যে ১০টি শারীরিক সমস্যায় অ্যালোভেরা যাদুর মত কাজ করে
===========================================
প্রাচীন মিশরীয়রা ‘অ্যালোভেরা’কে ‘True miracle plant’ অর্থ্যাৎ সত্যিকারের অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন গাছ বলে আখ্যায়িত করতেন। অ্যালোভেরা পাতার জেলকে তারা তাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য এবং মঙ্গল বৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে মানতো। শুধু সৌন্দর্য চর্চায় নয়, মিশরীয়রা তাদের মৃতদেহ সংরক্ষণেও অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতো বলে জানা যায়। ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস প্রতিরোধকারী উপাদান রয়েছে অ্যালোভেরাতে। সুপ্রাচীন কাল থেকে শুধু মিশরে নয়, চীনেও অ্যালোভেরা বিশেষ স্থান দখল করে রয়েছে।
অ্যালোভেরাকে আমরা ঘৃতকুমারী নামেও জানি। এই উদ্ভিদটিতে আমাদের সুস্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য রক্ষার অনেক উপাদান ভরপুর রয়েছে। এটি একটি কাণ্ডবিহীন রসালো এবং শাসযুক্ত গাছ। এই গাছটি গড়ে ৬০-১০০ সে.মি লম্বা হয়। অ্যালোভেরাতে প্রায় ২০ ধরনের মিনারেলস রয়েছে, তার মধ্যে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, সেলেনিউম, ক্রোমিয়াম, সোডিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, কপার ও ম্যাংগানিজ অন্যতম। আজ পাঠকদের জন্য দেয়া হলো অ্যালোভেরা জুসের স্বাস্থ্য উপকারিতা।
১. হজমজনিত সমস্যায়
হজমজনিত সমস্যা দূর করতে অ্যালোভেরা জুসের অন্যতম একটি প্রাচীন পদ্ধতি। পেটের অতিরিক্ত গ্যাস, অতিরিক্ত অম্লতা, পেটের ভেতরে জ্বালা পোড়া এবং অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে পেটের প্রদাহ- এসব সমস্যার সমাধান হতে পারে অ্যালোভেরা জুস। প্রতিদিন এই জুস এক গ্লাস করে পান করলে এক সপ্তাহের মধ্যে হজমজনিত সমস্যা কমে আসবে।
২. কোষ্ঠকাঠিন্যে
গবেষণায় দেখা যায়, অন্ত্রে জলীয় উপাদানের বৃদ্ধির ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। যদি আপনি কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে ভুগে থাকেন তাহলে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এক গ্লাস অ্যালোভেরা জুস যুক্ত করুন, এতে করে আপনার অন্ত্রে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটবে এবং আপনার সুস্থ অন্ত্রের ভারসাম্য বজায় থাকবে।
৩. ডায়াবেটিসে
রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে অ্যালোভেরা জুস থেরাপি বেশ সুপরিচিত। প্রাথমিক গবেষণা থেকে জানা যায়, ‘অ্যালোভেরা জুস গ্রহণ করার ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা উন্নত হয়।’ অ্যালোভেরার মধ্যে রয়েছে ক্রোমিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক এবং ম্যাংগানিজ, যা ইনসুলিনের কার্যকারিতা উন্নত করে। অ্যালোভেরা জুস গ্রহণ করার পর থেকে ঘন ঘন ডায়াবেটিস মনিটরিং করা প্রয়োজন এবং ডাক্তারের কাছ থেকে নির্দেশিকা অনুযায়ী অ্যালোভেরা জুস ও ওষুধের মধ্যে সমন্বয় করা উচিত।
৪. বুক জ্বলাপোড়ায়
অ্যালোভেরার অন্যতম একটি উপকারী দিক হলো বুকে জ্বলাপোড়া কমাতে সাহায্য করা। এমনকি অ্যালোভেরা প্রচলিত যেকোনো অ্যাসিডিটি ওষুধের চেয়ে দ্রুত কাজ করতে সক্ষম। ২০১৫ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, ‘অ্যালোভেরা জুস পার্শ্বীয় ঔষধের চেয়ে দ্রুত অ্যাসিড রিফাক্সের উপসর্গ হ্রাস করে এবং তা যেকোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই।’
