পটভূমি :ইতোমধ্যে খবর পাওয়া গিয়েছে প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে ৮ শতাংশ ধরতে যাচ্ছে। আগামী বাজেটের আয়তন ৫ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার সমান হবে বলে শোনা যাচ্ছে। সম্ভবত প্রস্তাবিত এই বাজেট প্রক্ষেপিত জিডিপির ১৮-২০ শতাংশের মধ্যেই থাকবে;
কিন্তু এই সব বড় পরিমাণগত সামুষ্টিক সাফল্যের মানদন্ডের পাশাপাশি অর্থনীতির কতিপয় গুরুতর সীমাবদ্ধতাও চিহ্নিত করা সম্ভব। ইতিবাচক প্রচারের ভিড়ে খবরের কাগজে সরকার-বিরোধী বক্তব্য ক্ষীণতর হয়ে আসলেও ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও সরকারের কাছাকাছি রাজনীতিবিদরাও ইতোমধ্যে কিছুকিছু মৃদু কিন্তু স্বাস্থ্যকর সমালোচনা ব্যক্ত করতে শুরু করেছেন।
এই মুহূর্তে ছোট ও মাঝারি কৃষকরা উদ্বৃত্ত ফসল নিয়ে দিশেহারা। শ্রমিকদের মধ্যেও ন্যূনতম মজুরির পরিমাণ নিয়ে ক্ষোভ মিটে যায় নি। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের কম-বেশি স্থবিরতা কাটছে না। দুর্নীতি ও সুশাসন নিয়ে, বিশেষত নারী নির্যাতন নিয়ে প্রতিবাদ অব্যাহত।
তবুও মোটা দাগে আঁকা এই ছবির পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট ১০টি আশঙ্কার কথা আমি নীতিনির্ধারকদের সামনে আগাম তুলে ধরতে চাই।
(১) ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট বৃদ্ধি পেয়েছে।
(২) পুুঁজি বাজারে স্থানীয় বিনিয়োগ উত্সাহব্যঞ্জক নয়।
(৩) কৃষক ভালো উত্পাদনের পরেও শস্যের আশানুরূপ দাম পাচ্ছে না।
(৪) অসম প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সম্পদ ও আয়ের দ্রুত কেন্দ্রীভবনের কারণে অর্থনীতি, সমাজ ও রাষ্ট্রে Big houses বা ধনী পরিবারগুলোর একাধিপত্য বাড়ছে।
(৫) বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির টার্গেট অর্ধেকও অর্জিত হচ্ছে না।
(৬) ব্যাংকগুলোর আমানত সংগ্রহ আশানুরূপ হচ্ছে না। সঞ্চয়কারীরা ব্যাংকের চেয়ে সরকারি সঞ্চয়পত্রের দিকে বেশি ঝুঁকছেন।
(৭) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে আত্মসন্তুষ্টির অবকাশ ক্রমশ কমে আসছে। দ্রুত আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আগে যা দিয়ে ৮ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যেতো এখন ৪-৫ মাসেও হচ্ছে না।
(৮) প্রবৃদ্ধি বাড়লেও আশানুরূপভাবে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। ৮৫ শতাংশ মানুষ ভিড় করছে অনানুষ্ঠানিক খাতে।
(৯) নতুন অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, অর্থনীতির বর্তমানে যা আয়তন তাতে সরকারি রাজস্বের পরিমাণ হওয়া উচিত ৬ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা; কিন্তু প্রত্যক্ষ কর আদায় না বাড়িয়ে শুধু অপ্রত্যক্ষ করের মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধি যথেষ্ট হচ্ছে না।
(১০) শিক্ষা-স্বাস্থ্য-বাসস্থান— এই তিন সেবাখাতে রয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় সরকারি বরাদ্দের বিপুল ঘাটতি। যে কারণে টাকার অংকে আয় বৃদ্ধি পেলেও বাস্তবে মানুষের জীবনমান বা Quality of life উন্নত হচ্ছে না।
ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ :সম্প্রতি ঋণ খেলাপির মাত্রা দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুসারে এই সব খেলাপি ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি রক্ষার বিধান চালু ছিল। বিপুল খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোকে সেটা রাখতে গিয়ে ঋণযোগ্য তহবিলের ঘাটতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল।
বিশেষ করে ব্যক্তি খাতের দুইটি খারাপ ব্যাংক (ফার্মারস ব্যাংক বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক এবং বেসিক ব্যাংক) এমন তহবিল সংকটে পতিত হয় যে, তাদের পক্ষে গ্রাহকের চেক ভাঙানোও সম্ভব ছিল না। গত নির্বাচনের আগে আগে তাই দুটো ব্যাংক দেউলিয়া হতে বসে; কিন্তু সরকার এটাকে ধামাচাপা দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ ধরনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বিশ্বে নতুন নয়।
২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকট পূঁজিবাদের কেন্দ্রস্থল আমেরিকাকে কাঁপিয়ে দিলে তখন তারাও উপলব্ধি করেছিলেন যে, যে কোনো ভাবেই হোক বড় ব্যাংকগুলোকে বাঁচাতে হবে। তারাও তখন সাধারণ আমেরিকান করদাতাদের টাকা বা সরকারি টাকা ভর্তুকি দিয়ে ব্যাংকগুলোকে রক্ষা করেছিলেন। অর্থনীতিবিদরা একে নাম দিয়েছিলেন, ‘Bailing out’. ঠাট্টা করে তখন বলা হতো ‘ব্যাংক লাভ করলে সেটা ব্যাংকারের লাভ। আর ব্যাংক লস করলে সেটা সরকারের লস’।
ফার্মারস ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকের অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে, তদন্ত চলছে। প্রকৃত অপরাধীদের কী শাস্তি হয় এবং টাকাটা আদৌ উদ্ধার হয় কি না তা দেখার জন্য আমানতকারীরা বসে আছেন। কারণ আমানতকারীদের সর্বনাশ করেই তারা কাজটি করেছে। ব্যাংক দুটোকে বাঁচানোর জন্য সরকার ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের তহবিল হতে হাজার হাজার কোটি টাকা ’ইনজেক্ট’ করেছে। আগামী বাজেটে এই ধরনের ম্রিয়মাণ অন্যান্য ব্যাংকগুলোতেও সরকারকে প্রচুর টাকা ’ইনজেক্ট’ করতে হতে পারে।
আগামী বাজেটে এই ধরনের ম্রিয়মাণ অন্যান্য ব্যাংকগুলোতে সরকারকে যে টাকা ইনজেক্ট করতে হবে তার প্রকৃত পরিমাণটা আগামী ১৩ জুন বাজেট প্রকাশ হলে আমরা জানতে পারবো।
প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে পাবলিকের অর্থ দিয়ে ঠেকা দিয়ে আর্থিক খাতের সংকট ঠেকিয়ে রাখা যাবে কি? এই নীতির প্রকৃত তাত্পর্য হচ্ছে ‘উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে’ চাপানো। সরকার প্রথমেই চাইলো খেলাপি ঋণের সংজ্ঞাই বদলে দিতে। যাতে করে ব্যাংকগুলোর খেলাপি মাত্রা কম দেখানো যায় এবং নিরাপত্তা সঞ্চিতির প্রয়োজন কমে যায়; কিন্তু এতে আমানতকারীদের ঝুঁকি বেড়ে গেল।
ব্যাংকগুলোতে টাকা রাখার পরিমাণও তাই কমতে শুরু করলো। পক্ষান্তরে সরকার খেলাপিদের লোভ দেখিয়ে বললো মাত্র ২ পার্সেন্ট টাকা জমা দিয়েই পুনঃতফসিলীকরণের সুযোগ দেওয়া হবে (অর্থাত্ যার কাছে ১০০ কোটি টাকা পাওনা, তার ২ কোটি টাকা দিলেই চলবে!)। ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ১০ বছর বাড়িয়ে দেওয়া হবে!
