#পড়া মনে রাখার ১৩ টি সহজ উপায়ঃ
-----------------------------------------------
গবেষণামতে, একজন মানুষ তাঁর
মস্তিষ্কের শতকরা মাত্র পাঁচ থেকে সাত ভাগ ব্যবহার করতে পারে। বড় বড় বিজ্ঞানীর বেলায় সেটা ১৫ থেকে ১৮ ভাগ। অনেক শিক্ষার্থীই পড়াশোনায় সময় দেওয়ার
পরও পড়া মনে রাখতে পারে না।
১) আত্মবিশ্বাস: আত্মবিশ্বাস যেকোনো কাজে সফল হওয়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত। মনকে বোঝাতে হবে পড়াশোনা অনেক সহজ বিষয় আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে। তাহলে অনেক কঠিন পড়াটাও সহজ মনে হবে। কোনো বিষয়ে ভয় ঢুকে গেলে সেটা মনে রাখা বেশ কঠিন। আর পড়ালেখা করার উত্তম সময় হচ্ছে ভোর। সকালে মস্তিষ্ক ফ্রেশ থাকে।
২) কনসেপ্ট ট্রি পড়া মনে রাখার ভালো কৌশল হলো ‘কনসেপ্টট্রি’। এ পদ্ধতিতে কোনো একটি বিষয়ে শেখার আগে পুরো অধ্যায়টি সাতটি অংশে ভাগ করে প্রতিটি অংশের জন্য এক লাইনে একটি করে সারমর্ম লিখতে হবে। তারপর খাতায় একটি গাছ এঁকে সাতটি সারমর্মকে গাছের একেকটি পাতায় লিখে রাখতে হবে। পাতাগুলোতে প্রতিদিন চোখ বোলালেই অধ্যায়টি সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া যাবে। এটি একটি পরীক্ষিত বৈজ্ঞানিক ধারণা। বাংলা ও ভূগোলের জন্য এ কৌশলটি বেশি কার্যকর।
৩) কি ওয়ার্ড যেকোনো বিষয়ের কঠিন অংশগুলো ছন্দের আকারে খুব সহজে মনে রাখা যায়।
যেমন: রংধনুর সাত রং মনে রাখার সহজ কৌশল হলো ‘বেনীআসহকলা’ শব্দটি মনে রাখা। প্রতিটি রঙের প্রথম অক্ষর রয়েছে শব্দটিতে।
৪) কালরেখা ইতিহাস মনে রাখায় এ কৌশলটি কাজে দেবে। বইয়ের সব অধ্যায় সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা নিয়ে গত ৪০০ বছরের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের তালিকা বানাতে হবে। সেখান থেকে কে, কখন, কেন উল্লেখযোগ্য ছিলেন, সেটা সাল অনুযায়ী খাতায় লিখতে হবে। প্রতিদিন একবার করে খাতায় চোখ বোলালে খুব সহজে পুরো বই সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি হবে। ফলে ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। কিন্তু আলাদা আলাদাভাবে ইতিহাস মনে রাখাটা কষ্টকরই বটে!
