সমাস বাংলা ব্যাকরণের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই অংশ নিয়ে কমবেশি বিব্রত হননি এমন শিক্ষার্থী বা চাকরিপ্রত্যাশী খুঁজে পাওয়া কঠিন। আমিও আর দশজনের কাতারেরই একজন। একটু চেষ্টা করবো বাংলা ব্যাকরণের জট খোলার জন্য। এখানে আমিও আপনার বা আপনাদের মতই একজন কাজেই ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।
সমাসের মধ্যে যেসব সমাস আমাদের প্রায়শই বিব্রত করে সেসবের মধ্যে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি ও দ্বিগু সমাস অন্যতম।
সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি:
অনেকেই সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি আর দ্বিগু সমাসকে গুলিয়ে ফেলেন। এককালে আমিও করেছি।
আমরা জানি সমাসে দুইটা পদ থাকে, একটি পূর্বপদ অন্যটি পরপদ। দুটি পদের মিলিত নাম সমাস। এই পূর্বপদ এবং পরপদের মিলিত অংশে যে সমাস হয় তা সংখ্যাবাচক শব্দ হলে এবং সে শব্দটি দ্বারা যদি বিশেষণ বোঝানো হয় তবে তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি সমাস বলা হয়।
কী জটিল মনে হচ্ছে ভাই! একটি উদাহরণের সাহায্যে বোঝার চেষ্টা করি। 'চৌচালা' এই শব্দটির মধ্যে চৌ বা চার সংখ্যাটি রয়েছে। মানে চার চাল যার=চৌচালা। আরেকটু পরিষ্কার করার চেষ্টা করি।
আমার দাদার একটি চৌচালা ঘর ছিল।
বাক্যটিকে অবলম্বন করে কেউ যদি প্রশ্ন করেন, আপনার দাদার কেমন ঘর ছিল?
উত্তরে বলা যাবে চৌচালা ঘর। আর এটাতো আমরা সবাই জানি, কেমন শব্দ দ্বারা প্রশ্ন করলে উত্তরে যে পদ পাওয়া যায় তা বিশেষণ।
এবার আসি দ্বিগু সমাসে। আমরা জানি দ্বিগু মানে সংখ্যার ধারণা। পূর্বপদ এবং পরপদে মিলিত শব্দ যখন সমাসবদ্ধ পদ হিসেবে আসবে তখন যদি সমাসনিষ্পন্ন পদটি বিশেষ্য মানে কোনো নাম বোঝায় তখন তাকে বলতে পারি দ্বিগু সমাস।
যেমন শত অব্দের (বছরের) সমাহার=শতাব্দী। খেয়াল করুন, শতাব্দী শব্দটি দ্বারা কোন বিশেষণ পদ বোঝানো হচ্ছেনা, বোঝানো হচ্ছে একটা নামকে।
একটা উদাহরণসহযোগে বোঝার চেষ্টা করা যাক। 'একুশ শতাব্দীর অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো পরিবেশের কোনোরূপ ক্ষতি না করেই মানব জীবনের প্রাত্যহিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে সুখী ও সমৃদ্ধ পৃথিবী গড়ে তোলা।' বাক্যটিকে যদি আমরা 'কিসের দ্বারা' প্রশ্ন করি তবে উত্তরে শতাব্দীর শব্দটি আসবে।
আর আমরা তো সবাই জানি, কী বা কীসের দ্বারা প্রশ্ন করলে উত্তরে বিশেষ্য তথা নামপদ পাওয়া যায়।