ইচ্ছা করলে নিছক ‘কষ্ট অব ফান্ড রেইটে’ সমগ্র ঋণ পরিশোধের সুযোগও করে দেওয়া হলো। এসব নীতি নতুন অর্থমন্ত্রী এসে ঘোষণা করার পরে ব্যবসায়ী ও চেম্বার সাধারণ ভাবে খুশি হলেও কেউ কেউ নতুন আপত্তি তুললেন।
ভাল ঋণগ্রহীতাদের পক্ষ থেকে দাবি উঠলো, ‘আমরা কি দোষ করলাম— আমরা যে এতকাল ১২ পার্সেন্ট হারে নিয়মিত সুদ দিয়ে গেলাম তাতে কি অপরাধ হলো?’ তখন সরকারের/বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছুটা বোধোদয় হলো, সরকার নতুন ঘোষণা দিলেন, নিয়মিত ঋণ পরিশোধকারী ঋণ গ্রহীতারা তাদের প্রদেয় সুদের ১০ শতাংশ ফেরত পাবেন।
বস্তুত সরকারকে এখন কারা ‘ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি’ এবং কারা অনিচ্ছাকৃতভাবে বাস্তব অর্থনীতির বা বাজারের উঠা-নামার কারণে বা সরকারি প্রতিকূল নীতির কারণে বা অতি উচ্চ সুদের কারণে বা ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজির কারণে ঋণ খেলাপি হতে বাধ্য করেছেন তা আলাদা করে নির্ধারণ করতে হবে। বর্তমানে এজন্য বিশেষ নিরীক্ষা পদ্ধতি বা নিরীক্ষা দল রয়েছে।
প্রয়োজন ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি প্রদান করা ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা। রাজনৈতিক কারণে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তখন আদালতের আরো কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ ছিল। সরকারও তখন ঐ ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা যত ক্ষমতাধরই হোক না কেন তাদেরকে বলতে পারতেন ‘আমি কি করবো আদালতের নির্দেশ’।
যদি এ সবকিছুই সম্ভব না হয় তাহলে অন্তত নতুন অর্থমন্ত্রীর উচিত হবে ব্যবসায়ীদের পক্ষে গুণগান না করে তাদেরকে যথাসম্ভব দ্রুত জবাবদিহিতার সম্মুখীন করা। একটি জাতীয় ব্যাংকিং কমিশনের প্রস্তাব এই বাজেটে থাকা উচিত বলে আমি মনে করি—যার কাজ হবে আর্থিক খাতের কেলেঙ্কারিগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা।
সরকার এখন পর্যন্ত সেদিকে না গিয়ে ব্যাংকগুলোকে রাজনৈতিকভাবে ম্যানেজ করছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তি সত্ত্বেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো অনেক আগে থেকেই সরাসরি অর্থ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। ফলে সমগ্র আর্থিক খাতে একধরনের দ্বৈত কর্তৃত্বের ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। এখন সময় হয়েছে এই রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা প্রত্যাহার করার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীন কর্তৃত্ব ফিরিয়ে না আনলে ব্যাংকিং খাতের ধস বেশিদিন ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। অবশ্য পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের পেশাদারী দক্ষতাও নিশ্চিত করতে হবে।
উন্নয়নের চালিকাশক্তিরা উত্সাহিত হবে কি? :
আমাদের বর্তমান উন্নয়নের ধারায় প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে:
(১) কৃষক ও কৃষিখাত
(২) পোশাক শ্রমিক
(৩) রেমিটেন্স উপার্জনকারীরা এবং
(৪) ছোট ও মাঝারি শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠান।
আমাদের বৃহত্ খেলাপি ঋণগ্রহীতারা আমাদের উন্নয়নের প্রধান চালিকা শক্তি নয়। তারা বরং দেশের বিনিয়োগ থেকে লাভ করে তা বাইরে পাচার করে দিচ্ছেন—এরকম অভিযোগও উঠেছে। বর্তমানে বৃহত্ হাউজগুলো মিডিয়া ও রাজনৈতিক খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তারা বুঝতে পেরেছেন অর্থনৈতিক পলিসি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে রাজনীতিকে ও মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
আমরা তাই দেখতে পাচ্ছি ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের স্থবিরতা থাকলেও মেগা প্রকল্পগুলোতে সরকারি বিনিয়োগ অব্যাহত আছে এবং সেখানে ব্যক্তি খাত সহযোগীর ভূমিকায় থাকছেন। প্রত্যেকটি মেগা প্রকল্পের খরচ এবং সময় পরিকল্পনার প্রস্তাবকে ছাড়িয়ে বেড়ে গেছে। এর ইংরেজি নাম হচ্ছে: ‘কষ্ট ওভার রান অ্যান্ড টাইম ওভার রান’— বাংলায় এর ভাবানুবাদ হবে:‘কিছুটা দুর্নীতি ও কিছুটা অদক্ষতা’।
এসব প্রকল্পকে ঘিরে অসত্ আমলা ও অসত্ ব্যবসায়ীদের ও অসত্ রাজনীতিবিদের শক্তিশালী এক বিষচক্র মেলবন্ধন গড়ে উঠছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এসব ক্ষেত্রে মনিটরিং বজায় রাখার চেষ্টা করছেন কিন্তু তা সত্ত্বেও ‘Cost Over run and Time Over run’ ঠেকানো যাচ্ছে না।
অন্যদিকে এবার কৃষকরা উদার চাল আমদানি নীতির কারণে এবং অপ্রত্যক্ষ চাল সংগ্রহ নীতির কারণে ধানের উপযুক্ত দাম পাননি। খুব সহজেই কৃষকদের ব্যাংক বা বিকাশ জাতীয় একাউন্টের মাধ্যমে এবং সেলফ হেলফ গ্রুপ তৈরি করে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ ও পেমেন্টের নীতি গ্রহণ করলে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত থেকে কৃষককে রক্ষা করা যেত।
পাশের দেশ ভারতে তা সম্ভব হচ্ছে কিন্তু আমাদের দেশে হচ্ছে না কেন বোঝা মুশকিল। রাইস মিল-মালিক ও আমদানিকারকরা কি রাজনৈতিকভাবে এতটাই শক্তিশালী? নাকি ক্ষমতায় থাকার জন্য ভারতের মতো কৃষকের ভোটের প্রয়োজন এদেশে হয় না?