৫) উচ্চঃস্বরে পড়া পড়া মুখস্থ করার সময় উচ্চঃস্বরে পড়তে হবে। এই পদ্ধতিতে কথাগুলো কানে প্রতিফলিত হওয়ার কারণে সহজে আয়ত্ত করা যায়। শব্দহীনভাবে পড়ালেখা করলে একসময় পড়ার গতি কমে গিয়ে শেখার আগ্রহ হারিয়ে যায়। আর আগ্রহ না থাকলে পড়া শেখার কিছুক্ষণ পরই তা মস্তিষ্ক থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। শেখা হয়ে যাওয়ার পর বারবার সেটার পুনরাবৃত্তি করতে হবে। এটাও পড়া মনে রাখার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করে।
৬) নিজের পড়া নিজের মতো
ক্লাসে মনোযোগী হতে হবে।
স্যারদের লেকচার ও পাঠ্যবইয়ের সাহায্য নিয়ে নিজে নিজে নোট করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। একটি প্রশ্নের উত্তর কয়েকভাবে লেখার চর্চা করতে হবে। নিজের তৈরি করা পড়া নিজের কাছে অনেক সহজ মনে হবে। পরবর্তী সময়ে নিজের লেখাটি দু-একবার পড়লে অনায়াসেই সেটি আয়ত্ত হয়ে যাবে এবং নিজের মতো করে লেখা যাবে। আর এভাবে পড়লে ভুলে যাওয়ার আশঙ্কাও কম থাকে।
৭) নতুন-পুরনোর সংমিশ্রণ
নতুন কিছু শেখার সময় একই রকম আরো বিষয় মিলিয়ে নিতে হবে। কারণ একেবারে নতুন কোনো তথ্য ধারণ করতে মস্তিষ্কের বেগ পেতে হয়। কিন্তু পুরনো তথ্যের সঙ্গে নতুন তথ্য সংযোজন করতে পারে খুব সহজে।
উদাহরণস্বরূপ, ‘সিডি’ শব্দটি শেখার
ক্ষেত্রে পুরনো দিনের কলের গানের
কথা মনে রাখলে শব্দটা সহজেই মনে
থাকবে। শুধু মনে রাখতে হবে, শব্দ দুটোর মধ্যে পার্থক্যটা কী। ফিজিক্সের নতুন কোনো সূত্র শেখার সময় মনে করে দেখতে হবে, এ ধরনের সূত্র আগে পড়া কোনো সূত্রের সঙ্গে মেলে কি না।
৮) কেনর উত্তর খোঁজা এ নিয়মটা প্রধানত বিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্য প্রযোজ্য। তাদের মনে সব সময় নতুন বিষয় জানার আগ্রহ প্রবল হতে হবে। অনুসন্ধানী মন নিয়ে কোনো কিছু শিখতে চাইলে সেটা মনে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর কোনো অধ্যায় পড়ার পর সেটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠা নের নিজস্ব ল্যাবে ব্যবহারিক ক্লাস করতে হবে। তবেই বিজ্ঞানের সূত্র ও সমাধানগুলো
সহজে আয়ত্ত করা যাবে।
৯) কল্পনায় ছবি আঁকা
বিষয়সদৃশ একটি ছবি আঁকতে হবে মনে। গল্পের প্রতিটি চরিত্রকে আশপাশের মানুষ বা বস্তুর সঙ্গে মিলিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই বিষয়টি নিয়ে পড়তে বসলে মানুষ কিংবা বস্তুটি কল্পনায় চলে আসবে। এ পদ্ধতিতে কোনো কিছু শিখলে সেটা ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। আর মস্তিষ্ককে যত বেশি ব্যবহার করা যায়, তত ধারালো হয় ও পড়া বেশি মনে থাকে।
