ত্বকের যত্নে শসা
ত্বকের যত্নে শসার ব্যবহার অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। সতেজ ত্বকের জন্য যে শসা একটি অপরিহার্য নাম তা সবারই জানা। তবে রূপচর্চার জন্য শসার সঠিক ব্যবহারের পদ্ধতি হয়তো অনেকের জানা নেই। চলুন জেনে নেয়া যাক রূপচর্চায় শসার ব্যবহার-
১. মুখে কোনো কালো দাগ পড়লে কচি শসার রস মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নেবেন। এভাবে কিছুদিন নিয়মিত লাগালে দাগ উঠে যায়।
২. শসার রসের সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মুখে মেখে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নিলে মুখের রং উজ্জ্বল ও কোমল হয়। তবে নিয়মিত কিছুদিন করতে হবে।
৩. অনেক সময় দেখা যায় চোখের নিচে অনেকেরই কালো দাগ পড়ে। শসার রস নিয়মিত মাখলে এ দাগ দূর হবে।
৪. যদি কেউ ফর্সা হতে চান তবে নিয়মিত শসার রসের সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে মুখে, হাতে ও গায়ে নিয়মিত মাখলে গায়ের রং ফর্সা হয় অথবা শসা পাতলা পাতলা করে কেটে মুখে ঘসে নিতে পারেন। পরে শুকোলে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নেবেন।
৫. মুখকে রোদ থেকে বাঁচাতে, মুখের দাগ তুলতে ও ময়লা থেকে যদি রেহাই পেতে চান তবে শসার সাহায্যে একটি ফেসপ্যাক বানিয়ে ২৫/৩০ মিনিট রেখে প্রথমে গরম পানি, পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিয়ে আপনি নিশ্চিন্তে বাইরে বেড়িয়ে আসতে পারেন। এতে ত্বক সারাদিনের জন্যে যেমন চকচকে, মসৃণ ও কোমল থাকবে তেমনি বাইরের নানান জীবাণু থেকে ত্বক রেহাই পাবে।
উজ্জ্বল ত্বকের জন্য
শসার টুকরা ছেঁচে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করুন এটি।
শুষ্ক ত্বকের যত্নে
৩ টেবিল চামচ শসার রসের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ দুধের সর মিশিয়ে গলা ও মুখের ত্বকের লাগিয়ে রাখুন। ১৫ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি রুক্ষ ও শুষ্ক ত্বকের প্রাণ ফেরাবে।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে
তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দেখা যায় বেশি। ৩ টেবিল চামচ শসার রসের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ বেসন ও ১ টেবিল চামচ বাটার মিল্ক মেশান। ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ভালো করে নেড়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। ৩০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দূর হবে ত্বকের অতিরিক্ত তেল।
রোদে পোড়া দাগ দূর করতে
১ টেবিল চামচ শসার রসের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ ডিমের সাদা অংশ ও ১ টেবিল চামচ দই মিশিয়ে রোদে পোড়া ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
ডার্ক সার্কেল দূর করতে
চোখের আশেপাশের কালচে দাগ দূর করতে চাইলে ফ্রিজের ঠাণ্ডা শসা স্লাইস করে চোখের ওপর দিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। প্রতিদিন এভাবে ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে কমে যাবে ডার্ক সার্কেল।
১. তৈলাক্ত ত্বকে, মুখ ধোয়ার পর শুধু শশার রস টোনার হিসেবে মুখে লাগাতে পারেন অথবা একে আরো কার্যকরী করতে শশার রসের সঙ্গে আপেল সাইডার ভিনেগার, টমেটোর রস এবং অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে নিতে পারেন।
২. শশাতে থাকা ব্লিচিং প্রপার্টিজ ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করে ত্বক উজ্জ্বল এবং স্কিন টোন সমান করে। বাইরে থেকে এসে মুখ ধুয়ে শশার রস লাগান। এটি সান বার্ন দূর করবে।
৩. একটি শশা ব্লেন্ডারে ভাল মতো ব্লেন্ড করে পেস্ট তৈরী করে দু’চামচ লেবুর রস এবং এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে মুখে এবং ঘাড়ে লাগান। ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি ত্বকের রুক্ষভাব দূর করে চেহারা উজ্জ্বল করে।
৪. শশার ৯৫% উপাদানই হচ্ছে পানি। এর ফলে শশা খাওয়ার মাধ্যমে ত্বক হাইড্রেটেড এবং ময়েশ্চারাইজড থাকে। শশার দানাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই এবং পটাশিয়াম। যা, ফাইন লাইন্স, রিংকেল সহ বার্ধক্যের বিভিন্ন ছাপ দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল এবং যৌবনদ্বীপ্ত রাখে।
৫. ডার্ক সার্কেল কমাতে শশা বেশ কার্যকর। শশাতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং সিলিকা চোখের ডার্ক সার্কেল কমিয়ে চোখের চারপাশের স্কিন ভালো রাখে।
৬. তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে কাঁচা হলুদ, লেবুর রস এবং শশা পেস্ট একঙ্গে মিশিয়ে প্যাক তৈরী করুন। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন। শুকিয়ে গেলে মুখ ভাল করে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি স্কিনের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করে।
৭.শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে এক চা-চামচ ওটমিল এবং পরিমাণমত শশা পেস্ট একসঙ্গে মিশিয়ে আধা ঘণ্টা রেখে দিন। মুখে এবং ঘাড়ে মিশ্রণটি ভালো মত মেখে ২০ মিনিট রাখুন। চাইলে এর সঙ্গে মধু যোগ করতে পারেন। মধু ত্বক ময়েশ্চারাইজড রাখবে।
৮. বয়সের ছাপ লুকাতে দুই টেবিল-চামচ টক দই, আধা চামচ মধু এবং লেবুর রসের সঙ্গে দুই চামচ গ্রেট করা শশা এবং দুটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল ভালোমতো মেশান। এবার এটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি ফাইন লাইন্স, রিংকেল দূর করে ত্বক টানটান এবং সুন্দর করে।
৯. শশাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সিলিকা যা নখ শক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। তাই নিয়মিত শশা খাওয়ার মাধ্যমে নখ ভাঙ্গা কমে গিয়ে নখ শক্ত হয়।
১০. ব্রোন সমস্যা থেকে বাঁচতে দুই চা-চামচ শশার রসের সঙ্গে গোলাপ জল এবং মুলতানি মাটি মিশিয়ে প্যাক তৈরী করে মুখে লাগান।
১১. চুলের বৃদ্ধিতে শশার ভুমিকা অতুলনীয়। এটি চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।