৫. লিভার রোগ প্রতিরোধে
লিভার সুস্থ তো আপনিও সুস্থ। যখন আপনার শরীর পরিপূর্ণরূপে পুষ্টি ও হাইড্রেট থাকে, তখন লিভার সবচেয়ে ভালো কাজ করে। এক্ষেত্রে অ্যালোভেরা জুস লিভারের জন্য আদর্শ, কারণ এটি হাইড্রেটিং এবং ফায়োটেন্টেটিউটে সমৃদ্ধ। ফলে লিভারের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ হয়।
৬. বিষণ্ণতায়
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়েটে অ্যালোভেরা অন্তর্ভূক্ত করার ফলে মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তির অবস্থা আরো উন্নত হয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো বিষণ্ণতা অনেকাংশে কমে যায়। এই দারুণ ফলাফল মূলত অ্যালোভেরার Saccharides এর জন্য সম্ভব হয়।
৭. মুখের রোগ প্রতিরোধে
অ্যালোভেরা জুস প্রাকৃতিক মাউথ ওয়াশ অতুলনীয়। মুখের ভেতরের রোগ-জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া দূর করতে অ্যালোভেরারজুড়ি নাই। ভারতীয় এক গবেষণায় বলা হয়, দাঁতের চিকিৎসায় অ্যালোভেরার ব্যবহার সীমাহীন। অ্যালোভেরা কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন মাউথ ওয়াশ হিসেবে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা সম্ভব। এই উদ্ভিদের অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান মুখ ও দাঁতের সুস্থতা বজায় রাখতে সক্ষম। দাঁত ও মাড়ির সমস্যা ও মাড়ি থেকে রক্তপাতজনিত সমস্যাগুলো খুব সহজেই অ্যালোভেরার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
৮. ক্যান্সার প্রতিরোধে
ক্যান্সার বিরোধী উপাদান বেশিরভাগই বিভিন্ন গাছপালাতে পাওয়া যায় আর অ্যালোভেরা তাদের মধ্যে একটি। সংযুক্ত আরব আমিরাতে চালানো এক গবেষণা অনুযায়ী, ‘অ্যালোভেরা ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করতে ও ক্যান্সারের কার্যকারিতা বন্ধ করতে সক্ষম।’ এটি ক্যান্সার টিউমারের বৃদ্ধি থামাতে ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে। অ্যালোভেরা ক্যান্সার প্রতিরোধক হার্বগুলোর কার্যকারিতা অনেকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
৯. হৃদরোগে
একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ৫,০০০ রোগী (পাঁচ বছরের জন্য বুকে বা হৃদরোগে আক্রান্ত) যাদের অ্যালোভেরা জুস পান করানো শুরু করা হয় এবং তাদের ব্যথার উপসর্গে কমে যায়। শুধু তা-ই নয়, তাদের কোলেস্টেরল এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমার প্রমাণও পাওয়া যায়। অন্য আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, কয়েকজন রোগী যাদের রক্তে হাই কোলেস্টেরল রয়েছে, তাদেরকে বারো সপ্তাহের জন্য অ্যালোভেরা জুস পান করানোর ফলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা পনেরো শতাংশ কম পাওয়া যায়।
১০. শরীর দূষণে
অ্যালোভেরার অন্যতম উপাদান পটাশিয়াম লিভার ও কিডনিকে পরিস্কার করতে সাহায্য করে। এছাড়া অ্যালোভেরার ইউরনিক অ্যাসিড (Uronic acid) আমাদের দেহের কোষ ডিটক্সিফাইয়ে অবদান রাখে। অ্যালোভেরা জুস পান করার ফলে আমাদের শরীর কেবলমাত্র ডিটক্সিফাই-ই হয় না, বরং অ্যালোভেরার জেলাটিনাস (Gelatinous) উপাদান টক্সিন শোষণ করে শরীরের সাথে টক্সিনের সকল উপস্থিতি নষ্ট করে দেয়।