অইমিয়কন: পৃথিবীর শীতলতম শহর
-----------------------------------------------
এই অল্প শীতে যদি আমাদের এই অবস্থা হয়,
তাহলে রাশিয়ার একটি দুর্গম শহর, যেটিকে দুনিয়ার সবচেয়ে শীতল শহর বললেও ভুল হবে না, সেই শহরের মানুষদের অবস্থা চিন্তা করুন। দুনিয়ার সবচেয়ে ঠাণ্ডা শহর হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া এই শহরের নাম হচ্ছে অইমিয়কন। যেখানে ফুটন্ত পানি শূন্যে ছুড়ে দিলে, নিচে পড়ার আগেই বরফ হয়ে যায় :(
স্থায়ীভাবে মানুষের বসবাস আছে এমন শহরের মাঝে এই শহরটিকেই সবচেয়ে ঠাণ্ডা জায়গা হিসেবে ধরা হয়ে থাকে, যেখানে জানুয়ারিতে গড় তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৫০ ডিগ্রি। ১২ মাসের মাঝে শীতই থাকে ৯ মাস! সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাসে। সে সময়ে দিন থাকে মাত্র ৩ ঘণ্টা। ১৯৯৩ সালে অইমিয়কনে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় মাইনাস ৬৭.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। শুধুমাত্র এন্টার্কটিকাতেই এর চেয়ে নিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড রয়েছে।
দুর্গম এই শহরের জীবনযাত্রা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে সেখানে যান নিউজিল্যান্ডের ফটোগ্রাফার আমোস চ্যাপেল। তিনি প্রায় ১০,০০০ মাইল ভ্রমণ করেছেন সাইবেরিয়ার একদম কোণায় অবস্থিত এই ছোট শহরটির ছবি তুলতে। এখানকার আবহাওয়া এতটাই খারাপ যে, এখানে প্লেন যেতে পারে না। গাড়িতে করে ৫৭৬ মাইল দূরে অবস্থিত পার্শ্ববর্তী শহর থেকে এখানে পৌঁছাতে সময় লাগে দুই দিন। চ্যাপেলের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে কিছু অসাধারণ আলোকচিত্র, যেগুলোতে ফুটে উঠেছে অইমিয়কনের ৫০০ বাসিন্দার দৈনন্দিন জীবনের হালচাল। আমোস চ্যাপেল তার নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, “মাঝেমাঝেই আমার থুথু জমে শক্ত হয়ে যেতো, আর আমার ঠোঁটে গুঁতো লাগতো। আমার ক্যামেরা চালানোই কষ্টসাধ্য ছিল”।
এই শহরে নেই কোনো হোটেল। কিন্তু এই শহরের লোকেরা খুব বন্ধুত্বপূর্ণ, কেউ এখানে বেড়াতে আসলে তাদেরকে নিজেদের ঘরেই থাকার জায়গা করে দেয় এখানকার বাসিন্দারা। তারা নিজেদের খাবারের জন্য পশু এবং মাছ শিকার করে। কেউ কেউ আবার কৃষক রয়েছে, তবে সেটি বছরে অল্প কিছু সময়ের জন্য। গরুগুলো শুধু গ্রীষ্মের সময়েই দুধ দেয় এবং সেটিকে হিমায়িত করে পুরো বছরের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। বেশি শীতের সময়ে সারাক্ষণই আগুন জ্বালিয়ে রাখতে হয়। এখানে নেই কোনো পানির ব্যবস্থা, কারণ পাইপে পানি বরফ হয়ে যায়। বরফ গলিয়েই খাওয়ার পানির ব্যবস্থা করে এখানকার বাসিন্দারা। এত বৈরি আবহাওয়ায় টিকে থাকতে পেরে এখানকার লোকেরা খুব গর্বিত। এই শহরে যারাই বেড়াতে যায়, তাদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয় প্রমাণস্বরুপ যে, তারা দুনিয়ার সবচেয়ে শীতল শহরের সাক্ষী হয়েছে।