বিজয় দিবসে ৩১_বার_তোপধ্বনি_দেওয়া_হয়_কেন?
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে সূর্যোদয়ের আগে ৩১ বার তোপধ্বনি দেওয়া হয়। তোপধ্বনি (Gun Salute) হলো সামরিক সম্মান। ৩১ বার তোপধ্বনি দেওয়া হয় মূলত জাতির সূর্য সন্তানদের প্রতি সামরিক সম্মান জানানোর জন্য। প্রশ্ন হলো, ৩১ বার কেন?
#এক) প্রচলিত মত অনুযায়ী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বাংলাদেশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৪:৩১ মিনিটে। ঐ মুহূর্তটিকে স্মরণ করার জন্য বিজয় দিবসে ৩১ বার তোপধ্বনি দেওয়া হয়।
#দুই) ল্যারি কলিন্স এবং দোমিনিক লাপিয়র তাঁদের ফ্রিডম এ্যাট মিডনাইট গ্রন্থে বলেছেন, রাজতন্ত্রের কাঠামোতে কোন রাজাকে কতখানি সম্মান দেওয়া হবে সেটা নির্ধারণ করার একটা আজব মাপকাঠি আবিস্কার করেছিল ব্রিটিশ ক্রাউন। মাপকাঠিটা হলো তোপধ্বনির সংখ্যা। রাজ্যের সমৃদ্ধি, রাজরক্তের কৌলিণ্য এবং ব্রিটিশরাজের প্রতি তাদের আনুগত্যবোধের ভিত্তিতে নির্ধারণ হতো তোপধ্বনির সংখ্যা। পাঁচটি প্রধান জায়গিরভোগি রাজা যেমন- হায়দ্রাবাদ, কাশ্মির, গোয়ালিয়র, মহিশুর এবং বারোদার বরাদ্ধ ছিল ২১ বার তোপধ্বনির সম্মান। ক্রমানুসারে কেউ পেতো ১৯, কেউ পেতো ১৭, কেউ পেতো ১৫, কেউ পেতো ৯ টি তোপধ্বনির সম্মান।
#তিন) যখন কোন যুদ্ধজাহাজ যুদ্ধের জন্য বন্দর ছেড়ে যেতো তখন স্থলভাগ ও জাহাজের ভেতর দুই স্থান মিলিয়ে মোট ২১ বার তোপধ্বনি দেওয়া হতো। পরবর্তীতে এই ২১ বারের তোপধ্বনির বিষয়টি একটি চুক্তির মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পায়। কিন্তু তৎকালীন ব্রিটিশ উপনিবেশিক দেশগুলো এই নিয়মে কিছুটা পরিবর্তন আনে। এসব দেশে যখন কোনও যুদ্ধজাহাজ বন্দর বা ঘাঁটি ছেড়ে বের হয়, তখন সেই জাহাজ থেকে ৭ বার তোপধ্বনি দেওয়া হয়। ঘাঁটিতে বা বন্দরে অর্থাৎ মাটিতে সৈনিকদের যে দল বা ব্যাটালিয়ন থাকে তারাও সেই তোপধ্বনির জবাবে ২১ বার তোপধ্বনি দিয়ে সম্মান জানায়। জাহাজ থেকে ৭ বার, মাটি থেকে ২১ বার মোট ২৮ বার তোপধ্বনি করার পর জাহাজ থেকে আরও ৩ বার তোপধ্বনি করা হয়। সেই অতিরিক্ত তিনটি তোপধ্বনির একটা দেওয়া হয় ব্রিটিশ রাজা বা রাণীর সম্মানে, অন্যটা জাহাজের ক্যাপ্টেনের জন্য এবং শেষটা হচ্ছে ব্রিটিশ বাহিনীর রাজকীয় প্রতিনিধির জন্য।