১০) পড়ার সঙ্গে লেখা কোনো বিষয় পাঠ করার সঙ্গে সঙ্গে সেটি খাতায় লিখতে হবে। একবার পড়ে কয়েকবার লিখলে সেটা সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়। পড়া ও লেখা একসঙ্গে হলে সেটা মুখস্থ হবে তাড়াতাড়ি। পরবর্তী সময়ে সেই প্রশ্নটির উত্তর লিখতে গেলে অনায়াসে মনে আসে। এ পদ্ধতির আরেকটি সুবিধা হচ্ছে হাতের লেখা দ্রুত করতে সাহায্য করে। পড়া মনে রাখতে হলে শেখার সঙ্গে সঙ্গে বেশি বেশি লেখার অভ্যাস করতে হবে।
১১) অর্থ জেনে পড়া ইংরেজি পড়ার আগে শব্দের অর্থটি অবশ্যই জেনে নিতে হবে। ইংরেজি ভাষা শেখার প্রধান শর্ত হলো শব্দের অর্থ জেনে তা বাক্যে প্রয়োগ করা। বুঝে না পড়লে পুরোটাই বিফলে যাবে। সৃজনশীল পদ্ধতিতে ইংরেজি বানিয়ে লেখার চর্চা করা সব থেকে জরুরি। কারণ পাঠ্যবইয়ের যেকোনো জায়গা থেকে।প্রশ্ন আসতে পারে। ইংরেজি শব্দের অর্থভাণ্ডার সমৃদ্ধ হলে কোনো পড়া ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
১২) গল্পের ছলে পড়া যেকোনো বিষয় ক্লাসে পড়ার পর সেটা।আড্ডার সময় বন্ধুদের সঙ্গে গল্পের মতো করে উপস্থাপন করতে হবে। সেখানে প্রত্যেকে প্রত্যেকের মনের ভাবগুলো প্রকাশ করতে পারবে। সবার কথাগুলো একত্র করলে। অধ্যায়টি সম্পর্কে ধারণাটা স্বচ্ছ হয়ে যায়। কোনো অধ্যায় খণ্ড খণ্ড করে না শিখে আগে পুরো ঘটনাটি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিতে হবে। পরে শেখার সময় আলাদাভাবে মাথায় নিতে হবে। তাহলে যেকোনো বিষয় একটা গল্পের মতো মনে হবে।
১৩) মুখস্থ বিদ্যাকে ‘না’ বলা মুখস্থ বিদ্যা চিন্তাশক্তিকে অকেজো করে দেয়, পড়াশোনার আনন্দও মাটি করে দেয়। কোনো কিছু না বুঝে মুখস্থ করলে সেটা বেশিদিন স্মৃতিতে ধরে রাখা যায় না। কিন্তু তার মানে এই নয়, সচেতনভাবে কোনো কিছু মুখস্থ করা যাবে না। টুকরো তথ্য....
যেমন: সাল, তারিখ, বইয়ের নাম,
ব্যক্তির নাম ইত্যাদি মনে রাখতে হবে। কী মনে রাখছেন, এর সঙ্গে অন্যান্য বিষয়ের কী সম্পর্ক তা খুঁজে বের করতে হবে। এছাড়া বিজ্ঞানের কোনো সূত্র কিংবা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আয়ত্ত করতে সেটা আগে বুঝে তারপর মুখস্থ করতে হবে।
-------------------------------------
অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীদের জন্যই পড়াশুনা একটি ভয়ের বিষয়। যদি একজন ছাত্র/ছাত্রী পরীক্ষা পাস ও একটি ভালো ফলাফল পেতে চান তাহলে পড়াশুনার পাশাপাশি অবশ্যই কিছু নতুন দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
এখানে গবেষণার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের দক্ষতা বাড়ানোর ৬টি পদ্ধতি দেওয়া হলো----
অধ্যয়নের জায়গার বিকল্প ব্যবস্থা করুণ-
প্রতিদিন একই জায়গায় বা একই সময়ে অধ্যয়ন না করার চেষ্টা করুন। এমনকি লাইব্রেরি বা আপনার বেডরুমের অধ্যয়ন সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান মনে হতে পারে। জ্ঞানী, ও বিজ্ঞানীগণ সব সময় বিভিন্ন স্থানে গিয়ে তাদের গবেষণা চালায়, এতে করে অধ্যয়নের মনোযোগ বা ফোকাস স্থির থাকে। সব সময় একই জায়গায় অধ্যয়নরত করলে আপনার ফোকাস এবং কাজ মনে রাখার ক্ষমতার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পাড়ে।
একসাথে দীর্ঘ সময় অধ্যয়ন না করা- কৌশলটি ঘন্টার পর ঘন্টা পড়াশোনা এড়ানোর জন্য, একসাথে দীর্ঘক্ষণ পড়া হলে শেষ পর্যন্ত তা বিরক্তিতে পর্যবসিত হতে পাড়ে। ঘন্টার পর ঘন্টা পড়া এড়াতে কিছু সময় পড়ার পর পর কৌতুক বা গান শুনতে পাড়েন। এতে করে মন ফ্রেস থাকবে ও কিছু সময় পড়ে পড়তে বসলে পড়ায় অধিক মনোযোগ আসবে।
গ্রুপ স্টাডিতে যোগ দিন- পড়াশুনার ক্ষেত্রে দলগতভাবে খুবি উপকারী। কয়েকজন একসাথে গ্রুপ করে পড়লে নতুন অনেককিছু জানা য়ায় ও গবেষনার নতুন দ্বার উম্মোচিত হয়। যাইহোক, যদি আপনি পড়াশুনায় আরভ বেশি দক্ষ হতে চান তাহলে অবশ্যই গ্রুপ স্টাডিতে যোগ দিন। পড়ার বিষয় বস্তু নোট করুণ প্রতিদিন যে বিষয়গুলো পাঠ করছেন সেগুলো আলাদা একটি নোট খাতায় নোট করে রখুন এতে করে বিষয়টা আপনার আয়ত্বে এসে যাবে ও নোট খাতাটি সাথে রাখলে যে কোনো সময় চোখ বুলিয়ে নিলেন। ফলে পড়াশুনায় আপনার দক্ষতা অনেকখানি বেড়ে যাবে।
পড়ার পরে লিখে রাখুন- গবেষণা বারবার এ তথ্য বেড়িয়ে এসেছে যে কোনো তথ্য, বা পড়ার পরে তা লিখে রাখলে এটি দ্রুত মুখস্ত হয়ে যায় এবং মস্তিষ্ককে মনে রাখতে সাহয্য করে। এছাড়াও ছাত্রছাত্রীদের জন্য চাবির মতো কাজ করে। এতে করে হাতের লিখা দ্রুত হয় ফলে পরক্ষার হলে মারাত্মক কাজ দেয়। নিজেকে পরীক্ষা করুন।
নিজেকে পরীক্ষা করুন- অধ্যয়নরত সমগ্র বিন্দু থেকে সাধারণত সেমিস্টারে পাস করা এবং সার্টিফিকেট লাভ করাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়, কিন্তু আপনি নিজের দক্ষতা বাড়াতে নিজেই নিজেকে পরীক্ষা করুণ। অন্যের সাথে তুলনা করুণ। মাঝে মাঝে নিজেই প্রশ্নপত্র তৈরি করে পরীক্ষা দিন। এতে করে আপনার মনোবল অনেকখানি বেড়ে যাবে ও প্রাতিষ্ঠানিক সহ যে কোনো পরীক্ষায় আপনি থাকবেন আত্মবিশ্বাসী।
পর্যাপ্ত ঘুমান এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুণ- ঘুম পড়াশোনার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভুমিকা পালো করে (Sleeping is vital to effective studying)...কেন?কারণ সঠিক বিশ্রাম ছাড়া, আপনার মস্তিষ্ক খুব ক্লান্ত হয়ে যায় ফলে তা নতুন কিছু মনে রাখতে অক্ষম হয়ে পড়ে। প্রতিটি রাতে অন্তত আট ঘন্টা ঘুমানো একান্ত প্রয়োজন। সঠিক ঘুম ছাড়া, খুব সহজেই আপনি কোনো কিছু মনে রাখতে সক্ষম হবেন না। এবং আপনার শরীরকে সুস্থ ও শক্তিশালী রাখতে এবং ব্রেনের কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখতে প্রতিদিন গ্রহণ করুণ স্বাস্থ্যকর খাবার।
এই ছয়টি বিষয় মনে রাখলে ও সে অনুযায়ী কাজ করলে পড়াশুনায় আপনার দক্ষতা অনেকখানি বেড়ে যাবে। তাহলে আর দেরি না করে আজই শুরু করেদিন পড়াশুনার নতুন অধ্যায়।