শিল্প প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিবিএসের সর্বশেষ যে জরিপ বের হয়েছে তাতে দেখা যায় ছোট ও মধ্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু বৃহত্ শিল্প প্রতিষ্ঠান কমেছে। এসব উদীয়মান ছোট ও মধ্য শিল্পের উদ্যোক্তাদের প্রচুর সস্তা ঋণের দরকার, প্রযুক্তির দরকার, দরকার বাজারের।
আমদানিকারকরা এবং রাঘব-বোয়ালরা অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারকদের প্রভাবিত করে এসব অনুকূল নীতি গ্রহণ করতে দিচ্ছেন না। একটি ছোট্ট উদাহরণ দিতে চাই। এবারের ঈদে সস্তায় জুতা আমদানি হওয়ার কারণে হাজার হাজার স্থানীয় জুতা শিল্প প্রচ্ল মার খেয়েছে বলে সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
আমাদের সবে ধন নীলমণি পোশাক শিল্পের সাফল্যের মূলে রয়েছে সস্তা শ্রম। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমরা প্রায় ৩ হাজার ৬১ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি করেছি। এই রপ্তানির পেছনে জড়িয়ে আছে ৪০ লাখ শ্রমিকের কষ্টকর শ্রম। হিসাবে দেখা যায় চলতি অর্থবছরে শ্রমিক পিছু রপ্তানি হচ্ছে ৭ হাজার ৬৫২ ডলার।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন- এই মূল্যের ৬০ শতাংশ হচ্ছে শ্রমিক কর্তৃক সৃষ্ট মূল্য বা ‘Value Added’। তাহলে গড়ে একজন শ্রমিক ১ বছরে মূল্য সংযোজন করেন ৪ হাজার ৫৫১ ডলার। বা ৩ লাখ ৮১ হাজার টাকা। সে হিসাবে মাসে মূল্য সংযোজন দাঁড়ায় ৩১ হাজার ৭৫৪ টাকা। বেচারা শ্রমিকরা দাবি করেছিলেন মাসে ১৬ হাজার টাকা বেতন। কিন্তু তাদের জন্য ন্যূনতম মজুরি হচ্ছে ৮ হাজার টাকা। অর্থাত্ সংযোজিত মূল্যের মাত্র ৩০ শতাংশই নির্ধারিত হয়েছে শ্রমিকের জন্য ন্যূনতম প্রাপ্য।
প্রায় দেড়শ বছর আগে রচিত “ক্যাপিটাল” গ্রন্থে মার্কস যে শোষণের হার দেখিয়েছিলেন তাতে এই ন্যূনতম হারটি ছিল ৫০ শতাংশ। শ্রমশক্তিকে সংযোজিত মূল্যের ৫০ শতাংশের কম দিয়ে মধ্য-আয়ের দেশ আমরা হতে পারবো কি? আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ নির্মাণ করতে চাইছি, মধ্য-আয়ের দেশ হতে চাইছি, কিন্তু শ্রমজীবীদের সভ্য জীবন দিব না, তা হতে পারে না।
করণীয়:
এদেশে বাজেট সাধারণত গতানুগতিকই হয়। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাজেটের আপেক্ষিক হার সবসময়ই সরকার দেখাতে চান বেশি, আসলে থাকে কম, বাস্তবায়িত হয় আরো কম। প্রশাসন, মেগা প্রজেক্ট, সুদ ব্যয়ের খাতে বাজেটের বড় অংশ চলে যায়। ব্যয়ও হয় বেশি।
এবার ভর্তুকিও যাবে ব্যাংকিং খাতে। নতুন অর্থমন্ত্রী বলেছেন- এবার বাজেটে বাহুল্য কথা থাকবে না—ছোট বক্তৃতা দিবেন তিনি। আমরা দেখতে চাইবো সেই ছোটর মধ্যেও সমস্যা সম্পর্কে অধিকতর তীক্ষ সচেতনতা এবং সমাধানের দিকে অন্তত কিছু গণমুখী ইতিবাচক প্রয়াস।