারণে খসে পড়লে, তখন আকাশে এই ‘তারা খসা’ দেখা যায়। অনেকে ধর্মীয় বিশ্বাসে মনে করেন, ফেরেস্তারা শয়তানকে যখন চাবুক মারে, তখন এই আলো দেখা যায়।
বিজ্ঞানীদের মতে, মহাকাশে নানা ধরণের ছোটো ছোটো মহাকাশীয় বস্তু ভেসে বেড়ায়। এই বস্তুগুলো যখন কোন গ্রহ-নক্ষত্রের কাছাকাছি চলে আসে, তখন এদের আকর্ষণে বস্তুগুলো এদের দিকে চলে আসে। এই ঘটনা মহাকাশের সকল গ্রহ-নক্ষত্র এমন কি চাঁদের মতো উপগ্রহেও ঘটে থাকে। পৃথিবীর দিকে ছুটে আসা অধিকাংশ উল্কাপিণ্ডের উৎস ধূমকেতু। পৃথিবী তার কক্ষপথে চলার সময়, বিভিন্ন ধূমকেতুর কক্ষপথের ভিতরে ঢুকে পড়ে। তখন ওই সকল ধূমকেতুর ছোটো ছোটো অংশ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের টানে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে। পৃথিবীর দিকে ছুটে আসা এই বস্তুগুলো যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, তখন বায়ুমণ্ডলের সাথে এদের সংঘর্ষে এরা উত্তপ্ত হয়ে উঠে এবং একসময় তাতে আগুন ধরে যায়। রাতের আকাশে এই জ্বলন্তু বস্তুগুলোকেই উল্কা নামে অভিহিত করা হয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬৫ কিমি থেকে ১১৫ কিমি এর মধ্যে যে সকল উল্কা জ্বলতে জ্বলতে নিচে নেমে আসে, সেই উল্কাগুলোই ভূপৃষ্ঠ থেকে দেখা যায়।
বেশীরভাগ উল্কাই আকাশেই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কিন্তু কিন্তু উল্কাপিণ্ড পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ে। প্রতি বছরই পৃথিবীতে উল্কাপাত হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীদের মতে প্রতি বছর প্রায় ১৫০০ মেট্রিক টন উল্কাপিণ্ড পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। ভূপৃষ্ঠ যে সকল উল্কাপণ্ডের অবশেষ পাওয়া যায়, তাদের বেশিরভাগের রঙ থাকে কালো। প্রচণ্ড উত্তাপে এদের বহির্ভাগ পুড়ে যাওয়ার কারণে এগুলোর রঙ কালো হয়।