জেনে নিন ফুলকপির পুষ্টিগুন ......।
দেখতে শুভ্র সাদা যেন একেবারে রূপকথার স্নো হোয়াইট।বলছি,পুষ্টিগুনে ভরপুর সবজি ফুলকপির কথা।
শীতকাল হল এই সবজিটি উৎপাদনের মূল সময়কাল।যদিও বর্তমানে ফুলকপি সারা বছর পাওয়া যায়।তবে,স্বাদের কথা বিবেচনা করলে শীতকালের ফুলকপি স্বাদে উৎকৃষ্ট।
আমাদের দেশে,ফুলকপি সাদা এবং হালকা হলুদ বা বাদামী বর্নের পাওয়া গেলেও, বাইরের দেশে সাদা,হলুদ বা পার্পল বর্ণেরও পাওয়া যায়।
ফুলকপিতে উচ পরিমাণে বিভিন্ন রকমের উপকারী পুষ্টি উপাদান যেমনঃফোলিক এসিড, ভিটামিন-সি,কে, কোলিন ছাড়াও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে।তবে,ক্যালরি খুব বেশি নেই।তাই,এটি একাধারে স্বাস্থ্যসম্মত এবং পুষ্টিকর।
ফুলকপিতে বিদ্যমান ‘সালফোরাফোন” রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করতে সহায়তা করে।পাশাপাশি, ক্যান্সারের স্টেমসেল গুলোকে ধ্বংস করার মাধ্যমে টিউমারের গ্রোথকে বাঁধা দেয়।
ফুলকপিতে থাকা “ইনডোল” প্রস্ট্রেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং আইসোথায়াসিনেট ব্রেস্ট,কোলন, ইউটেরাস এবং লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
ফুলকপিতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে যা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে এবং কার্ডিয়াক কমপ্লিকেশনস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
সুস্বাদু এই সবজিতে খুব ভাল পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেটের নানা সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
পাশাপাশি,যারা ওজন কমাতে চান তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবারের চাহিদা পূরনের জন্য খাদ্য তালিকায় এই সবজিটি রাখতে পারেন।
আমরা নানা কারণে বিভিন্ন সময় শরীরে বিভিন্ন রকম প্রদাহ,যন্ত্রনা বা ব্যথার সমস্যায় ভুগে থাকি যা দূর করতে নিয়মিত খাদ্য তালিকায় এই সবজিটি রাখা যেতে পারে।তবে,যদি গাউটের কারণে প্রদাহ হয় তবে ফুলকপি কিছুটা সাবধানে খেতে হবে।কারণ,ফুলকপি পিউরিন সমৃদ্ধ।সেক্ষেত্রে,ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
ফুলকপিতে যে ফাইটোকেমিক্যালস রয়েছে তা, টক্সিক উপাদান সমূহকে ভেঙ্গে কিডনি ড্যামেজ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।পাশাপাশি,গল ব্লাডারের সুরক্ষার জন্য এই ফাইটোকেমিক্যালস বেশ কার্যকর।
সুস্বাদু এই সবজিটিতে গুরুত্বপূর্ন বি ভিটামিন- কোলিন রয়েছে যা মস্তিস্কের বিকাশে সাহায্য করে।সুতরাং,গর্ভবতী মা এবং যারা আলঝেইমার রোগে ভুগছেন তাদের জন্য এটি খুব উপকারী।এছাড়া,গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল হেলথের জন্য কোলিন উপাদানটি ভীষণ উপকারী।
ফুলকপিতে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট “গ্লুটাথায়োন” দেহের ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ফলে,আমাদের দেহের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
যারা,স্কিন ভাল রাখতে চান তারা নিয়মিত ফুলকপি খেতে পারেন।ফুলকপিতে ভাল পরিমানে ভিটামিন-সি রয়েছে যা আমাদের দেহের কোলাজেন প্রোডাকশনে সাহায্য করে।যা,রিংকেল বা এজিং প্রসেস কে ধীর করে দেয়।এছাড়া,ফাইন লাইন দূর করা এবং ক্লিয়ার স্কিন পাবার জন্য ভিটামিন-সি।
সতর্কতাঃ
ফুলকপি পুষ্টিকর হলেও অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে না হলে গ্যাস্টিক হতে পারে। একজন মানুষকে সুস্থ থাকার জন্য সারাদিনে ৪০০-৪৫০ গ্রাম ফল এবং শাকসবজি খাওয়া উচিত।সুতরাং,ফল,শাক এবং সবজি এই তিনটি মিলিয়েই অন্তত ৪০০ গ্রাম খেতে হবে।
যাদের থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে তাদের উচিত ফুলকপি খাদ্য তালিকায় সীমিত পরিমাণে রাখা এবং খুব ভাল ভাবে সিদ্ধ করে খাওয়া।কারণ,ক্রুসিফেরাস গোত্রের শাক-সবজি আয়োডিন শোষণে বাধা দেয়।
লেখক:আছিয়া পারভীন আলী শম্পা
পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড।